শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হিংসা মানুষকে ধ্বংস করে

মো. আমিনুল ইসলাম

হিংসা মানুষকে ধ্বংস করে

প্রতিটি মানুষের সবচেয়ে মারাত্মক ও ক্ষতিকারক দিক হলো হিংসা আর অহংকার। হিংসা মানুষের জীবনকে করে তোলে বিষময়। হিংসার অনলে জ্বলে-পুড়ে সে নিজেকে ছারখার করে। মানুষ তার জীবনকে করে তুলে দুর্বিষহ ও বিষময়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ, তোমরা যারা ইমান এনেছ তোমাদের কোনো পুরুষ সম্প্রদায় যেন অপর পুরুষ সম্প্রদায়কে নিয়ে কোনো উপহাস না করে, কেননা এমনও তো হতে পারে যাদের আজ উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারীদের চাইতে উত্তম। আবার নারীরাও যেন অন্য নারীদের উপহাস না করে। কারণ যাদের উপহাস করা হয় হতে পারে তারা উপহাসকারিণীদের চাইতে অনেক ভালো। একজন আরেকজনকে অযথা দোষারোপ করবে না, আবার একজন আরেকজনকে খারাপ নাম ধরেও ডাকবে না, কারণ ইমান আনার পর কাউকে খারাপ নামে ডাকা একটা বড় ধরনের অপরাধ, যারা এ আচরণ থেকে ফিরে না আসবে তারা জালেম’ (সুরা হুজুরাত-১১)। এর চেয়ে স্পষ্ট করে আর কী বলা যায়? একজন মুমিন বান্দা বা বান্দি আরেকজন মুমিনকে মন্দ নামে ডাকাটাও আল্লাহর দৃষ্টিতে জঘন্য কাজ এবং অপরাধ। সুতরাং একজন অপরাধী কখনো জান্নাতি বান্দা হতে পারে না।

মানুষ কেন একজন আরেকজনকে হিংসা করে? এর কারণ মানুষ নিজেকে বড় ভাবা, পরশ্রীকাতরতা, দাম্ভিকতা প্রকাশ করা, শত্রুতা, সমাজে নেতৃত্ব হাসিল করা, নিজেকে অপরের চেয়ে যোগ্য ভাবা এসব কারণে একে অপরে হিংসা করে। যা একটি সামাজিক ব্যাধি। হিংসুক ব্যক্তি মনে করে সেই সমাজে সম্মানিত ও দামি ব্যক্তি। আর সবাই তার চেয়ে কম দামি ও নগণ্য। সুরা ফালাকের পাঁচ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি আশ্রয় চাই হিংসাকারীর অনিষ্ট থেকেও, যখন সে হিংসা করে।’

রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাক, কেননা হিংসা নেক আমলকে ধ্বংস করে দেয়, যেমন আগুন কাঠের টুকরাকে খেয়ে ফেলে (জ্বালিয়ে দেয়)’ (আবু দাউদ, মিশকাত)। সমাজে, পরিবারে কেউ হিংসুটেকে পছন্দ করে না। সবাই তাকে খারাপভাবে দেখে। সমাজে হিংসুটে ব্যক্তি বসবাস করলেও কেউ তাকে ভালো জানে না। তার সঙ্গে দূরত্ব মেনে সবাই চলে। হিংসুকের প্রতি সদাচরণ করার কথা আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন। ‘হে নবী, ভালো আর মন্দ কখনোই সমান হতে পারে না, তুমি ভালো কাজ দ্বারা মন্দ কাজ প্রতিহত কর, তাহলেই তুমি দেখতে পাবে তোমার এবং যার সঙ্গে তোমার শত্রুতা ছিল তার মাঝে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়ে যাবে, যেন সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু’ (সুরা হা-মিম আস সাজদা-৩৪)। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের সিয়াম, সাদাকা ও সালাতের চেয়েও উত্তম কোনো বিষয়ের খবর দেব? আর তা হলো পারস্পরিক বিবাদ মিটিয়ে দেওয়া। কেননা পরস্পরের বিবাদ দীনকে মু-নকারী।’ আল্লাহ রব্বুল আলামিন হিংসুককে দুনিয়া ও আখেরাতে শাস্তি দেবেন। রসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় হিংসুক আবুজাহেল শাস্তি পেয়েছে। তার মৃত্যুর পর মুসয়লামা কাযযাব (যে নিজেকে শেষ নবী দাবি করেছিল) আবু বকর (রা.) জমানায় ইয়ামামার যুদ্ধে নিহত হয়েছিল। আল্লাহ বলেন, ‘জাহান্নামের বড় আজাবের আগে আমি অবশ্যই তাদের (দুনিয়ায়) ছোটখাটো আজাবও আস্বাদন করাব, আশা করা যায়, তারা আমার দিকে ফিরে আসবে’ (সুরা আস সাজদা-২১)। রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা কারও প্রতি খারাপ ধারণা করা থেকে বিরত থাক। কেননা কারও প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা সবচেয়ে বড় মিথ্যা ব্যাপার। তোমরা অন্যের দোষ অন্বেষণ কর না, গোয়েন্দাগিরি কর না, পরস্পর হিংসা কর না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ কর না এবং পরস্পর বিরোধে লিপ্ত হইও না। বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে থেক’ (বুখারি)। হিংসা এমন এক ব্যাধি, যা শুধু মনেরই নয়, দেহেরও ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। বলা হয়ে থাকে হিংসুক ব্যক্তির কোনো বিশ্রাম নেই, সে বন্ধুর লেবাসে একজন শত্রু। হিংসুক ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বদিন পর্যন্ত হিংসা করা থেকে বিরত থাকে না। সে অন্যের সৌভাগ্যে, উন্নতি ও সাফল্য দেখে হিংসায় জ্বলে-পুড়ে শেষ হতে থাকে। সে জন্য হিংসুটেদের এড়িয়ে চলুন। তাদের থেকে দূরে থাকুন। হিংসুটেরদের থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করুন।

                লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর