মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পবিত্র আখেরি চাহার শোম্বা

মো. আবু তালহা তারীফ

পবিত্র আখেরি চাহার শোম্বা

আজ পবিত্র সফর মাসের শেষ বুধবার, প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রোগমুক্তির দিন। এই দিনকে পবিত্র আখেরি চাহার শোম্বা বলা হয়। আখেরি শব্দের অর্থ শেষ, চাহ ফারসি ‘চাহর’ শব্দের অর্থ হলো-সফর মাস এবং ফারসি ‘শোম্বা’ শব্দের অর্থ হলো-বুধবার। সুতরাং ‘আখেরি চাহার শোম্বা’ অর্থ সফর মাসের শেষ বুধবার। ইসলামী বিশ্বকোষে উল্লেখ রয়েছে, আখেরি চাহার শোম্বা হলো সফর মাসের শেষ বুধবার।

আখেরি চাহার শোম্বা দিনটি নবী (সা.) প্রেমিকদের জন্য খুশি ও আনন্দের দিন। কেননা এই দিনে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থতা থেকে কিছুটা সুস্থতা অনুভব করেছিলেন। রসুল (সা.) এত বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, নামাজের ইমামতি পর্যন্ত করতে পারেননি। ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেন, রসুল (সা.) কিছুটা সুস্থতা লাভ করায় সফর মাসের শেষ বুধবার গোসল করেছিলেন।

সহিহ বুখারির বর্ণনায় একটি হাদিস উল্লেখ রয়েছে। হাদিসটি হলো, হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেছেন, রসুল (সা.) হজরত আব্বাস (রা.) ও অপর এক সাহাবির ওপর ভর করে একদিন ঘর থেকে বের হলেন। নবীজি (সা.) যখন আমার ঘরে প্রবেশ করেছিলেন, তখন তাঁর অসুস্থতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তখন তিনি বললেন, ‘তোমরা আমার ওপর বাঁধন খোলা হয়নি এমন সাত মশক পানি ঢাল, যেন আমি সুস্থ হয়ে লোকদের নির্দেশনা দিতে পারি। এরপর আমরা তাঁকে হজরত হাফসা (রা.)-এর একটি বড় গামলায় বসালাম। তারপর আমরা উক্ত মশক হতে তাঁর ওপর ততক্ষণ পর্যন্ত পানি ঢালতে লাগলাম যতক্ষণ না তিনি তাঁর হাত দ্বারা আমাদের ইশারা করে জানালেন যে, তোমরা তোমাদের কাজ সম্পন্ন করেছ। এরপর তিনি মসজিদে গিয়ে সাহাবিদের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন এবং তাদের খুতবা প্রদান করেন।’

রসুল (সা.)-এর অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার খবর সাহাবিদের মধ্যে পৌঁছে গেলে তারা খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন। খুশিতে জমিনে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। বিভিন্ন সিরাত গ্রন্থের মাধ্যমে জানা যায়, সাহাবিরা এক নজর দেখার জন্য রসুল (সা.)-এর দরবারে ছুটে আসেন। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপনসহ শুকরিয়া নামাজ আদায় করেন। উট, দুম্বা, দাস মুক্তিসহ সাধ্যানুযায়ী দান-সদকা করেন। রসুলুল্লাহর প্রিয় সাহাবি হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ৫ হাজার দিরহাম, হজরত ওমর (রা.) ৭ হাজার দিরহাম, হজরত ওসমান ১০ হাজার দিরহাম, হজরত আলী (রা.) ৩ হাজার দিরহাম এবং আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) ১০০ উট দান করেন।

আজ এই দিন নবী (সা.) প্রেমিকদের দিন। আজ তারা আখেরি চাহার শোম্বা উপলক্ষে মসজিদ, মাদরাসা ও দরবারে বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে দিবসটি পালন করবেন। আমাদেরও উচিত যথাযথ মর্যাদায় এই দিবসটি পালন করা। এই দিনে দান-সদকা, অতিরিক্ত নফল নামাজ, তওবা, দরুদ পাঠ ও জিকির ও মিলাদ মাহফিলের ব্যবস্থা করে দোয়া-মোনাজাতে দশ ও দেশের জন্য দোয়া করলে দোষণীয় হবে বলে মনে করি না। হ্যাঁ, অন্যের ক্ষতি কিংবা ধর্মীয় রীতিনীতির বাইরে এমন কিছু করা ঠিক হবে না। আসুন, আখেরি চাহার শোম্বার এই দিনে নিয়ত করি এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করব না, অন্যের ক্ষতি করা বা পাপ হোক এমন যে কোনো কর্ম থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করব। অন্ততপক্ষে দিনে একটি ভালো কাজ করার চেষ্টা করব। বিদায়াতমুক্ত সমাজ ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন গড়ব। আখেরি চাহার শোম্বায় সাহাবিরা যেভাবে নবীজির জন্য ভালোবাসা দেখিয়েছেন, আমাদের উচিত নিজেকে নবীজির জন্য সঁপে দেওয়া। সর্বদা নবীজিকে ভালোবাসা। ইমানদার তো ওই ব্যক্তি যে ধন-সম্পদ, পরিবার-পরিজনের এমনকি নিজের জীবনের চেয়ে রসুলুল্লাহ (সা.)-কে ভালোবাসে। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পরিপূর্ণ ইমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি ও সবার চেয়ে বেশি প্রিয় না হব’ (বুখারি)।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর