মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সর্বশেষ নবী তিনি

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

সর্বশেষ নবী তিনি

মানবজাতির হেদায়েতের জন্য মহান প্রভু আল্লাহতায়ালা বহু নবী-রসুল প্রেরণ করেছেন। এ ক্রমধারা আরম্ভ হয় প্রথম মানব হজরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে। আর আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে। তিনি হলেন সর্বশেষ নবী ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। তাঁর আগমনের পর আর নবী হিসেবে কারও আগমন হবে না। নবী-রসুল আগমনের এ ক্রমধারাটির সমাপ্তিকে ইসলামী পরিভাষায় খতমে নবুয়ত বলা হয়। খতমে নবুয়ত ইসলামী শরিয়তে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামী পরিভাষায় হজরত মুহাম্মদই (সা.) সর্বশেষ নবী ও রসুল, এ বিশ্বাসকে খতমে নবুয়ত বলা হয়। তাওহিদ, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ও পরকাল ইত্যাদি বিষয় যে পর্যায়ের অকাট্য দলিল-প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত, খতমে নবুয়তের আকিদাও অনুরূপ দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত। এজন্যই তাওহিদ, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ও পরকাল ইত্যাদি অস্বীকারকারী যেমন মুসলমান নয়, তেমন খতমে নবুয়ত অস্বীকারকারীও মুসলমান হিসেবে গণ্য হবে না। রসুল (সা.)-এর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত হবে না। পরকালে তারা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে। হবে চিরস্থায়ী জাহান্নামি। যারা তাদের অমুসলিম গণ্য করবে না তারাও ইসলামের দৃষ্টিতে বিভ্রান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। আল্লাহতায়ালা মানবজাতির হেদায়াত ও দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য বিভিন্ন বিধিবিধান প্রদান করেছেন। মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে এ ধারা পরিপূর্ণ এবং সমাপ্ত করেছেন। মহান প্রভু এ ধারা সমাপ্ত ঘোষণার পর এতে সংযোজন বা বিয়োজনের প্রয়োজন নেই। নেই এ বিষয়ে কারও কোনো অধিকার। এটা ইসলামের অন্যতম একটি মৌলিক আকিদা। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ (সুরা আল মায়িদাহ-৩)। অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রসুল এবং শেষ নবী।’ (সুরা আল আহজাব-৪০)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেন, ‘অন্য নবীদের তুলনায় আমাকে ছয়টি ক্ষেত্রে অধিক মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। আমাকে ব্যাপক বিষয় সংক্ষেপে প্রকাশ করার যোগ্যতা প্রদান করা হয়েছে, শত্রুর অন্তরে আমার প্রভাব সৃষ্টি করে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে, আমার জন্য গনিমতের সম্পদ হালাল করা হয়েছে, আমার জন্য সমগ্র ভূমি পবিত্র ও নামাজের উপযুক্ত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, আমি সমগ্র সৃষ্টির প্রতি প্রেরিত হয়েছি এবং আমার মাধ্যমে নবীর আগমনের ধারা শেষ করা হয়েছে।’ (বুখারি, মুসলিম)। অন্য এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমার উম্মতের মধ্যে ৪০ জন মিথ্যুকের আগমন হবে। তারা সবাই ধারণা করবে সে নবী। অথচ আমি শেষ নবী আমার পর আর কোনো নবী নেই।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)। বর্তমান বিশ্বে কাদিয়ানি সম্প্রদায় নামক একটি ভ্রান্ত দল মির্জা গোলাম আহমদকে তাদের নবী এবং তারা নিজেদের মুসলিম পরিচয় দিয়ে একটি নতুন ধর্মের প্রচার চালিয়ে সমাজে অশান্তি ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি ওদের অপতৎপরতার চিত্র আরও ভয়ানক হচ্ছে। নবীপ্রেমী মুসলিম সমাজের এ বিষয়ে সার্বিক জ্ঞান ও সম্যক ধারণা অর্জন করা এবং পরিপূর্ণ সচেতনতা গ্রহণ করা সময়ের একটি দাবি।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর