শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া

মেজর অব. আখতার

নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া

হঠাৎ করে চোখ বুলাচ্ছিলাম মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত কুমার ডোভালের জীবনবৃত্তান্তের ওপর। জ্যাক সুলিভানের পুরো নাম জ্যাকব জারিমিয়া সুলিভান। যিনি ২৮ নভেম্বর ১৯৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পেশায় একজন আইনজীবী।  কিন্তু উনি বহুদিন ধরে আমেরিকা সরকারের ঊর্ধŸতন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কাজ করে আসছেন। তিনি একসময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের উপ-প্রধান সহকারী ছিলেন। পরে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রধান নিরাপত্তা উপদেষ্টার কাজ করেন। এরপর তিনি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নীতিবিষয়ক পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর জ্যাক সুলিভান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে ২০ জানুয়ারি ২০২১ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ৩০ মে ২০১৪ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অজিত ডোভালের জন্ম ২০ জানুয়ারি ১৯৪৫ সালে এবং যিনি ভারতের পুলিশ বিভাগের সর্বোচ্চ পদক কৃতিচক্র (কেসি পদক) এবং প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) প্রাপ্ত একজন অতীব দক্ষ পুলিশ ও চৌকশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা। ডোভাল ১৯৬৮ সালে কেরালা ক্যাডারে ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসে যোগদান করেন এবং তিনি একনাগাড়ে জানুয়ারি ২০০৫ সাল পর্যন্ত পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগে বিভিন্ন কাজ করেন। ২০০৫ সালে পরিচালক ইন্টেলিজেন্ট ব্যুরো থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৬৮ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৭ বছর পুলিশ ও গোয়েন্দাতে কর্মরতকালে সমগ্র ভারতের এমন কোনো সন্ত্রাসী দমন নেই যে দমনে অজিত ডোভাল নেতৃত্ব দেননি। নাগাল্যান্ড থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত এবং চীন সীমান্ত থেকে পাকিস্তান সীমান্তে সব সন্ত্রাস দমন কার্যক্রম ও সামরিক অভিযানে মূল পরিকল্পনাকারী হলেন এ বিশাল করিৎকর্মা অজিত ডোভাল। এককথায় বলা যায় একজন ক্ষণজন্মা কর্মবীর, যার কর্মজীবনে কোনো ব্যর্থতা নেই।

২০০৫ সালে পুলিশ বিভাগ থেকে অবসর গ্রহণের পর অজিত ডোভাল প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে বিবেকানন্দ আন্তর্জাতিক ফাউন্ডেশন নামে একটি পাবলিক পলিসি থিংকট্যাঙ্ক তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, কংগ্রেসের নাকের ডগায় বসে তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে আজকের ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ২৬ মে ২০১৫ সালে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। শুধু তাই নয়, বিবেকানন্দ আন্তর্জাতিক ফাউন্ডেশনের অনেক কর্মকর্তা পরবর্তীতে বিজেপি সরকারের অনেক পদে আসীন হন। এটা ভারতের সর্বজন স্বীকৃত যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উত্থানের পেছনে সর্বোচ্চ অবদান অজিত ডোভালের। তাই অজিত ডোভালের ক্ষমতা সহজেই অনুমেয়।

এখন দেখা যাক এ দুই পরাশক্তির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা কী করে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাতীয় নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কিত বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার অন্যতম দায়িত্ব হলো প্রেসিডেন্টকে বিস্তৃত জাতীয় নিরাপত্তা এবং বিদেশি নীতিসংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ প্রদান করা। তিনি প্রেসিডেন্টকে বিভিন্ন বিকল্পের প্রভাব বুঝতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও বিভাগজুড়ে জাতীয় নিরাপত্তা,  পররাষ্ট্রনীতির উন্নয়ন এবং বাস্তবায়নের সমন্বয় করে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সন্ত্রাসী হামলা বা আন্তর্জাতিক সংঘাতের মতো সংকটের সময়ে সরকারের প্রতিক্রিয়া সমন্বয় করতে এবং প্রেসিডেন্টকে বাস্তব সময়ের তথ্য ও সুপারিশ প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জাতীয় সংকট মোকাবিলা (ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট) করে। এ ছাড়াও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্ব করে যেখানে সরকারি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক আলোচনা ও সমন্বয়ের জন্য একত্রিত হয় যাতে বিভিন্ন বিভাগ জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে কার্যকরভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সব গোয়েন্দার ওপর তদারকি করেন এবং সব সংস্থা থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে প্রেসিডেন্টকে জ্ঞাত করেন, যাতে প্রেসিডেন্ট ত্বরিত সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। এ ছাড়াও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাতীয় নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্রনীতির কৌশল প্রণয়নের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ও সেক্রেটারি অব স্টেট এবং সেক্রেটারি অব ডিফেন্সের মতো অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বিদেশি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে বা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে মার্কিন স্বার্থকে এগিয়ে নিতে এবং কূটনীতির প্রচারে সহায়তা করতে আন্তর্জাতিক আলোচনায় অংশ নিতে পারে। জাতীয় সংকট মোকাবিলা বা ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের বাইরেও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সংকট প্রতিরোধ বা ক্রাইসিস প্রিভেনশনের লক্ষ্যে সম্ভাব্য হুমকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় কৌশলী সুপারিশ করে সংকট প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তবে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো প্রেসিডেন্টের পছন্দ ও কৌশল বাস্তবায়নের জন্য সব মহলের সঙ্গে কার্যকর সমন্বয় সাধন করা এবং তৎকার্য সম্পাদন নিশ্চিত করা।

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাও মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা উপদেষ্টার মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি-সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অভ্যন্তরীণ বৃত্তের একজন অতি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। প্রধানমন্ত্রীর প্রধান নিরাপত্তা উপদেষ্টাও মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জন্য একই দায়িত্ব পালন করেন। সংক্ষেপে বলা যায়, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্রনীতি-সংক্রান্ত সব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যত প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন।

দুই পরাশক্তির প্রধান নিরাপত্তা উপদেষ্টার কার্যাবলি এ জন্য এখানে আলোচনা করলাম যাতে আমরা বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আসন্ন নির্বাচন ও অত্র এলাকার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান অনুধাবন করতে পারি। ১৯৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করা একজন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কৌশলগত সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন ১৯৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করা একজন চৌকশ গোয়েন্দা ও অতি অভিজ্ঞ একজন সফল উপদেষ্টাকর্মবীরের বিপক্ষে। প্রথমজনের বয়স যেখানে মাত্র ৪৬ সেখানে প্রতিপক্ষের অত্যন্ত সফল দক্ষতা ও কৌশলগত অভিজ্ঞতাই হলো ৫৫ বছরের বেশি। কাজেই এ অসম কূটনৈতিকযুদ্ধে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কার তা বুঝতে যদি কারও অসুবিধা হয় তাহলে তিনি জেগে ঘুমাচ্ছেন, যা ডেকে ভাঙানো যাবে না।

ইউক্রেন একটি সুন্দর স্বাবলম্বী উন্নত দেশ ছিল। কিন্তু বিদেশিদের প্ররোচনায় বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ার সঙ্গে অসমযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে দেশটি তছনছ হয়ে গেছে। জানি না ইউক্রেনের পরিণতি কী আছে? তবে ইতোমধ্যে তাদের যে ক্ষতি হয়ে গেছে তা পুষিয়ে তুলতে অনেক অর্থ ও সময়ের প্রয়োজন পড়বে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালির কবজা থেকে লিবিয়াকে স্বাধীন করে কর্নেল গাদ্দাফি তার দেশকে একটি উন্নত দেশের সীমায় নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে গণতন্ত্রের ধুয়া তুলে গাদ্দাফিকে শুধু ক্ষমতাচ্যুতই করা হয়নি, তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে সারা লিবিয়াকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। অগণতান্ত্রিক আজকের লিবিয়ার যে স্বপ্ন সেই স্বপ্ন বর্তমান লিবিয়ার নেতৃত্ব আর কোনো দিন পূরণ করতে পারবে না। হয়তো গাদ্দাফির লিবিয়াতে গণতন্ত্র ছিল না, কিন্তু উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ছিল, শান্তি ও শৃঙ্খলা ছিল, সাধারণ জনগণ সুখে শান্তিতে ছিল। কিন্তু তথাকথিত গণতন্ত্রের নামে গাদ্দাফির কঠোর পরিশ্রমে গড়ে তোলা লিবিয়াকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে লিবিয়ার হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, একটি শহর প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে, লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন ও খাদ্যের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের পাশে কোনো উন্নত বিশ্ব বা পরাশক্তিকে তেমন দেখা যাচ্ছে না। গাদ্দাফির তথাকথিত অগণতান্ত্রিক লিবিয়াতে বাংলাদেশের হাজার হাজার কর্মজীবী কাজ করে জীবন-জীবিকা রক্ষা করত, অথচ আজকে তারা সবাই কর্মহীন। এ কর্মহারা একটি মানুষকেও কর্ম দেয়নি আমাদের পশ্চিমা বা উত্তর আটলান্টিক পাড়ের বন্ধুরা। তারপরও তাদের প্ররোচনায় আমরা লাফালাফি করি।

