সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিপন্ন নদনদী

অস্তিত্ব রক্ষায় যত্নবান হতে হবে

বাংলাদেশকে বলা হয় নদনদীর দেশ। নদনদীর মিঠা পানি দেশের প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ। কিন্তু এ সম্পদ সুরক্ষায় আমাদের ব্যর্থতা জাতীয় লজ্জা বলে অভিহিত করলেও অত্যুক্তি হবে না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, দেশে নদনদীর সংখ্যা কত এ সম্পর্কিত কোনো সঠিক বা পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেশের কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। স্বাধীনতার পর গত ৫২ বছরে বিপুলসংখ্যক নদী অস্তিত্ব হারিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে দেশের ৪০৫টি নদীর তথ্য রয়েছে। গত মাসে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ৯০৭টি নদীর খসড়া তালিকা প্রকাশ করে। বিসিএস ও অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার বইয়ের কোথাও ৭০০টি, কোথাও ২৩০টি নদীর কথা বলা আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর ‘বাংলাদেশের নদনদী’ বইয়ে আছে ১ হাজার ২১৬টি নদীর তথ্য। আবার বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান দাবি করছে, দেশে নদীর সংখ্যা ১ হাজার ৬০০-এর বেশি। একদিকে নদীর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি, অন্যদিকে দখল-দূষণে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী। এই বাস্তবতা সামনে নিয়ে গত রবিবার দেশব্যাপী বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে বিশ্ব নদী দিবস। এদিকে গত আগস্টে নদী কমিশনের তালিকা প্রকাশের পরই বিভিন্ন দিক থেকে আপত্তি আসতে শুরু করে। ওই খসড়া তালিকায় রংপুর বিভাগের শতাধিক নদনদী বাদ পড়েছে বলে দাবি করেছে নদীবিষয়ক সংগঠন ‘রিভারাইন পিপল’। তাদের দাবি, এসব নদী তালিকাভুক্ত না হলে এই অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতির সঙ্গে নদীকেন্দ্রিক ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জানতে পারবে না আগামী প্রজন্ম। দেশের প্রধান সম্পদ মিঠা পানির উৎস নদনদীর সঠিক তালিকা কোনো দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কাছে না থাকা নদীর প্রতি আমাদের কৃতঘ্ন মনোভাবের পরিচয় দেয়। এই কৃতঘ্ন মনোভাব তথা নদনদীর বিষয়ে নাগরিক সচেতনতার অভাবে নদীখেকো অশুভ শক্তির কালোছায়া গ্রাস করছে একের পর এক নদী। দখলে-দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে বিপুলসংখ্যক প্রাকৃতিক জলাশয়। জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিপন্ন হচ্ছে ভয়াবহভাবে। মরুকরণের হুমকিও সৃষ্টি হচ্ছে। যা রোধে নদনদীর অস্তিত্ব রক্ষায় যত্নবান হতে হবে। নদনদীকে ভাবতে হবে অস্তিত্বের অনুষঙ্গ হিসেবে।

সর্বশেষ খবর