শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রিয়নবীর আগমন রবিউল আউয়ালে

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

প্রিয়নবীর আগমন রবিউল আউয়ালে

রবিউল আউয়াল হিজরি বর্ষের তৃতীয় মাসের নাম। যার অর্থ প্রথম বসন্ত। পৃথিবীতে যে কয়টি কাল বা ঋতু প্রবহমান, এর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম কাল বা ঋতু হলো বসন্তকাল। তাই তো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কবি বিভিন্ন ভাষায় এ ঋতু নিয়ে হাজারো কাব্য রচনা করেছেন। আমাদের দেশের ন্যায় আরব দেশেও দুই মাস বসন্তকাল। যার প্রথম মাসকে রবিউল আউয়াল (প্রথম বসন্ত), আর দ্বিতীয় মাসকে রবিউস সানি (দ্বিতীয় বসন্ত) বলা হয়। মহান আল্লাহতায়ালা তার প্রেমাস্পদ, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ধরা পৃষ্ঠে প্রেরণের জন্য এই মাসকেই বেছে নিয়েছেন। রসুলুল্লাহ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য আলোর প্রদীপস্বরূপ আগমন করলেন। আর বিশ্বময় ছড়িয়ে দিলেন স্রষ্টা কর্তৃক মনোনীত একমাত্র ধর্ম ইসলামের বিকিরণ। অন্ধকার যুগে প্রজ্বলিত করলেন নতুন আলোর মশাল। জুলুম, ব্যভিচার, পাপাচার ও সব ধরনের কুসংস্কার হটিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন সাম্য, ন্যায়বিচার ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা। যা আজও বিশ্ববাসীর জন্য রোল মডেল। দিশাহারা মানব জাতিকে দিয়েছেন সঠিক পথের দিশা। ভালোবাসা, দয়া, মমত্ববোধ ও উৎকৃষ্ট চরিত্র মাধুরী দিয়ে জয় করে নিয়েছেন সব সৃষ্টি জীবের হৃদয়। তাই তো প্রতিদিন প্রতিক্ষণেই বিশ্বের প্রতি প্রান্তে অজুত কণ্ঠে ধ্বনিত ও প্রতিধ্বনিত হয় তাঁর মহিমাগাথা। মহানবী (সা.) বিশ্বমানবতার প্রতীক এবং সত্য-সুন্দরের বাণীবাহক। তাঁর কারণেই আরব জাহানে নবজীবন সঞ্চারিত হয়, উন্মেষ ঘটে নতুন সংস্কৃতির, গোড়াপত্তন হয় নতুন সভ্যতা এবং উদ্ভব ঘটে একটি নতুন জীবনব্যবস্থার। তাঁর আদর্শ ও চারিত্রিক মাধুর্যের গুণে নানা গোত্রে বিভক্ত, কলহ-বিবাদপ্রিয়, সামাজিক ও নৈতিকভাবে অধঃপতিত, বর্বর আরব জাতি পরিণত হয় একটি সুমহান জাতিতে।

মহান আল্লাহতায়ালা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর উৎকৃষ্ট চরিত্রের প্রশংসা করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা কলাম, আয়াত-৪)। প্রেম-ভালোবাসা, মায়া-মমতা, ভক্তি-শ্রদ্ধা আছে বলেই টিকে আছে এ নশ্বর পৃথিবী। মুসলমান হিসেবে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ভালোবাসতে হবে হৃদয়ের গভীর থেকে। যার অন্তরে রসুল প্রেম নেই সে মুমিন নয়। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেন- “তোমাদের মধ্যে কেউ মুমিন হতে পারবে না, যে পর্যন্ত সে আমাকে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুতি ও সব লোক অপেক্ষা অধিক মুহাব্বত না করে।’ (বুখারি, মুসলিম)। ভালোবাসা লাভের জন্য একজন মানুষের যে সব গুণাবলি থাকা প্রয়োজন, তার সবই ছিল রসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাঝে বিদ্যমান।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তির মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে, সে ইমানের মিষ্টতা অনুভব করতে পারবে।’ যথা : যে ব্যক্তির কাছে আল্লাহতায়ালা ও তার রসুল সর্বাধিক প্রিয় হয়। যে ব্যক্তি একান্তভাবে আল্লাহর জন্য কোনো মানুষকে ভালোবাসে। যাকে আল্লাহতায়ালা কুফুর থেকে ফিরিয়ে নিলেন। অতঃপর সে কুফুরে ফিরে আসাকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো মনে করে। (বুখারি, মুসলিম)

উপরোক্ত হাদিস দুটি নবীপ্রেম সম্পর্কে পরিষ্কার ইঙ্গিত বহন করে। সুতরাং যে ইমানদার হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে, তাকে অবশ্যই নবী প্রেমে সিক্ত হতে হবে। সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন নবীপ্রেমের সর্বোচ্চ উদাহরণ। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভালোবাসায় তারা যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে সর্বদা প্রস্তুত ছিলেন। এমনকি নিজের অস্তিত্ব বিলিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করতেন না।

লেখক :  খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ, কাজলা (ভাঙ্গাপ্রেস), যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

সর্বশেষ খবর