শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জগতের সেরা মানব রসুলুল্লাহ (সা.)

আবদুর রশিদ

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করেন রবিউল আউয়াল মাসের সোমবারে। তবে ওই মাসের ১২ তারিখকে সাধারণভাবে জন্মদিন বলে ভাবা হয়। তবে বিষয়টি সুনির্দিষ্ট নয়। শুধু রবিউল আউয়াল মাস ও সোমবারের বিষয়টি নিশ্চিত। হজরত কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সোমবার দিন রোজা পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বললেন, ‘এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এই দিনে আমার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে’ (মুসলিম)।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাব মানুষের ইতিহাসের একটি স্মরণীয় ঘটনা। তাঁর আবির্ভাবের সময়ে পৃথিবী পাপের অন্ধকারে ভরে গিয়েছিল। মানবতার ওপর পশুত্বের বিজয় পতাকা উড্ডীন হয়েছিল। মানবতা বলে পৃথিবীতে কোনো কিছুর অস্তিত্ব লোপ পাচ্ছিল। পৃথিবী জাহেলিয়ার ছোঁয়ায় আচ্ছন্ন ছিল। ঠিক সেই সময়ে রবিউল আউয়াল মাসে আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর সৃষ্টির ওপর দয়া করে মহানবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ধরার বুকে রহমত হিসেবে প্রেরণ করেন। তাঁর আগমন বিশ্ববাসীর জন্য রহমত বলে বিবেচিত। মুমিন, কাফির, জিন-ইনসান সবার জন্য তিনি রহমত হিসেবে নাজিল হন। তাই ইসলামের ইতিহাসে রবিউল আউয়াল হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। জন্ম তাঁর যেমন এ মাসে, আবার এ মাসেই তিনি তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন শেষে মহান আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন এবং মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে গমন করেন। এ মাসেই তিনি মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেন। সুতরাং একদিকে এ মাসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভাগমন বিশ্ববাসীকে পুলকিত করে, অন্যদিকে এ মাসে তাঁর প্রস্থান মুসলিম বিশ্বকে শোকাভিভূত করে। তাই এ মাসটি একই সঙ্গে শোক ও আনন্দের। সে কারণেই এ মাসের আলাদা একটি মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে মুমিনদের কাছে। রসুল (সা.)-এর শুভ আগমনের খবর শুনে তাঁর চাচা আবু লাহাব খুব খুশি হয়েছিলেন। তিনি এতই খুশি হয়েছিলেন যে, তার দাসী সুয়াইবাকে দুই আঙুলের ইশারায় মুক্তি দিয়েছেন। বিভিন্ন সহি বর্ণনায় এসেছে, আবু লাহাবের মৃত্যুর পর কোনো এক ব্যক্তি মতান্তরে তাঁর ভাই আব্বাস তাঁকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার হায়াতে বরজখ কেমন যাচ্ছে? আবু লাহাব বললেন, হে আমার ভাই! জাহান্নামে খুব কষ্টে আছি। তবে প্রতি সোমবার আমার আজাব কিছুটা হালকা করা হয়। কেননা আমার ভাতিজা মুহাম্মদ সোমবারে জন্মগ্রহণ করেছে আর এ কারণে আমি খুশি হয়ে আমার দাসী সুয়াইবাকে মুক্তি দিয়েছিলাম। আমি তাকে দুই আঙুলের ইশারায় মুক্ত করেছিলাম। তাই সোমবার এলেই আমার দুই আঙুলের ডগায় সুস্বাদু পানি চলে আসে। আমি আঙুল চুষে এক সপ্তাহের তৃষ্ণা মিটাই।’

চাচা আবু লাহাব রসুল (সা.)-এর জন্মের খবরে যে আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন তার কোনো তুলনাই নেই। কিন্তু মুহাম্মদ (সা.) যখন ইসলাম প্রচারে নামেন তখন এই লাহাবই তার প্রধান শত্রু হয়ে দাঁড়ান। কারণ তিনি এক আল্লাহর দিনে আস্থা রাখতে পারেননি। যে কারণে তাঁকে ধ্বংসের সম্মুখীন হতে হয়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসতে হবে মহান আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী।

সংগত কারণেই রবিউল আউয়াল মাসের দাবি হলো- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত-ভালোবাসা ও তাঁর স্মরণে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে মনোযোগী হওয়া। নেক ও কল্যাণমূলক কাজ দিয়ে জীবনটাকে সজ্জিত করা। আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতগুলোর শুকরিয়া আদায় করা। আর কিছু না হোক অন্তত এ মাসে সুন্নাতবিরোধী কোনো কাজ না করা, বিদাত ও অপছন্দনীয় বিষয় থেকে বিরত থাকা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কষ্টের কারণ হয় এমন সব কাজকর্ম থেকে দূরে থাকা। তাঁর আনীত শরিয়তের সাংঘর্ষিক ছোট ছোট কাজগুলোকেও অপছন্দের দৃষ্টিতে দেখা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, এসব ব্যাপারে অনেক নামধারী নবীপ্রেমিককে ধর্মের ব্যাপারে দুঃসাহস প্রদর্শন করতে দেখা যায়। তারা মূলত ধর্মের নামে অধর্ম ছড়ায়। ধর্মবিরোধী কর্মকান্ডগুলোকে ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে প্রচার চালায়।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনে একজন মুসলমান সব সময় কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আনন্দিত থাকবে, আনন্দ প্রকাশ করবে এটা তার কর্তব্য। তবে যুগে যুগে প্রতি বছর যখনই আল্লাহর নবীর আগমনের এ মাস আসে তখন আল্লাহর নবীপ্রেমিকের মধ্যে আনন্দ প্রকাশ, নতুন উদ্দীপনা শুরু হয় এবং আনন্দ প্রকাশের ধরন ও কাল পাত্রভেদে বিভিন্ন রূপে রূপান্তরিত হয়। আনন্দ প্রকাশের বাহ্যিক রূপ হলো নবীজির জীবনাদর্শ নিয়ে বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, সভা-সমাবেশ করা। আর তার আধ্যাত্মিক রূপ হলো- তাঁর নির্দেশনা, পয়গামকে ধারণ করা। নিজের জীবনকে নবীর সুন্নত অনুযায়ী গড়ে তোলা।

জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি অবস্থায়, লেনদেন, বিয়েশাদি, বেচাকেনা, খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম, হাসি-কান্নাসহ সর্বাবস্থায় প্রিয়নবীর সুন্নত অনুযায়ী জীবনযাপন করাই নবীর প্রতি ভালোবাসা। শুধু মুখে মুখে নবীর ভালোবাসার দাবি করলে ভালোবাসা হয় না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত মোতাবেক জীবনযাপন করলে তাঁকে ভালোবাসা হয়। মুমিনদের এ ব্যাপারে সদা সচেতন থাকতে হবে। কোনো অবস্থায় এর ব্যতিক্রম যাতে না হয় সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর