শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নতুন প্রধান বিচারপতি ও শিশুদের সঙ্গে নিষ্ঠুরতা

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

নতুন প্রধান বিচারপতি ও শিশুদের সঙ্গে নিষ্ঠুরতা

প্রায় সাত দিন চিন্তা করে বসেছিলাম মাননীয় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে নিয়ে লিখব। কিন্তু হঠাৎই আমার বাড়ির পাশে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট পুড়ে হাজারো ব্যবসায়ী পথের ভিখারি হয়ে গেছে। ঘটনা দুর্ঘটনা যা-ই হোক, বাস্তব হলো বহু মানুষের স্বপ্ন আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে। দুনিয়া যখন আছে, তখন ঘটনা-দুর্ঘটনা কমবেশি থাকবেই। কিন্তু স্বার্থের কারণে অনেক সময় ঘটনা দুর্ঘটনা হয়ে থাকে। এ পর্যন্ত মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের আগুনের বিষয়ে যতজনের সঙ্গে কথা হয়েছে সবাই একে দুর্ঘটনা না বলে পরিকল্পিত ঘটনা বলার চেষ্টা করেছেন। আমারও অনেকটা তেমনই মনে হয়েছে। সেদিন গিয়েছিলাম দাড়িয়াপুর ইউনিয়নের জাইলার মাঠে। একটা আট বছরের বাচ্চাকে অপহরণ করে তিন-চারবার টেলিফোনে মুক্তিপণ চেয়েছে। তারপর খালের মধ্যে তার ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া গেছে। তাই ছুটে গিয়েছিলাম এলাকার পরিস্থিতি দেখতে। বলেছিলাম, আজ থেকে ২০ বছর আগে আমার মা যেদিন চলে যান সেদিন যে ব্যথা পেয়েছিলাম এই শিশু সামিয়ার আকস্মিক নির্মম হত্যায় তার চাইতে কম ব্যথা পাইনি। মায়ের মৃত্যু ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু আমার প্রেম আমার ভালোবাসা আমার অস্তিত্ব বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নির্মম অস্বাভাবিক মৃত্যু ছিল আমার জীবন তছনছ করা। গ্রামের হতদরিদ্র আট-নয় বছরের এই শিশুর মৃত্যুও তেমনি নির্মম, বেদনাদায়ক। জাইলার মাঠে স্কুলের ছাত্রছাত্রী, সহপাঠী, অভিভাবক এবং ব্যথিত জনসাধারণ সব মিলে অসম্ভব সমাগম হয়েছিল। তাদের উৎকণ্ঠা ছিল প্রায় মুক্তিযুদ্ধের মতো। যদিও ৫-৭ শতাংশের বেশি মুক্তিযুদ্ধকালের নারী-পুরুষ ছিল না। এখন বাচ্চাদের অপহরণ করা হয়, অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণ না পেলে অনেকেরই সামিয়ার মতো ভাগ্যবরণ করতে হয়। কিন্তু আমি যখন ছোট ছিলাম তখন কেউ হারিয়ে যাওয়া শিশু পেলে তার বাড়িঘর উতালা হয়ে উঠত, আশপাশের লোকেরা পাগল হয়ে যেত, সারা গ্রামে দেখা দিত অস্থিরতা, যতক্ষণ না হারিয়ে যাওয়া শিশুকে তার প্রিয়জনদের, আপনজন বা স্বজনের হাতে তুলে দেওয়া না যেত। দানবের নয়, মানবের দেশ বানাতে রক্ত ঢেলেছিলাম। সেই দেশে আজ শিশু নিরাপদ নয়, নারী নিরাপদ নয়, সাধারণ মানুষ নিরাপদ নয়। তবে কি আমরা ব্যর্থ? নাকি এই ঘোর অমানিশার গভীর অন্ধকারে আমরা বেঁচে থাকতেই আলোর রেখা দেখতে পাব? বিষয়টির সঠিক তদন্ত হোক, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের যথাযথ বিচার হোক- এটাই আমার কামনা। তবে প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রে যেমন কনকর্ড বিমানের গতিতে চলে আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারেই কচ্ছপ গতি। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। একটা মেয়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ আন্দোলনে যুক্ত ছিল। আমার এলাকার মেয়ে। আমি আমার মেয়ে কুশি-কুঁড়ির মতোই তাকে ¯ন্ডেœহ করি। অসাধারণ মেধাবী। আমি এরকম সব বিষয়ে জ্ঞানী মেয়ে খুব একটা দেখিনি। নাম তার ইলা আক্তার। বাড়ি বাসাইল উপজেলার নাইকানবাড়ি। বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। মা-ই তাকে মানুষ করেছে। ১৯৯৬-এর ঘূর্ণিঝড়ে মিরিকপুর স্কুল যখন ধূলিসাৎ হয়ে যায় সে সময় ছোট্ট শিশু হিসেবে সেখানে পড়ত। দুবার বিসিএস দিয়েছে। অসাধারণ মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও তার স্থান হয়নি। কী কারণে মেয়েটি এসেছিল খেয়াল নেই। এডিসি হারুনের বরখাস্তের কথা নিয়ে হঠাৎই বলল, ‘দাদা জানেন, একেই বলে আল্লাহর বিচার। ৩৫ আন্দোলনের সময় সে যে কী নিষ্ঠুর আচরণ করেছে, কোনো পশুও অমন করে না।’ কথাটা আমার খুবই লেগেছিল। বাচ্চাটা আমাকে দাদা বলে ডাকে। কিন্তু আমি তাকে মায়ের মতো দেখি, সন্তানের মতোই দেখি।

যা বলতে চাচ্ছিলাম, যা কয়েকদিন থেকে ভেবে রেখেছিলাম এখনো তা বলা হলো না। একেই বলে কপাল, একেই বলে আল্লাহর দয়া। ডা. আখলাকুল হোসাইন আহমেদের ছেলে ওবায়দুল হাসান শাহীন আমাদের বৃহত্তর ময়মনসিংহের গৌরব। আমি তার বেশকিছু লেখা পড়েছি। লেখা পড়ে ভালো লেগেছে। একসময় বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছিল ব্রিটিশ ভারতের সব থেকে বড় জেলা। আর সেই জেলায় একসঙ্গে ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের প্রিভি কাউন্সিলের সাত সদস্যের মধ্যে পাঁচজন। ইটনার আনন্দ মোহন বসু, মুক্তাগাছার স্নেহাংসু আচার্যের বাপদাদাদের কেউ, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের জমিদার দুই সহোদর স্যার আবদুল করিম গজনবী, স্যার আবদুল হালিম গজনবী ও ধনবাড়ীর কী এক নবাব। ধীরে ধীরে কেন যেন আমরা বানের জলের মতো কোথায় ভেসে যাচ্ছিলাম। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বিপ্লবী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ। তারপর আমাদের পাশের গ্রামের আবুল হাসান চৌধুরী কায়সারের বাবা বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী শাজাহান হয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। তার বাবা আবদুল হামিদ চৌধুরী ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান অ্যাসেম্বলির স্পিকার। এর পরও কিছু মানুষ এসেছেন। যেমন ভৈরবের মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের আবদুল হামিদ এরকম আরও অনেকে। কিন্তু এঁদের কারও কোনো ক্ষমতা ছিল না। একটা পিয়নের চাকরি অথবা তাদের অদলবদল করার ক্ষমতাও মহামান্যদের ছিল না বা নেই। এসবই আমাদের দুর্ভাগ্য। আখলাকুল হোসাইন আহমেদের ছেলে প্রধান বিচারপতি হয়েছেন এতে আমি ভীষণ খুশি। আমাদের একজন প্রবীণ নেতা অসাধারণ মানুষ বঙ্গবন্ধুর খুবই প্রিয় খাদ্যমন্ত্রী মোমিন ভাই মোহনগঞ্জের মানুষ। আমি তাঁর মৃত্যুতে তাঁর কবরে গিয়েছিলাম। তার কয়েক বছর আগে একটা উপনির্বাচন হয়েছিল। সেখানে মোমিন ভাই খুব একটা নির্বাচনী প্রচারে যাননি। নির্বাচনের এক বা দুই দিন আগে আমি তখন খুব সম্ভবত খালিয়াজুড়ি ছিলাম। মদন, মোহনগঞ্জ আর খালিয়াজুড়ি তিন উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন। হঠাৎই বিবিসি থেকে শুনলাম প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মোহনগঞ্জের আবদুল মোমিন শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বিবিসির খবর শুনেই ফোন করেছিলাম। তিনি তখন ধানমন্ডির এক-দেড় হাজার বর্গফুটের এক ফ্ল্যাটবাড়িতে থাকতেন। অথচ মোহনগঞ্জের তিনি জমিদার। রেললাইনের পাশে ৫-৭ একরের গাছে ঢাকা বাড়ি। ধানিজমি হবে কয়েক শ একর। সেই মানুষ ঢাকায় হাজার বারো শ বর্গফুটের ফ্ল্যাটবাড়িতে থাকেন। অনেকটা আমারই মতো। আমার মোহাম্মদপুরের ভাঙা বাড়িও ১৩০০-১৪০০ বর্গফুটের বেশি না। পুরো বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকি বলে কোনো অসুবিধা হয় না। আমি যখন প্রথম এসেছিলাম ১৯৭৩-৭৪-এর দিকে ছোট্ট ছোট্ট খোপ খোপ ঘরদুয়ার দেখে অনেকেই বলত নিশ্চয় কোনো সোনা চোরের বাড়ি। এখন যদিও ভাঙচুর করে সেই কবুতরের খোপ খোপ অবস্থাটা দূর করেছি। যদিও স্বাধীনতার পর ৫২-৫৩ বছর পর্যন্ত এ বাড়ির আমি বৈধ মালিক ছিলাম না। সংসদে অনেকবার আমাকে অবৈধ দখলদারের তকমা দেওয়া হয়েছে। যদিও এ বাড়িতে বঙ্গবন্ধু দুবার এসেছিলেন, জিয়াউর রহমান না হলেও ১০ বার এসেছেন, বোন হাসিনা দুই বা তিন বার এসেছেন। আমার মেয়ে কুঁড়িকে কোলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বোন হাসিনার একটা ছবি সেদিন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদকে পাঠিয়েছি। সেদিন হঠাৎই আমার সাদামাটা স্ত্রী নাসরীন সিদ্দিকী বলছিলেন, আচ্ছা দীপের আব্বু, তুমি নাকি এ বাড়িতে কিছুই করতে পারবে না। একটা ইটও বদল করতে পারবে না। তাহলে এ বাড়ি দেওয়া-নেওয়ায় কী আসে যায়? পত্রপত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া এসব নিয়েই চিৎকার-চেঁচামেচি করেছে। হাজার এক টাকায় সাফ কবালা দলিলমূলে বাড়িটি আমাকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোথাও লেখেনি মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য এটা দেওয়া হলো। যদিও যুদ্ধের সময় যারা আমার বোচকা টানত, একটা টেপ, একটা জামা, কিছু ওষুধ তখন আমার ঝোলায় থাকত। তারা কতজন গুলশান-বনানী-ধানমন্ডিতে ১-২ বিঘার প্লটে বাড়িঘর, অফিস-আদালত বানিয়েছে কোনো প্রশ্ন আসেনি। কিন্তু আমাকে নিয়ে সব সময় একটা নেগেটিভ আলোচনা লেগেই থাকে। এরও একটা কারণ আছে। পাকিস্তানপন্থিরা তো আমার বিরুদ্ধেই ছিল, সব সময়ই আছে। কিন্তু তথাকথিত মুজিবপ্রেমীরাও ল্যাং মারা নিয়ে বা ল্যাং মারতে গিয়ে বিরোধিতা করে চাটু মারে। অনেক সময় আমার বোন ওসব বুঝে উঠতে পারেন কি না জানি না। ’৭২ সালের মাঝামাঝি মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসিকতার জন্য টাঙ্গাইল-ক-৩ একটা ভাঙা টয়োটা জিপ এবং বাবর রোডের বাড়ি সরকারি সব স্বত্ব ত্যাগ করে আমাকে দেওয়া হয়েছিল। বাবর রোডের বাড়ির ’৭৩ সালের মাঠ পর্চায় এখনো আমার নাম আছে। কিন্তু ’৯০-এ দেশে ফেরার পর বাবর রোডের বাড়িসহ ৮৭টি বাড়ির কোনো কাগজপত্র নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বোন শেখ হাসিনা আমার ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩-এর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ চিঠি দিয়েছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে দলিল-দস্তাবেজ করে দিয়েছেন ৩০ জুলাই। আমি মনে করেছিলাম এক সপ্তাহ পরই হয়তো চিঠি নিয়ে আসবেন। কিন্তু তা হয়নি। কত প্যাকনা। কাদেরিয়া বাহিনী মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্যও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন সেও প্রায় ছয় মাস। তাঁর নির্দেশ এখন এসিল্যান্ড ও ইউএনওর টেবিলে দৌড়াদৌড়ি করছে। কিসের কিসের ছাড়পত্র অমুক তমুক নানা কিছুর প্রয়োজন। যাক সেসব কথা।  যেদিন বাবর রোডের বাড়ির দলিলে স্বাক্ষর করতে গিয়েছিলাম সেদিন দেখলাম অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার জহিরুল ইসলাম নেত্রকোনার রজব আলী তালুকদারের ছেলে। অন্যদিকে বিভাগীয় কমিশনার পাবনার আমিনুল ইসলাম বাদশার ছেলে। খুবই ভালোমানুষ ছিলেন তাঁরা। ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যার প্রতিকারে সীমান্তে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম। সে সময় রংরা, মহাদেও, বাঘমারা, পোড়া খাসিয়া, লেংগুরা রাতদিন চলাফেরা করেছি। মনে নেই বর্তমান মাননীয় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের বাবা ডা. আখলাকুল হোসাইন তখন এমপি ছিলেন কি না। কিন্তু তারা ভাই এমপি ছিলেন। রজব আলী তালুকদার, তারা ভাই এবং বর্তমান প্রধান বিচারপতির বাবা ডা. আখলাকুল হোসাইন আমার কাছে না হলেও ১০ বার গেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে তাঁদের ভূমিকা আমার চাইতে কোনো অংশে কম নয়। অথচ তাঁদের কখনো তেমন মূল্যায়ন করা হয়নি। নেত্রকোনার মোক্তারপাড়ার আনিস মোক্তার খুবই ভূমিকা রেখেছেন। যদিও পরে এমপি হয়েছিলেন। খুব সম্ভবত একসময় নেত্রকোনা পৌরসভার চেয়ারম্যান নজরুলের বাবা আমার সঙ্গে কাজ করেছিলেন। আরও অনেক নেতানেত্রী ছিলেন। বয়স হয়ে গেছে অনেক কিছুই ভুলে যাই। ’৬৯-এ নেত্রকোনার অজয় রায়ের সঙ্গে ময়মনসিংহ জেলে ছিলাম। আরও কে কে যেন নেত্রকোনার ছিলেন। হঠাৎই মনে পড়ল দুর্গাপুরের একসময়ের এমপি জালাল তালুকদারের দুটি পা বিএনপি আমলে বোমা মেরে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। সেই জালালকে গ্রেফতার করলে আমরা প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলাম। প্রেসিডিয়ামের সদস্য হিসেবে মোমিন ভাই ছিলেন। সেবার মনে হয় ১০ দিনের মতো নেত্রকোনার এমন কোনো উপজেলা ছিল না যেখানে যাইনি, সভা-সমাবেশ করিনি। একদিন দুর্গাপুর থেকে ফিরছি। সঙ্গে দু-তিনটি গাড়ি। মোমিন ভাইকে পেছনে বসিয়ে আমার সামনে বসতে ইচ্ছা করেনি। তাই গাড়ি চালাচ্ছিলাম। দুর্গাপুর থেকে শুরু করে বিরিশিরি, শ্যামগঞ্জ কত জায়গায় যে গাড়ি থামিয়ে লোকজন খুঁজেছে কাদের সিদ্দিকী কই? বাঘা সিদ্দিকীকে দেখব। ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা বড় সড়কে উঠলে মোমিন ভাই বলেছিলেন, ভাই কাদের, তুমি কী বুঝতেছ, এই যে আমরা ৪০-৫০ কিলোমিটার এলাম এখানে একবারও কেউ জিজ্ঞেস করল না মোহনগঞ্জের মোমিন সাব আছে? সবাই কাদের সিদ্দিকী, বাঘা সিদ্দিকীকে দেখতে চায়। এটা এখন অস্বীকার করলে চলবে? মোমিন ভাইয়ের কোষ্ঠকাঠিন্য ছিল বহুদিন। তাই তিনি নেত্রকোনা গেলে মোহনগঞ্জের বাড়ি ছাড়া বাইরে থাকতেন না। যেমন বড় ভাই সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর কোষ্ঠকাঠিন্য বহুদিনের।

আমাদের বৃহত্তর ময়মনসিংহের গর্ব এরকম একজন মানুষ প্রধান বিচারপতি হয়েছেন। তাঁর কাছে প্রত্যাশা অনেক। তিনি প্রথমেই আশাজাগানিয়া মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, ‘সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ক্যান্সারের আকার ধারণ করেছে।’ তিনি তাঁর কার্যকালে যদি একজন মানুষকেও সত্যিকারের ন্যায়বিচার দিয়ে যেতে পারেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার সমস্ত মন-প্রাণ অন্তরাত্মা তাঁকে দোয়া করবে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অনেকেই ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যার বিরুদ্ধে আমরা যারা সর্বস্ব ত্যাগ করেছি তারা আজও দুষ্কৃতকারী। বেশ কয়েকবার চিন্তা করেছি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করে দুষ্কৃতকারী হিসেবে বেঁচে থাকার চাইতে আমাদের জীবন বিসর্জন দেওয়া অনেক ভালো। সর্বোচ্চ আদালতে যাওয়ার কথাও চিন্তা করেছি। কিন্তু কোনোখানে বিচার নেই বলে পা বাড়াইনি। ভাবছি প্রতিকার না পেলে নতুন বছর আইনের আশ্রয় নেব। মহান মুক্তিযুদ্ধে আমার সঙ্গে প্রায় ১৮ হাজার সশস্ত্র যোদ্ধা ও ৭২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ছিল। অথচ সেই কাদেরিয়া বাহিনীর ১৮ হাজার মুক্তিযোদ্ধার অনেকেই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় তালিকাভুক্ত হয়নি। একসময় কাদেরিয়া বাহিনী বললেই জেল-জরিমানা-ফাঁসি। এখন সেরকম জোর-জুলুম না থাকলেও রংঢঙের শেষ নেই। মেজর ওয়াকার বীরপ্রতীকসহ দু-চার জন আছেন যারা মোটামুটি সম্মান করেন। আবার নতুন গজিয়ে ওঠা নেতারা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে অবদান রাখাদের সতিনের সন্তানের মতো আচরণ করেন। সে যাক, সময় এলে দেখা যাবে কত ধানে কত চাল।

বেশ কিছুদিন রাতদিন সেলফি সেলফি একটা জিকির উঠেছিল। রাজনীতিতে এরকম মানায় না। যারা জিকির তুলেছিলেন তারাও সেলফি ওঠান বা তোলেন। কিন্তু এমন জিকির তোলা হয় না। নিশ্চয়ই ভগনির কোথাও কোথাও ত্রুটিবিচ্যুতি আছে। এ দেশে অনেক মানুষ আছে যাদের তিনি যদি কাজে লাগাতেন সেলফি নয়, ৩ ঘণ্টার বৈঠকেও কোনো অসুবিধা হতো না। ঠিক আছে, এবার তো বৈঠক হবে, খাবারদাবার হবে তাহলে আর সেলফি নিয়ে পাগলামি কেন? খাবারদাবার নিয়ে আলোচনায় চলে আসুন, জ্বলজ্বলে উজ্বল সূর্যের মতো সত্যকে কাকের মতো ঠোঁট পুঁছে অস্বীকার করলেই সত্য মুছে যায় না। এটাই সত্য, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকন্যা বোন শেখ হাসিনার চাইতে বড় কোনো বাঙালি নেতা এখন নেই। অনেক বিশ্বনেতাও তাঁকে অভাবনীয় সম্মান দেখান। দিল্লিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক তাঁকে যে অভাবনীয় সম্মান দেখিয়েছেন সেটা শুধু শেখ হাসিনার নয়, সমগ্র বাঙালি জাতির, আমাদের সবার। আমাদের দেশে ছোট-বড়, আদবকায়দা না থাকলেও পৃথিবীর বহু দেশে ওসবের তেমন অভাব নেই- ঋষি সুনাক তার উজ্জ্বল প্রমাণ।

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর