মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ছাত্রদল নেতাদের পেটালেও কি বরখাস্ত হতে হতো

প্রভাষ আমিন

ছাত্রদল নেতাদের পেটালেও কি বরখাস্ত হতে হতো

অনেক বছর ধরে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তার নাম হারুন অর রশিদ। ২০১১ সালে মানিক মিয়া এভিনিউতে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সময় তখনকার বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে প্রকাশ্য রাজপথে বেধড়ক পিটিয়ে প্রথম আলোচনায় আসেন হারুন অর রশিদ। তবে সেই পিটুনির ঘটনায় তার শাস্তি বা ডিমোশন হয়নি। বরং একের পর এক প্রমোশন পেয়ে এখন তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে হারুন অর রশিদের সাফল্যও কম নয়। যখন যেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন, দৃঢ়তার ফলে প্রশংসিত হয়েছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত, ভিআইপি আসামিদের গ্রেফতার করে তিনি বরাবরই আলোচনায় ছিলেন। এখন তিনি সুশীলসমাজ, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক সবার ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছেন। তার আপ্যায়নেরও সুনাম আছে। হারুন অর রশিদের অফিসে গিয়ে কেউ খালি মুখে ফেরেন না। এ আপ্যায়নের কারণে আবার আলোচনায় এসেছেন হারুন অর রশিদ। সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে পুলিশ আহত অবস্থায় তুলে নেয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। পরে দেখা যায় ডিবি কার্যালয়ে হারুন অর রশিদ তাকে পাতে তুলে খাওয়াচ্ছেন। সে খাবার আনা হয় হোটেল সোনারগাঁও থেকে। আপ্যায়ন শেষে পুলিশের গাড়িতে গয়েশ্বর রায়কে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। পুলিশের এ বিরল আপ্যায়ন রাজনীতিতে দারুণ আলোচনারও জন্ম দেয়। বাস্তবের ‘ডিবি হারুন’-এর মতো ওটিটির ‘ওসি হারুন’ও দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। পরিচালক আশফাক নিপুণ দক্ষতায় সম্ভবত ‘ডিবি হারুন’ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই ‘ওসি হারুন’ চরিত্রটি নির্মাণ করেছেন। ওটিটি প্ল্যাটফরম হইচইয়ের জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ ‘মহানগর’-এর ওসি হারুনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মোশাররফ করিম। তবে হঠাৎ সব হারুনকে ছাপিয়ে আলোচনার শীর্ষে ‘এডিসি হারুন’। ঘটনার এ পর্ব নিছক নাটকীয় নয়, সিনেমাটিকও। এ গল্পে প্রেম আছে, পরকীয়া আছে, অ্যাকশন আছে, নায়ক আছে, নায়িকা আছে, ভিলেনও আছে।

সাময়িক বরখাস্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের এডিসি হারুন অর রশিদ আলোচনায় ছিলেন নানা কারণে। তার পেটানোর অভ্যাস বহু পুরনো। আর তার এ অভ্যাসের কারণে সরকারকে বারবার বিপাকে পড়তে হয়েছে। হারুনের বাড়াবাড়ি অনেক তিলকে তাল বানিয়েছে। ঢাকা কলেজে সংঘর্ষ, হাই কোর্টে সাংবাদিক-আইনজীবীদের ওপর হামলা, বিভিন্ন সময়ে শাহবাগে নিরীহ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা ঘটেছে এডিসি হারুনের অতি আক্রমণাত্মক মনোভাবের কারণে। ঢাকা কলেজে হামলার ঘটনায় রাবার বুলেট ফুরিয়ে যাওয়ার কথা বলায় এক কনস্টেবলকে থাপ্পড় মেরে ভাইরাল হয়েছিলেন এই হারুন। হারুনের এসব বাড়াবাড়ির কারণে সরকারকে ‘নিপীড়ক’ চরিত্রের অপবাদ নিতে হয়েছে। অথচ তার জায়গায় একজন দক্ষ ও বিবেচক পুলিশ কর্মকর্তা থাকলে এই প্রতিটি ঘটনা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা সম্ভব ছিল। কিন্তু প্রতিটি ঘটনাই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমালোচিত হয়েছে। তাতে কোনো রাজনৈতিক সুবিধা ছাড়াই সরকারকে বদনাম ঘাড়ে নিতে হয়েছে। একের পর এক অপকর্ম করেও পার পেয়ে গিয়েছিলেন এডিসি হারুন। কিন্তু আপনি যখন একবার কাউকে অপকর্ম করার ছাড়পত্র দিয়ে দেবেন, তখন তিনি বেপরোয়া হয়ে যাবেন। হারুনের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। রাষ্ট্রপতির এপিএস, ছাত্রলীগ নেতা সবাই তার সামনে সমান। মনের সুখে পেটানোর অবজেক্ট মাত্র। তবে আক্রমণটা নিজেদের ওপর আসার পরই টনক নড়েছে সবার। হারুন বরখাস্ত হওয়ার মতো অপরাধ আগেও করেছেন। তখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। সবাই বলছেন, ছাত্রলীগ নেতাদেরই যদি এভাবে পেটানো হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? আসলে একবার ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বানালে তার হাত থেকে কারওই রেহাই মেলে না।

একটা কথা বলা হয়, পৃথিবীর সব অপরাধের পেছনে নাকি ইংরেজি অক্ষর ‘এল’-এর দায়- ল্যান্ড, লেডি, লিডারশিপ। হারুনের বহুলকাক্সিক্ষত পতনের পেছনেও নাকি একজন লেডির হাত রয়েছে। একজন বিচারক ছিলেন। তার আদালতে কোনো মামলা গেলেই প্রথম প্রশ্ন করতেন, পেছনের নারীটি কে? একবার এক ডেকোরেটর মালিক সেই আদালতে গেলেন, তার এক কর্মচারী এক ঝুড়ি কাচের প্লেট ভেঙে ফেলেছে। যথারীতি বিচারক প্রশ্ন করলেন, পেছনের নারীটি কে? সবাই খুব অবাক, মাননীয় আদালত, কর্মচারী প্লেটের ঝুড়ি মাথায় নিয়ে যেখানে যাচ্ছিল, সেখানে কোনো নারী ছিল না। কিন্তু পরে সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা গেল, অনেক দূরের এক বাসার বারান্দায় এক নারী খোলা চুলে দাঁড়িয়ে ছিল। সেদিকে তাকিয়ে হাঁটতে গিয়ে কর্মচারী ঝুড়িসহ পড়ে গেলে সব প্লেট ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। এটি নিছক গল্প। নারীবাদীরা আশা করি মাইন্ড করবেন না। তবে হারুনের ঘটনার পেছনে সত্যি একজন নারী আছেন। পুলিশের আরেক এডিসি সানজিদা ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন বারডেম হাসপাতালে। তার ফোন পেয়ে সেখানে যান সানজিদার পুরনো বন্ধু এডিসি হারুন। নিজের অসুস্থতায় স্বামীকে না ডেকে ‘স্যার’কে কেন ডাকলেন, এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি। সানজিদার স্বামী রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুন এ দুজনের সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ করছিলেন আগেই। তাই স্ত্রীর গতিবিধির ওপর নজর রাখছিলেন। খবর পেয়ে তিনি ছুটে যান বারডেম হাসপাতালে। খবর দেন এলাকার দুই ছোট ভাই ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে। স্ত্রীর সঙ্গে হারুনকে অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে দেখে উত্তেজিত হয়ে যান আজিজুল হক মামুন। রাষ্ট্রপতির এপিএস মামুন ও এডিসি হারুন দুজনই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং পূর্বপরিচিত। দুজনের মধ্যে বাগবিতন্ডার একপর্যায়ে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম ও বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক শরীফ আহমেদ সেখানে হাজির হয়ে দুই সিনিয়রকে নিবৃত করার চেষ্টা করেন। তাতেই খেপে যান এডিসি হারুন। তিনি শাহবাগ থানায় খবর দিয়ে পুলিশ আনান। পুলিশ গিয়ে সেখানে প্রথমেই তাদের এক দফা পেটায়। পরে শাহবাগ থানায় নিয়ে আরেক দফা পেটানো হয়। ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে থানায় নেওয়ার খবরে ছুটে গিয়ে মার খেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান। এডিসি হারুন দলবল নিয়ে মনের আক্রোশ মিটিয়ে পিটিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতাদের। পিস্তলের বাঁট দিয়ে পিটিয়ে ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন নাঈমের অন্তত পাঁচটি দাঁত ভেঙে দিয়েছেন। ছাত্রলীগ নেতাদের পেটানো নিয়ে বেশি আলোচনা হলেও পুলিশের পিটুনি খেয়েছেন রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুনও। আমার ধারণা, আত্মসম্মানের স্বার্থে হয়তো বিষয়টি চেপে গেছেন তিনি। তবে পুলিশ ক্যাডার, প্রশাসন ক্যাডার ও ছাত্রলীগের মধ্যে এ অন্তর্দ্বন্দ্বে এখন তোলপাড় সর্বত্র। প্রশাসন ক্যাডারের লোকজন প্রকাশ্যে তাদের ক্ষোভের কথা জানাতে না পারলেও ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতা-কর্মীরা ফেসবুক সয়লাব করে ফেলেছেন প্রতিবাদী স্ট্যাটাসে। প্রতিবাদ শুধু ফেসবুকে নয়, এডিসি হারুনের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে রাজপথেও কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বাংলাদেশে যা হয়, শুরুতে এডিসি হারুনকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে এপিবিএনে বদলি করা হয়। তবে প্রতিবাদের তীব্রতা বাড়তে থাকায় শেষ পর্যন্ত হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু বরখাস্তের এক দিন পর তাকে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে। মনে হচ্ছে, এডিসি হারুনের ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।

পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে এবং তা নিয়ে হইচই হলে প্রথমে তাকে প্রত্যাহার বা বদলি করা হয়। পুলিশে এটাকে শাস্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু প্রত্যাহার বা বদলি কীভাবে শাস্তি হয়, আমার মাথায় ঢোকে না। আসলে এর মাধ্যমে অভিযুক্তকে তাৎক্ষণিক ক্ষোভ থেকে রক্ষা করা হয়। আর তদন্তের নামে ক্ষোভ প্রশমন বা আলোচনা থিতিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা হয়। তারপর আবার যথারীতি ঝাঁকের কই ঝাঁকে মিশে যায়। পুলিশ বারবার সীমা লঙ্ঘন করে। পুলিশের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি হয় না। অপরাধী পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার অনানুষ্ঠানিক যুক্তি হিসেবে বলা হয়, এতে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ এবং বাহিনীর ম্যুরাল ডাউন হবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটে উল্টো। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই বারবার পুলিশ অপরাধে জড়ায় এবং তাতেই পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়, ম্যুরাল আরও ডাউন হয়। পুলিশ সদস্যদের উচিত বাহিনীর স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, ভাবমূর্তির স্বার্থেই অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করা। পুলিশের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ থাকলেও আমি এখনো বিশ্বাস করি, দেশে ভালো পুলিশের সংখ্যাই বেশি। তাই ভালোদের উচিত নিজেদের স্বার্থেই খারাপদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।