ইতিহাসের প্রাচীনতম রাষ্ট্র ইরাক যার রাজধানী বাগদাদ। শাসক সাদ্দামকে অগণতান্ত্রিক হিসেবে অভিহিত করে সেই ইরাক ও বাগদাদকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। ইরাকে গণতন্ত্র নেই বলে ২০০৩ সালে সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং ২০০৬ সালে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ২০ বছর হতে চলল কথিত অগণতান্ত্রিক সাদ্দামের পতন হয়েছে; কিন্তু আজও পশ্চিমাদের তথাকথিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। জানি না এ ব্যাপারে পরাশক্তিরা কী ভূমিকা নিচ্ছে। তারপরও আমাদের বোধোদয় হয় না। এ ইরাকে একসময় লাখ লাখ বাংলাদেশি কাজ করত। আজকে তাদের খোঁজ কেউ রাখে না।

গণতান্ত্রিক নয় বলে মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারককে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তারপর নির্বাচনে মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা মোহাম্মদ মুরসি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলেও তাকে ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া হয়নি এবং পরবর্তীতে তাকে দুর্নীতির দায়ে ফাঁসি দেওয়া হয়। কিন্তু মিসর আজও দুর্নীতিমুক্ত হয়নি, গণতন্ত্র কায়েম হয়নি এবং জনগণের শাসনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি, গণতন্ত্র তো অনেক দূরের কথা। উল্টো পশ্চিমাদের স্বার্থে মিসরে কঠোর সামরিক শাসন চলছে। আমরা অন্ধ তাই ওদিকে আমাদের চোখ যায় না।

ফিরে আসি বাংলাদেশের দিকে। এখানেও গণতন্ত্রের জন্য পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশ ও একটি পরাশক্তি ওপরে পড়ে অনেক দরদ দেখাচ্ছে। কিন্তু ১৯৮১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এরশাদের অগণতান্ত্রিক শাসন সম্পর্কে একটি কথাও বলেনি। তারা কেউই ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। এমনকি ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার ৪ ঘণ্টার মধ্যে সব পরাশক্তির রাষ্ট্রপ্রধান বর্তমান সরকারপ্রধানকে ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। আজকে বাংলাদেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক দল বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করে যাচ্ছে। অথচ সব বিদেশি রাষ্ট্র এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরবতা অবলম্বন করে আছে। এমনকি সরকারের পদত্যাগের পক্ষে বা বিপক্ষে আকার-ইঙ্গিতেও কোনো মনোভাব প্রকাশ করছে না। অন্যদিকে সরকারি দল, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন যে, সংবিধান মোতাবেক বর্তমান সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। অথচ এখন পর্যন্ত কোনো পশ্চিমা দেশ বা পরাশক্তি সরকারের বক্তব্যকে আমলে নিচ্ছে না বা সরকারের কাছে এ বক্তব্যের কোনো নিশ্চয়তা দাবি করছে না। ভাবেসাবে মনে হচ্ছে বিশ্বের কোনো কোনো রাষ্ট্রই বাংলাদেশে রাজনৈতিক গ-গোল সৃষ্টি হয়ে কী পরিমাণ উচ্ছৃঙ্খল ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম হতে পারে তা দেখার অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

