সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

মো. খসরু চৌধুরী

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একে একে খুলে দেওয়া হচ্ছে সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো। এর মধ্যে রয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেল, পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল মেট্রোরেল, আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেললাইন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একাংশ।  এ ছাড়া উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে ও বিআরটির কিছু প্রকল্প। বাংলাদেশ আজ দুর্বার বেগে অগ্রগতির দিকে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। একাত্তরে স্বাধীনতার পর এক বিধ্বস্ত অর্থনীতি নিয়ে দেশ গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অনেক চড়াই-উতরাই শেষে সেই দেশটি এখন শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়ন সব সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি অভূতপূর্ব। সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাস, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি সব ক্ষেত্রেই বিশ্বে বাংলাদেশ এখন এক বিস্ময়ের নাম। স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে দেশের জিডিপির আকার ছিল ৬৪ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৭৬৪ দশমিক ৬২ বিলিয়নে। তুলনামূলক হিসাব করলে এটি ৬২০ গুণ বেশি হয়। ২০২০ সালের শুরু থেকে বিশ্বজুড়ে লেগে আছে করোনা মহামারি। পৌনে দুই বছর ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। নতুন বছরে মন্দার আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। বিশ্ব অর্থনীতির এত সব কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশের জিডিপির আকার অনেক বেড়েছে। ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার জিডিপি নিয়ে বিদায়ী ২০২২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম। এর আগের বছরে এ অবস্থান ছিল ৪১, সে সময় বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ৩৯৭ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি  বিশ্বের ৫০টি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে শুধু ভারত ও বাংলাদেশ।

২০০৯ থেকে ২০২৩ অগ্রযাত্রার ১৪ বছর অতিবাহিত হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনবদলের সনদ হিসেবে জাতির সামনে রূপকল্প ২০২১ উপস্থাপন করেন। এর পর থেকে ম্যাজিকের মতো দ্রুত বাংলাদেশের দিন বদলে যেতে থাকে। বিকাশমান তথ্যপ্রযুক্তি খাত দেশকে নিবিড় শ্রমসহায়ক অর্থনীতি থেকে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে যুক্ত করেছে। বাংলাদেশের অগ্রগতি মূলত যোগাযোগব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যোগাযোগব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা যখনই নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়েছেন, তখনই জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন। প্রথমবার সরকারে এসে তিনি যমুনা নদীর ওপর বহুমুখী সেতু নির্মাণ করেন। এ ছাড়া আরও অনেক সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করেন। যার মধ্যে রয়েছে ধরলা সেতু, গাবখান সেতু, শিকারপুর ও দোয়ারিকা সেতু এবং ভৈরব সেতু। সমগ্র বাংলাদেশকে একটি যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আনাই ছিল তাঁর সরকারের প্রচেষ্টা। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। মধুমতী সেতু ও নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু করে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করার একটা সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। একের পর এক সেতু ও সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের ফলে এখন মোংলা বন্দর আমাদের খুব কাছে এসে গেছে। সেই সঙ্গে আমাদের স্থলবন্দর বেনাপোল, ভোমরাসহ কুষ্টিয়া অঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হলে আমাদের চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর একটি আন্তর্জাতিক হাব হিসেবে গড়ে উঠবে। অক্টোবরে মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১৪ বছরে সারা দেশে প্রতিটি গ্রাম থেকে রাজধানী পর্যন্ত কোনো না কোনোভাবে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা বিনির্মাণের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে মহাসড়ক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বর্তমানে জনগণ নির্বিঘ্নে ও স্বল্প সময়ে যেমন যাতায়াত করতে পারছে গন্তব্যে, তেমন পণ্য পরিবহনও করতে পারছে সহজেই। এ ছাড়া বর্তমান সরকার আমলে সমতল থেকে পাহাড় পর্যন্ত দেশের সর্বত্রই নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সেসব সড়ক-মহাসড়কসহ সওজের মাধ্যমে বর্তমানেও চলমান রয়েছে জাতীয়, আঞ্চলিক, জেলা সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ ও কালভার্ট উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ। বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতিদিনই নিজেকে অতিক্রম করছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলেই ইতোমধ্যে হতদরিদ্র অবস্থা থেকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাবান অর্থনৈতিক বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান শ্যাক্স বলেছে, ২০৭৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বের ১৬তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে।

 

লেখক : সিআইপি, পরিচালক বিজিএমইএ

সর্বশেষ খবর