বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

গৃহহীনদের আশ্রয়ণে শেখ হাসিনা মডেল

অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা

গৃহহীনদের আশ্রয়ণে শেখ হাসিনা মডেল

গৃহহীন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্প অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের একটি নতুন মডেল। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মডেলের উদ্ভাবক। সামাজিক নিরাপত্তা ও আশ্রয়ণের বিষয়টিকে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে ব্যাখ্যা করেছেন। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ, এই দেশে আছে নানাবিধ সমস্যা,  যার মধ্যে দরিদ্রতা সবচেয়ে বড় সমস্যা। দরিদ্রতার মতো বৃহৎ একটি সমস্যাকে চিহ্নিতকরণ এবং সেখান থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নিয়ে যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন সেটি অত্যন্ত সুচিন্তিত একটি পরিকল্পনা। অর্থনীতির ভাষায় বলা যায় মাইক্রোলেভেল থেকে উনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ শুরু করেছেন। আমরা প্রায়শই তাত্ত্বিক কথা বলি, বিভিন্ন প্যারাডাইমের কথা বলি। প্রধানমন্ত্রী নানা ধরনের থিওরিটিক্যাল বিশ্লেষণের কাঠামো ভেঙে বাস্তবিক ও ক্রিয়াশীল ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ সামাজিক আশ্রয়ণের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সুরক্ষা বলয় তৈরির বিষয়টিকে তত্ত্ব থেকে বের করে এনে বাস্তবায়নের পথে নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে একজন রাষ্ট্রনায়কের জন্য পরিকল্পনাগুলোকে বাস্তবায়নের পথে নিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ। একটি দেশের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নানা ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সব সময়ে একটি সরকারের উন্নয়নমুখী প্রকল্প ও পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় প্রায় ১৫ বছর ধরে। স্বাভাবিকভাবে নানা ধরনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তাকে এ ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়েছে। বস্তুত আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে সামাজিক সুরক্ষা সম্পর্কিত এক ধরনের প্রতিশ্রুতি বা কমিটমেন্ট ছিল কিন্তু সেগুলো আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না এ ধরনের প্রশ্নও নানা মহল থেকে উঠেছিল এবং ওঠাটা খুব অস্বাভাবিক নয়। কারণ এ ধরনের একটি প্রস্তাবনাকে বাস্তবায়িত করা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিশ্বে একজন সুচিন্তক রাষ্ট্রনায়ক, মানবতাবাদী রাজনীতিবিদ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যাপিত জীবনে পরিবর্তনশীলতা আনয়নের ক্ষেত্রে উদ্ভাবনীময় এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞ একজন এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি নিজেই বারবার বলেছেন পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে উনার হাতে কোনো ম্যাজিক নেই, কোনো জাদুকরি অস্ত্র নেই। যদিও রাজনীতিতে কোনো ম্যাজিক নেই কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে শেখ হাসিনা নিজেই এক জাদুর নাম, যিনি সততা, নিষ্ঠা, পরিশ্রম, অসম্ভব বিচক্ষণতা ও অকৃত্রিম ভালোবাসা দিয়ে তার জাদুর চেরাগটি নির্মাণ করেছেন। তার এই আশ্চর্য জাদুময় প্রদীপের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, দেশপ্রেম, ভালোবাসা ও উন্নয়নের দিকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, তথ্য প্রযুক্তিতে বিপ্লবসহ নানামুখী উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি  দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন। মূলত সোশ্যাল ক্যাপিটাল, হিউম্যান ক্যাপিটাল এবং কালচারাল ক্যাপিটাল এসব উপাদানের ভিতরে একটি মিথস্ক্রিয়ার সন্নিবেশ করবার বিষয়ে তিনি ভীষণরকম আত্মপ্রত্যয়ী। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে ৩০ লাখ শহীদের স্বপ্ন, ২ থেকে ৬ লাখ নির্যাতিত মা-বোনের স্বপ্নকে সামনে রেখেই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। এরই ফলশ্রুতিতে হতদরিদ্র, ছিন্নমূল গোষ্ঠী, তৃণমূল গোষ্ঠী, প্রান্তিক গোষ্ঠী, বয়স্ক ব্যক্তি, বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী, তথা সব অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করার জন্য তিনি বারবার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বস্তুত আমরা যখন গৃহ শব্দটি ব্যবহার করি এটা অনেক কিছুকে নির্দেশ করে। গৃহ হচ্ছে একটি স্থিতিশীলতা, গৃহ হচ্ছে একটি নিশ্চয়তা, গৃহ হচ্ছে একটি উপার্জনের জায়গা যে জায়গা থেকে আপনি আপনার পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন এবং এই গৃহায়ণ প্রকল্পের ভিতর দিয়েই অন্যান্য যে প্রকল্পগুলো আছে অর্থাৎ শিক্ষা, জীবিকা, জলবায়ু, পরিবেশ, এসব বিষয়গুলোকেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। যে মানুষের ভিতরে পটেনশিয়ালিটি বা সৃজনশীলতা, ক্রিয়েটিভিটি আছে সে মানব গোষ্ঠীকে এখন মানব শক্তিতে তথা হিউম্যান ক্যাপিটালে পরিণত করা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের দেশ এক বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশ। এই একটি প্রকল্পের ভিতর দিয়ে অনেকগুলো চেতনা বা অনেকগুলো আকাক্সক্ষা ও স্বপ্নের বাস্তবায়নের দ্বার খুলে গিয়েছে। প্রথমত বলা প্রয়োজন, সাসটেনাবল ডেভেলপমেন্ট বা টেকসই উন্নয়নের কথা। মূলত উন্নয়নের ধারণা এবং এর গতিধারা আমরা সেই পঞ্চাশ, ষাট দশক থেকেই দেখছি। কিন্তু অনেক উন্নয়ন কর্মসূচি এবং প্রকল্পসমূহ টেকসই হয়নি কখনো রাজনৈতিক, কখনো জলবায়ু বা পরিবেশগত সমস্যার কারণে অথবা অর্থনৈতিক জটিলতা বা অদক্ষতার কারণে। গ্রামীণ অর্থনীতি ও কৃষিনির্ভর মানুষের জন্য নানা ধরনের আধুনিক প্রকল্প এসেছে, প্যাকেজ এসেছে, কৃষিতে বিপ্লবের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর বেশ কিছু কোনো না কোনোভাবে ব্যর্থ হয়েছে সামরিক শাসন, দুর্বল আমলাতন্ত্র, রাজনৈতিক সংকীর্ণতা ও দাম্ভিকতা এবং বিশেষায়িত জ্ঞানের অভাবে। তৃতীয় বিশ্ব বা পিছিয়ে পড়া দেশগুলোতে উন্নয়ন টেকসই হচ্ছিল না বলেই আমরা আজ টেকসই উন্নয়ন শব্দ দুটো ব্যবহার করছি। এই টেকসই উন্নয়নের মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রান্তিক মানুষের অন্তর্ভুক্তিকরণ যে কারণে এখন আমরা ‘ইনক্লুসিভ’ শব্দটি ব্যবহার করছি। যদিও আধুনিকায়ন তত্ত্ব মতে কৃষিতে রেভুলেশন বা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসার কথা ছিল সেই ষাট/সত্তর দশকেই, বাস্তবে সে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসেনি। বরং কৃষিতে নানামুখী আধুনিকায়ন প্রকল্প গ্রহণের ফলে অনেক ধনী পরিবার, গৃহস্থ পরিবার, ধনী মহাজনেরাই হয়েছে আরও বিত্তশালী, সমৃদ্ধ এবং প্রান্তিক কৃষক হয়েছে আরও দরিদ্র। তাই আজ যে টেকসই উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে তার সুস্পষ্ট লক্ষ্য একেবারে ছিন্নমূল মানুষকে আশ্রয় দেওয়া, খাদ্য, শিক্ষা ও গৃহায়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে এদের স্বাবলম্বী করা। এই যে স্বাবলম্বীকরণের প্রচেষ্টা এটি একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নয়নের ধারাটাকে টেকসই করার একটি নতুন মডেল, যে মডেলের উদ্ভাবক অত্যন্ত ঋজু, প্রাজ্ঞ, জনদরদি ও বাস্তববাদী রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনা। একটি আধুনিক জাতি রাষ্ট্র তখনই জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হয়ে ওঠে যখন সেটি তার নাগরিকের জন্য নানাবিধ সুবিধা তথা শিক্ষার সুবিধা, বাসস্থানের সুবিধা, চিকিৎসার সুবিধা ইত্যাদির সুযোগ তৈরি করে থাকে। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে সেই জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সংজ্ঞায় সম্পৃক্ত করতে চেয়েছেন তৃণমূল, ভূমিহীন মানুষের জন্য তৈরি গৃহায়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই আশ্রয়ণ প্রকল্পকে একটি অনন্য প্রকল্প হিসেবে অভিহিত করেছেন নরওয়েজিয়ান শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. অ্যাটলি পিয়ারসন। প্রকল্পটি অনন্য কারণ সরকারি জমিতে বাড়ি নির্মাণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ঠিকানা প্রদানের দৃষ্টান্ত অন্যকোথাও নেই। নেপালের অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘রাতোপতিতে’ ৮ আগস্ট ড. অ্যাটলির সে নিবন্ধটি প্রকাশিত হয় তার শিরোনাম ছিল ‘উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের’ দৃষ্টান্ত হিসেবে বাংলাদেশের আশ্রয়ণ প্রকল্প। ‘কেউ পিছিয়ে থাকবে না’-এই নীতির আলোকে গড়ে উঠেছে শেখ হাসিনার উন্নয়ন মডেল যা ইতোমধ্যেই ‘মডেল ফর ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি জমিতে ভূমিহীন যেমন পেয়েছে মালিকানা, বিদ্যুৎ ও স্যানিটারিসহ দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি বাড়ি তেমনি সামাজিকভাবে নাজুক ও অধস্তন অবস্থায় থাকা অবহেলিত নারীও অর্জন করেছে জমির মালিকানার অধিকার। আশ্রয়ণ প্রকল্পটি শুধু একজন পুরুষ ও তার পরিবারকেই আত্মসম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার সুযোগ প্রদান করে না। এটি যুগপৎভাবে নারীকেও প্রদান করে মালিকানার অধিকার এবং বৃদ্ধি করে তার সামাজিক মর্যাদা, সম্মান ও আত্মবিশ্বাস। জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার আত্মপ্রত্যয় অর্জনের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন হয় আরও সুসংহত। মূলত অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য  বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযুদ্ধ ভাতা এবং বিভিন্ন বৃত্তি ও উপ-বৃত্তির চালু করেছেন যে কারণে আমরা দেখতে পাচ্ছি সমাজের বিভিন্ন সেক্টরে ইতিবাচক বা গুণবাচক পরিবর্তন। শিক্ষা ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, নারী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেড়েছে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের, স্বাবলম্বী হওয়ার প্রত্যয়ে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে একটি রোল মডেল হয়ে ওঠেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত, গৃহহীন ও নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ এই মর্যাদা পূর্ণ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। সারা বিশ্বেই দরিদ্রতা থেকে মুক্তি একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহায়ণ প্রকল্পের মতো এত সাহসী, সময় উপযোগী এক বাস্তবিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। দারিদ্র্য