শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

রসুল (সা.)-এর আদর্শই উত্তম

মো. আমিনুল ইসলাম

রসুল (সা.)-এর আদর্শই উত্তম

পবিত্র  কোরআনে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন,  ‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আল আহযাব, আয়াত ২১)। এ আয়াতটির মাধ্যমে এটাই প্রতীয়মান যে নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রসুলের উত্তম অনুপম আদর্শ রয়েছে। এর মাধ্যমে রসুল (সা.)-এর বাণীসমূহ ও কার্যাবলি উভয়ই অনুসরণের হুকুম রয়েছে।

আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী, অবশ্যই আমরা আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে।’ ( সুরা আল আহযাব, আয়াত ৪৫)। আল্লাহ রসুল (সা.)-কে এই দুনিয়ায় তাঁর বান্দাদের সতর্ক করার জন্য পাঠিয়েছেন। কীসের সতর্কতা? আমরা যেন দুনিয়ার বুকে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করি, তাঁর দেওয়া বিধান কোরআনের আদেশ-নিষেধ মেনে চলি। তাহলেই আমাদের জন্য রয়েছে জান্নাত নতুবা হিংসা, হানাহানি, হত্যা, রাহাজানি অর্থাৎ সব ধরনের খারাপ কাজের জন্য রয়েছে জাহান্নাম আর কঠিন শাস্তি।

নবী করিম (সা.) যেদিন মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন সেদিন কুরাইশ বংশে আনন্দ বয়ে গিয়েছিল। তাঁর দাদা আবু তালেব খুশিতে মক্কার মানুষদের দাওয়াত করে ভোজ দিয়েছিলেন আর চাচা আবু লাহাব তার দাসীকে মুক্তি দিয়েছিলেন। জন্মের পর থেকে আল্লাহর রসুলের জীবন ছিল কষ্ট আর সংগ্রামে ভরা। অতি অল্প বয়সে তিনি ছিলেন পিতৃ-মাতৃহীন। তাঁর পুরো জীবনটা ছিল পরীক্ষার। ৬৩ বছরের জীবনে তাঁকে চরম চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আসতে হয়েছে। ইসলাম ধর্ম প্রচার আর আল্লাহর একাত্মবাদের কথা বলতে গিয়ে মক্কার কাফেরদের কাছ থেকে নির্যাতন আর নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। আল্লাহর নির্দেশে নিজ জন্মস্থান মক্কা নগরী ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করতে হয়েছে। তারপর একের পর এক ধর্ম যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়েছে। বদরের যুদ্ধ, উহুদের যুদ্ধ যা  উল্লেখযোগ্য। রসুল (সা.) সম্পর্কে সাহাবারা হজরত আয়েশা (রা.) কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন ‘জেনে রাখো, পুরো কোরআনই হলো রসুল (সা.)-এর চরিত্র’। (মুসনাদে আহমদ, ২৫৮১৩)।  সুবহানাল্লাহ। আমরা সেই রসুলের উম্মত। আমাদের মধ্যে তাঁর উত্তম চরিত্রের কতটুকু আমরা ধারণ করতে পারছি? নবীজি ছিলেন সত্যবাদী। সে জন্য তিনি শৈশবে মক্কার অধিবাসীদের কাছে ‘আল আমিন’ উপাধি পেয়েছিলেন। আর সেই নবীর উম্মত হয়ে আমরা প্রতিনিয়ত মিথ্যার মধ্যে ডুবে আছি। মিথ্যা ছাড়া আমরা যেন এখন চলতে পারি না। প্রতিটি স্তরে মিথ্যার বেসাতি। রসুল (সা.) সারা জীবনে কখনো কাউকে কষ্ট দেননি। কারও ক্ষতি করেননি। কাউকে হত্যা করেননি। মিথ্যা সাক্ষ্য দেননি। কোরআনের আদেশ-নিষেধ মেনে জীবনযাপন করেছেন আর তাঁর উম্মতকে কোরআনের বিধান মেনে জীবন পরিচালনা করার তাগিদ দিয়েছেন। কোরআনের সব গ্রহণীয় ও বর্জনীয় এবং ভালো ও মন্দকে তিনি যথার্থভাবে গ্রহণ করতেন।  কোরআনে যা বলা হয়েছে তার বাইরে কোনো কিছুকে তিনি আমলে নিতেন না।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো তবে আমাকে অনুসরণ করো। আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা আলে ইমরান,  আয়াত ৩১)।

আল্লাহ আরও বলেন, ‘আর রসুল (সা.) তোমাদের যা দেন তা গ্রহণ করো, যা থেকে তোমাদের নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো এবং আল্লাহকেই ভয় করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর।’ (সুরা হাশর, আয়াত ০৭)। হাদিসে এসেছে, এক লোক রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসুল! কেয়ামত কখন হবে? রসুল (সা.) বললেন, তুমি এর জন্য কি তৈরি? লোকটি বলল, আমি এর জন্য তেমন সালাত, সাওম ও সদকা করতে পারিনি, তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে ভালোবাসি। তখন রসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি তাঁর সঙ্গেই থাকবে যাকে তুমি ভালোবাসো।’ (বুখারি ৬১৭১)।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় হাবিব রসুল (সা.) সম্পর্কে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করেন। হে ইমানদারগণ, তোমরাও নবীর ওপর সালাত পাঠ করো এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম দাও।’ (সুরা আল আহযাব, আয়াত ৫৬)।

                লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর