বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভয়াবহ সিসাদূষণ

জনসচেতনতা গড়ে তুলুন

সিসাদূষণ ঘাতক চেহারায় আবির্ভূত হচ্ছে বাংলাদেশে এবং কেড়ে নিচ্ছে বছরে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের প্রাণ। খালি চোখে বিভিন্ন পণ্যে সিসার উপস্থিতি দেখা যায় না। স্বাদ গন্ধেও তা ধরা পড়ে না। কিন্তু সিসার সংস্পর্শে শিশুর স্বাস্থ্য শিক্ষা ও বিকাশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিসাদূষণে পঁচিশোর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে হৃদরোগের প্রবণতা বাড়ছে। সব মিলিয়ে সিসাদূষণে প্রতি বছর আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ২৮ হাজার ৬৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের জিডিপির ৯ শতাংশ। মঙ্গলবার চিকিৎসা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সাময়িকী দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন ভয়ংকর তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বব্যাংকের গবেষক বিয়োর্ন লারসন ও আরনেস্তো সানচেজ ট্রিয়ানা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। গবেষণায় বাংলাদেশের শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের রক্তে প্রতি ডেসিলিটারে ৬.৮ মাইক্রোগ্রাম সিসা পাওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণায় বাংলাদেশের সিসাদূষণের ২০১৯ সালের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়। ওই বছর বাংলাদেশে সিসাদূষণে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের বুদ্ধিমত্তার সূচক ২ কোটি পয়েন্ট কমেছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার ৮৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের জিডিপির ৩.৬ শতাংশ। অন্যদিকে হৃদরোগে মৃত্যুর কারণে আর্থিক ক্ষতি ১৭ হাজার ৭৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা জিডিপির ৫.৮৬ শতাংশ। বাংলাদেশে প্রতি লাখে ৮৫ জন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে সিসাদূষণে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশ্লেষণ, মানুষের দেহের জন্য সিসা মহাক্ষতির কারণ ঘটায়। ভারী ধাতু হওয়ায় তা রক্তে প্রবেশ করলে মস্তিষ্কের নিউরন ও হৃদযন্ত্রের শিরা ব্লক করে দেয়। শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অথচ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পণ্যে রয়েছে সিসার উপস্থিতি। ময়দা-ডালসহ শস্যদানায় পাওয়া গেছে ১৭ শতাংশ সিসা। মসলায় মিলেছে ৭ শতাংশ। রঙের প্রলেপ দেওয়া শিল্পকর্মে ৫৪ শতাংশ, খেলনায় ১৩ শতাংশ এবং প্রসাধনীতেও বিপজ্জনক মাত্রায় এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সিসাদূষণ সম্পর্কে অসচেতনতা দেশের মানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। এ বিষয়ে সাবধানতার বিকল্প নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর