শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইলম অর্জনের দুটি পদ্ধতি

আল্লামা মাহ্মূদুল হাসান

ইলম অর্জনের দুটি পদ্ধতি রয়েছে। একটি হলো বিশেষ পদ্ধতি, আরেকটি সাধারণ পদ্ধতি। বিশেষ পদ্ধতি খুব কঠিন মনে হলেও মানুষের চেষ্টার সিরাতে মুস্তাকিমের সন্ধানে সামনে কঠিন বলতে কিছু নেই। চেষ্টা করলে শত কঠিন কাজও সহজ হয়ে যায়। সেটা হলো ধর্মীয় শিক্ষালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে ইলম অর্জনের পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে সেখানকার অভিবাসীদের উদ্দেশে বলেছিলাম, আপনারা মক্তব-মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করুন। আল্লাহপাক আপনাদের এ দেশে এনেছেন, এ দেশে আপনাদের আগমন বাহ্যত অর্থসম্পদ উপার্জনের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকলেও এটা তো দোষণীয় কিছু নয়। কারণ অর্থসম্পদ উপার্জন করা ফরজ। তবে পাশাপাশি একটা বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, মানুষকে দেশে-বিদেশে পাঠানোর পেছনে আল্লাহতায়ালার একটা বাতেনি উদ্দেশ্যও রয়েছে। একজন মুমিন এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়ার পেছনে তার ধর্মীয় অনুভূতিও কাজ করে। মুমিন ব্যক্তি ভাববে, আমি শুধু দুনিয়ার জন্যই আসিনি। দুনিয়াকে আমার আখেরাত বানাতে হবে। সুতরাং বাতেনি উদ্দেশ্য এটাই যে, ইসলামকে এ দেশেও কীভাবে প্রচার -প্রসার করা যায় তার ফিকির আপনারা করবেন। বাংলাদেশে বসে আমাদের হুকুমে এ দেশে ইসলামের কাজ হবে না, বরং যারা এ দেশে অবস্থান করছেন, তাদের সামান্য মেহনত ও পরিশ্রমের ফলে ইসলামের ব্যাপক প্রচার-প্রসার লাভ হতে পারে। সমগ্র পৃথিবী এখন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে আছে। আল্লাহই জানেন, এর কী উদ্দেশ্য! হতে পারে আল্লাহপাক স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে পারেন, যাতে সমগ্র পৃথিবীতে ইসলামের প্রভাব সৃষ্টি হয়। আর এটা খুবই সহজ যদি আমি-আপনি চিন্তা-ফিকির করে কিছু সময় এর পেছনে ব্যয় করতে পারি। হতে পারে যে, আল্লাহপাক আপনাদের এজন্যই এ দেশে এনেছেন।

২ নম্বর পদ্ধতি : ২ নম্বর হলো, সাধারণ পদ্ধতি। যথা বেশি বেশি দীনি মজলিসের ব্যবস্থা করা। আর এসব মজলিসে সাধারণ আলোচনার চেয়ে জরুরি জরুরি মাসলা-মাসায়েলের আলোচনা বেশি হওয়া চাই। এমন এমন জরুরি মাসলা, যেগুলো মানুষের দৈনন্দিন কাজে প্রয়োজন পড়ে। চাই তা ইবাদতের ক্ষেত্রে হোক, লেনদেনের ক্ষেত্রে হোক, আচার-ব্যবহারের ক্ষেত্রে হোক; এগুলো বেশি বেশি আলোচনা করা। এটা মসজিদে হোক বা বাসায় হোক, সপ্তাহে অন্তত একবার এরূপ আলোচনার মজলিস বসানো। আলোচনার পর শ্রোতাদের তাদের অজানা মাসলা-মাসায়েল জিজ্ঞেস করার সুযোগ দেওয়া দরকার। এভাবে জিজ্ঞেস করে যখন তারা মাসলা শিখবে, তখন তাদের মাঝে আমল করার একটা স্পৃহা সৃষ্টি হবে। আর সিরাতে মুস্তাকিমের সন্ধানে যারা পড়ালেখা জানে, তারা দীনি বইপুস্তক পড়েও মাসলা-মাসায়েল শিখতে পারে। বইপুস্তকের যে স্থানে মাসলা বুঝে না আসে, তা সরাসরি কোনো সহি যোগ্য আলেমের কাছে বুঝে নেবেন। মোটকথা, মাসলা-মাসায়েল শিক্ষা ছাড়া শরিয়তের ওপর চলা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।

আজকের আলোচনায় ১ নম্বর বিষয় হলো ইলম শিখতে হবে। ২ নম্বর বিষয় হলো শুধু ইলম শিখলেই হবে না, বরং সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। যেমন রাজমিস্ত্রি তার রাজমিস্ত্রির বিদ্যা শিখল, ডাক্তার তার ডাক্তারি বিদ্যা শিখল, ইঞ্জিনিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং শিখল, কিন্তু জীবনে কখনো তারা কেউ তাদের বিদ্যা কাজে লাগায়নি, তাহলে তাদের স্ব স্ব বিদ্যা একদিন নিঃশেষ হয়ে যেতে বাধ্য।

জরুরি বিষয় : আরেকটি জরুরি বিষয় হলো, যে মাসলাটুকু আপনি জানেন, সর্বপ্রথম আপনি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন, তা বিশ্বাস করেন কি না। যেমন আপনি জানেন, নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থসম্পদ থাকলে জাকাত দিতে হবে। এখন আপনাকে প্রথমে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। কারণ বিশ্বাস স্থাপন না করলে তা আপনি আদায় করতে পারবেন না। কেননা নিজের উপার্জনের একটি অংশ গরিব-মিসকিনকে দান করতে গেলে কলিজায় হাত পড়ে। আমাদের দেশের সরকার জাকাত ফান্ড তৈরি করেছে। অথচ আগে নামাজ ফান্ড তৈরি করা উচিত। কারণ নামাজের কথা আগে এসেছে। আল কোরআনে সিরিয়াল রয়েছে, আল্লাহতায়ালা সর্বপ্রথম তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে বলেছেন তারপরই বলেছেন নামাজ আদায় করতে। ৩ নম্বরে বলেছেন জাকাতের কথা। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)-কে আল্লাহর রসুল (সা.) ইয়েমেনে গভর্নর বানিয়ে পাঠানোর সময় বলে দিলেন, সে দেশের মানুষকে সর্বপ্রথম গিয়ে কলমা তাইয়েবা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ পড়ার দাওয়াত দেবে। এটা যদি তারা মেনে নেয়, তাহলে পরবর্তী পর্যায়ে তাদের বলবে, দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তোমাদের ওপর ফরজ করা হলো। এটা যদি তারা মেনে নেয়, তাহলে ৩ নম্বরে তাদের বলবে, তোমাদের ওপর জাকাত ফরজ করা হলো। জাকাত কেন ফরজ করা হলো? কারণ এ সম্পদ এমন আকর্ষণীয় বস্তু, যার সামনে কেউ টিকে থাকতে পারছে না। যে যত বেশি বিদ্বান হয়, তার যেন অর্থসম্পদের প্রতি তত বেশি লোভ জন্মে!

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ

সর্বশেষ খবর