বাংলা সিনেমার শেষ দৃশ্যে ভিলেনকে বাঁচাতে হাজির হয় পুলিশ। নায়কের উদ্দেশে বলে, আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারওই নেই; সিনেমার নায়ক, সাধারণ মানুষ, এমনকি পুলিশেরও। এর মধ্যে এ বাক্যটি সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য পুলিশের ক্ষেত্রেই। কারণ তাদের হাতেই আইন আছে, লাঠি আছে, বন্দুক আছে। তাই আইন প্রয়োগের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সজাগ থাকা উচিত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আইনের অপপ্রয়োগ সবচেয়ে বেশি হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতেই। ক্রসফায়ারের নামে ঠান্ডা মাথায় মানুষ খুন তো ফৌজদারি অপরাধ, পুলিশের কিন্তু কারও গায়ে হাত তোলারই কোনো অধিকার নেই। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা মামলা থাকলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারে। পুলিশের দায়িত্ব হলো, গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে উপস্থাপন করা। জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনে আদালতের অনুমতি নিয়ে তাকে রিমান্ডেও নেওয়া যায়। কিন্তু গ্রেফতারের আগে-পরে, রিমান্ডে কোথাও কারও গায়ে হাত তোলার কোনো অধিকার কারও নেই। কিন্তু বাংলাদেশে পেটাতে পেটাতে গ্রেফতার, থানায় নিয়ে মারধর, রিমান্ডে পিটিয়ে বাপের নাম ভুলিয়ে দেওয়ার ঘটনা যেন ডালভাত। খুন না করেও পুলিশ রিমান্ডে খুনের দায় স্বীকারের ঘটনা এ বাংলাদেশেই ঘটেছে। সাধারণ মানুষ যেটা করলে অপরাধ, সেটা তো পুলিশ করলেও অপরাধ। সাধারণ কেউ যদি ছাত্রলীগের তিন কেন্দ্রীয় নেতাকে এভাবে পেটাত, এতক্ষণে তাকে রিমান্ডে নিয়ে ধোলাই করা হতো। বছর দুয়েক আগে হলে হয়তো এতক্ষণে তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে চলে যেত পুলিশ। কিন্তু পুলিশ সদস্য বলেই হয়তো প্রত্যাহার, বদলি, বরখাস্ত, সংযুক্তিতেই থেমে আছে সবকিছু। তদন্তের নামে সময় ক্ষেপণ চলছে, ক্ষোভ প্রশমনের। পুলিশ এরই মধ্যে এডিসি হারুনকেই প্রথম আঘাত করা হয়েছিল বলে তাকে বাঁচানোর মিশনে নেমে গেছে। জানা যাচ্ছে, রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুনই প্রথমে হারুনকে থাপ্পড় মেরেছেন। অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে আজিজুল হক মামুনকেও আইনের আওতায় আনা হোক। প্রয়োজনে সানজিদার ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হোক। কিন্তু থাপ্পড় মারা আর গরুর মতো পিটিয়ে দাঁত ফেলে দেওয়া নিশ্চয়ই সমান অপরাধ নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘এডিসি হারুন যতটুকু অন্যায় করেছেন, ততটুকু সাজা পাবেন। পুলিশ হোক, আর যে-ই হোক, যে অন্যায় করে তার শাস্তি অবশ্যই হবে।’ এটা খুব ন্যায্য কথা। যতটুকু অপরাধ করেছেন, ততটুকু সাজা যেন নিশ্চিত করা হয়। কে আগে মেরেছে, কে পরে মেরেছে; এসব কথা বলে যেন কারও অপরাধ খাটো করা না হয়। ব্যক্তিগত শত্রুতা টেনে এনে এমন নিষ্ঠুরভাবে নিজের ক্ষমতা দেখানোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতেই হবে। নইলে এমন হারুনরা পুলিশ বাহিনী তো বটেই, সরকারকেও ডুবিয়ে ছাড়বেন।

একটা ছোট্ট কৌতূহল দিয়ে লেখাটি শেষ করি। পুলিশ যে এই প্রথম কাউকে মেরেছে, ব্যাপারটা এমন নয়। সাধারণভাবে বাংলাদেশে পুলিশের চরিত্র নিপীড়কের। গত ১৪ বছরে পুলিশ বিরোধী মতের কত হাজার মানুষকে মেরেছে, পিটিয়েছে; তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কিন্তু কারও বরখাস্ত তো দূরের কথা, প্রত্যাহার বা বদলিও খুব একটা হয়নি। বরং বিরোধী দলকে দমনের পুরস্কার হিসেবে প্রমোশন হয়েছে, পদক মিলেছে। কিন্তু হঠাৎ এই একটি ঘটনা নিয়ে এত তোলপাড় কেন? কারণ এবার আক্রমণটা এসেছে নিজেদের দিকে। ধরুন একই ঘটনায় আক্রান্তরা যদি ছাত্রলীগ না হয়ে ছাত্রদল হতো, তাহলেও কি এডিসি হারুনকে বরখাস্ত হতে হতো?

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক

সর্বশেষ খবর