বিএনপি তাদের রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। সরকারও পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে সংবিধান মোতাবেক যথাসময়ে নির্বাচন করবে। দুটি পক্ষেরই পরস্পর বিপরীতমুখী অবস্থান। তাই জনগণের মধ্যেও হতাশা ও দুশ্চিন্তা এবং চরম অশুভ আশঙ্কা। সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। সংঘাত অনিবার্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অথচ সংঘাত এড়ানোর জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না। বিএনপির বিশ্বাস তারা সরকারকে পদত্যাগ করাতে পারবে এবং সরকারের বিশ্বাস তারা যথাসময়ে নির্বাচন করতে পারবে। কার অবস্থান সঠিক তার জন্য জাতিকে অপেক্ষা করতে হবে। হয়তো এই অপেক্ষা এক বা দেড় মাস হতে পারে অথবা ইউক্রেনের মতো বছর পার হয়ে হতে পারে আবার ইরাক, লিবিয়া বা মিসরের মতো যুগ পার হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সময় যা-ই লাগোক না কেন চূড়ান্ত ক্ষতি হবে জনগণের-জনপদের।

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তার ৫৫ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে জানেন, বাংলাদেশে যে কোনো প্রকার উচ্ছৃঙ্খল, বিশৃঙ্খল, সন্ত্রাস বা ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম আঞ্চলিক পরিমন্ডলে মোড়লিপনা করার বাড়তি সুযোগ করে দেবে। ৪৫ বছর বয়সের তরুণ প্রধান নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের পক্ষেই নিজের অজান্তেই চাল খেলে যাবে এবং তার চালে বাংলাদেশের রাজনীতির কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে না। তবে হয়তো আরেকটি ইরাক, লিবিয়া বা মিসর হতে পারে! সবাই জানে বাংলাদেশের মানুষ শান্তি, সমৃদ্ধি, উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র চায়। তবে শান্তির স্বার্থে আত্মত্যাগে কোরবানি দিতে সব সময়ই জনগণ রাজি থাকে। গণতন্ত্র দিয়ে কী হবে যদি জনগণ শান্তিতে বাস না করতে পারে? বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবেই হোক ক্ষমতায় গিয়ে একনাগাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে প্রমাণ রেখেছেন-দেশের শ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী তিনিই। জনগণ এ-ও মনে করে আন্দোলন করে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করার দরকার নেই। দেশ যেভাবে চলছে সেভাবে চলুক। জনগণ সবার আগে শান্তি চায় এবং জনগণের বিশ্বাস এ শান্তি একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই দিতে পারেন।

পরিশেষে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে বলব, পরাজয় মেনে নেওয়াও মহত্ত্বের কাজ। ধ্বংসের মাধ্যমে বিলীন হয়ে যাওয়ার চেয়ে সময় থাকতে রণে ভঙ্গ দেওয়া অতীব বুদ্ধিমানের কাজ এবং উচ্চমানের রণকৌশল। আগামী দেড় মাসে পরিবর্তনের আশা করা চরম নির্বুদ্ধিতারই পরিচয় দেওয়া হবে। আজকের দিনের চরম বাস্তবতা হলো হাঁটাহাঁটি বা মিডিয়ার সামনে গরম গরম বক্তৃতা দিয়ে সরকার পতনের কল্পনা হয়তো কল্পনাই থেকে যেতে পারে। তবে অতীতের মতো দুর্ঘটনার আশা যারা করছেন তাদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছু করার মুরোদ নেই। তাই আমার বিনীত অনুরোধ থাকবে, বেণির আগুন হাতে লাগার আগে বা ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ সে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে আপনাদের চরম যৌক্তিক আন্দোলনকে সফলতায় নিয়ে যাওয়ার সক্ষমতার ঘাটতিকে দায়ী করে আপাতত আন্দোলন বন্ধ করে দিয়ে নিঃশর্তে নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। নির্বাচন করতে গিয়ে সামনের সব বাধা মোকাবিলা করার প্রত্যয় নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামতে পারলে ইতিবাচক ফলাফল তথা বিজয় আসতেও পারে। মুক্তি পেতে পারেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া।

                লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য

সর্বশেষ খবর