সীমার নিচে কিংবা দরিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত গৃহহীন জনগোষ্ঠীকে তিনি একটি সুমর্যাদার আসন দিতে চেয়েছেন, একটি স্থায়ী ঠিকানা দিতে চেয়েছেন। নিঃসন্দেহে শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে অর্থনীতির চাকাকে ক্রমশ উন্নয়নমুখী ও বেগবান করা। দরিদ্র্যের হার ১৮ শতাংশে ও হতদরিদ্র্যের হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা, গ্রাম ও শহরের দূরত্ব ঘুচিয়ে আনার কর্মসূচি গ্রহণ, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস নির্মাণ প্রকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনেছে, তার সুফল প্রত্যক্ষভাবে কেন্দ্র থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। দেশের ভূমিহীন, আশ্রয়হীন মানুষের জন্য গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে (বর্তমান মেয়াদে)। এসব বাড়িতে রয়েছে বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা। সরকারি খাসজমির ওপর নির্মিত এ বাড়িগুলো যেমন দৃষ্টি নন্দন তেমনি স্মার্ট ও আধুনিক। সীমিত জায়গার ওপর নির্মিত এসব বাড়িতে রয়েছে শয়ন কক্ষ, রন্ধন কক্ষ, লাগোয়া বারান্দা ও শৌচাগার। অত্যন্ত আধুনিক স্টাইলে নির্মিত এসব বাড়িগুলোর কোনোটা পেয়েছে লাল-হলুদ রং এর ছোঁয়া কিংবা হলুদ-সবুজ রং এর ছোঁয়া। যে ভূমিহীন মানুষেরা ছিল ভূমিহীন, শেখ হাসিনা গড়ে দিয়েছেন তাদের জন্যই এমন বাসস্থান, বসতি নীড়। স্বপ্নের আশ্রয়ণ প্রকল্প তাই আজ আর কোনো স্বপ্নপুরীর গল্প নয়, এটি বিমূর্ত বাস্তবতা। এ প্রকল্পটি একটি জনকল্যাণমূলক, উদ্ভাবনীময় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রকল্প যা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আকাক্সক্ষা ও স্বপ্নের বাস্তবায়ন। তাত্ত্বিকেরা তত্ত্বের কথা বলেন, বস্তুবাদীরা পরিবর্তনের কথা বলেন, আর শেখ হাসিনা সে পরিবর্তন আনয়ন করেন তত্ত্ব ও বাস্তবতার সমন্বয়ের মাধ্যমে, জনগণের আকাক্সক্ষাকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে। মুজিববর্ষে বাংলাদেশের একজন নাগরিকও থাকবে না ভূমিহীন প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই এসেছে শেখ হাসিনার এ অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কর্মসূচি। শেখ হাসিনা বস্তুবাদী তাত্ত্বিক নন, মার্কসবাদী দার্শনিক নন, ভোগবাদী রাষ্ট্রনায়ক নন। তার তত্ত্ব মাটি ও মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং এ কারণে তার তত্ত্বে স্থান পেয়েছে কণ্ঠস্বরহীন নিম্নœবর্গের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যাপিত জীবনের সংগ্রামের কাহিনি। যদিও সহায় সম্বলহীন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মডেল, প্যাকেজ, তাত্ত্বিক কাঠামোকে গ্রহণ করা হয়েছে, সে সব কর্মসূচির অধিকাংশই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কহীন হওয়ার কারণে। বাস্তববাদী ও সুচিন্তক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার তথ্য, উপাত্ত ও তত্ত্বের মূল উপজীব্য বিষয় এদেশের গৃহহীন, ভূমিহীন ও আশ্রয়হীন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।  শেখ হাসিনা তাই জনগণের নেত্রী, জনগণের হৃদয়ে তার দৃঢ় অবস্থা।  জনগণের সমস্যাকে তিনি হৃদয়ে ধারণ করেন এবং তাদের আশা-আকাক্সক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে দেশ পরিচালনা করেন বলেই তার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা আজ আকাশ ছোঁয়া।

লেখক : সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি

সর্বশেষ খবর