সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সহিংসপ্রবণতা

এ অভিধা গর্বের নয় লজ্জার

বাংলাদেশ বিশ্বের ২২তম সহিংসপ্রবণ দেশ। এটা সমাজবিরোধী ও বিবেকবর্জিতদের জন্য গর্বের হলেও জাতির জন্য লজ্জার। সহিংসতা এ দেশের ঐতিহ্যের অনুষঙ্গ। বৈষয়িক দিক থেকে দেশের উন্নতি ঘটলেও মনমানসিকতার পরিবর্তন না ঘটায় এ লজ্জা এড়ানো যাচ্ছে না। দেশে কথায় কথায় হামলার ঘটনা থাবা বিস্তার করছে। হত্যা, জখম, বাড়িঘর ভাঙচুরসহ জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো ঘটনাও ঘটছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বজনরাই বেছে নিচ্ছে খুনের মতো নিকৃষ্ট পথ। স্বামী খুন করছে স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে, মা খুন করছে সন্তানকে, সন্তান খুন করছে মা-বাবাকে, স্বামী পুড়িয়ে মারছে স্ত্রীকে, ভাই খুন করছে ভাইকে। বীভৎস লাশ নাড়িয়ে দিচ্ছে মানুষের বিবেক। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত ২৪০টি দেশ ও অঞ্চলের সংঘাত ও সহিংসতার তথ্য সংগ্রহ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্ট একটি তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২২ নম্বরে। সম্প্রতি প্রকাশিত এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছে মিয়ানমার। এরপরই যথাক্রমে সিরিয়া, মেক্সিকো, ইউক্রেন ও নাইজেরিয়া। তালিকায় বাংলাদেশের আগে ২১ নম্বরে রয়েছে আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া। আর বাংলাদেশের পরে ২৩ নম্বরে রয়েছে কেনিয়া। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে ২৯২ জন শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। শিশু ধর্ষণের ঘটনা ১৯৪টি। দেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ওই সময়ে ৩৫৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৫ জনকে। এ বছর জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৯৯ নারী। এর মধ্যে ১৩৪ জন নারী স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন। বাংলাদেশ নামের ভূখন্ডের ইতিহাসে গর্বের দিক যেমন রয়েছে তেমন আছে ‘মৎসন্যায়’ নৈরাজ্যের অপমানজনক অধ্যায়। নিজেদের মানুষ হিসেবে ভাবতে হলে সহিংসতা ও বর্বরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। নিজেদের সভ্য সমাজের মানুষ হিসেবে পরিচিত করার এটিই সেরা উপায়।

সর্বশেষ খবর