শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আল্লাহর পরিচয়

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আল্লাহর পরিচয়

মুমিন জীবনের একমাত্র কাক্সিক্ষত সত্তা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে মুমিন বান্দার লক্ষ্য থাকে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন। কী করলে আল্লাহ খুশি হবেন আর কী করলে আল্লাহ নাখোশ হবেন এই ভাবনায় বিভোর থাকে সে। যে আল্লাহকে আমরা পেতে চাই তিনি অপরূপ। তাঁর অনেক পরিচয়। সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা। শুধু আমাদের নয় বিশ্ব জগতের প্রতিটি অণুকণাও তিনি সৃষ্টি করছেন। সৃষ্টি করেছেন মহাশূন্যের মতো রহস্যেঘেরা জগৎও। আল্লাহর পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘তিনি আসমান ও জমিন যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা আনআম, আয়াত ৭৩)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘বল, আল্লাহই সবকিছুর স্রষ্টা, তিনি একক, মহা প্রতাপশালী।’ (সুরা রাআদ, আয়াত ১৬)। সুরা বাকারায় আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য জমিনের সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা বাকারাহ, আয়াত ২৯)।

আল্লাহর স্রষ্টা পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি প্রক্রিয়াও বর্ণনা করেছেন কোরআনে। সুরা নিসায় আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! তোমাদের সে রবকে ভয় করো, যিনি তোমাদের একটি আত্মা থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জোড়া। আর এ দুই থেকে তিনি অসংখ্য নারী-পুরুষ ছড়িয়ে দিয়েছেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত ১)। সৃষ্টি প্রক্রিয়া আরও ব্যাপকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে সুরা ওয়াকিয়ায়। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি। তবে কেন তোমরা সত্যকে গ্রহণ করবে না? তোমরা কি ভেবে দেখেছ বীর্যপাত সম্পর্কে? তোমরা কি তা সৃষ্টি করেছ, না সৃষ্টির উৎস আমি?’ (সুরা ওয়াকেয়া ৫৭-৫৯)। মানুষের প্রাথমিক সৃষ্টি প্রক্রিয়া শুরু হয় বীর্যপাতের মাধ্যমে। তারপর মায়ের গর্ভে আল্লাহ মানুষকে নানান আকৃতিতে সৃষ্টি করেন। এ সম্পর্কে পরের আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জানা নেই, এমন আকৃতিতে তোমাদের সৃষ্টি করা থেকে আমাকে বিরত রাখার শক্তি কারও নেই।’ (সুরা ওয়াকেয়া ৬১)। আল্লাহর সৃষ্টি প্রক্রিয়া সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণার আহ্বান জানিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের প্রথম যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে, সে-সম্পর্কে তো তোমরা জান। তাহলে কেন তোমরা স্রষ্টা সম্পর্কে চিন্তা করবে না?’ (সুরা ওয়াকেয়া ৬২)। যেহেতু আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা সে কারণেই সব কর্তৃত্বও আল্লাহরই। কোরআনের অসংখ্য আয়াতে স্রষ্টার সঙ্গে কর্তৃত্বের ঘোষণাও দিয়েছেন আল্লাহতায়ালা। ‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন সময়ের ছয় স্তরে। তারপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনি দিন-রাতের আবর্তন ঘটান। সূর্য-চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি তাঁরই সৃষ্টি, তাঁরই আজ্ঞাবহ। সৃষ্টি করা ও আদেশ দেওয়ার সার্বভৌম ক্ষমতা শুধু তাঁর। তিনি মহাবিশ্বের প্রতিপালক, মহামহিম।’ (সুরা আরাফ, আয়াত ৫৪)। মহাবিশ্বের সৃষ্টি প্রক্রিয়া বর্ণনা করে কর্তৃত্বের ঘোষণা পাওয়া যায় সুরা সাজদাহয়। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ মহাকাশ ও পৃথিবী এবং এর মধ্যবর্তী সবকিছু ‘সময়ের ছয় স্তরে’ সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি আরশে সমাসীন হন। মহাবিচার দিবসে তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো সুপারিশকারী নেই, অভিভাবকও নেই। এরপরও কি তোমরা বিষয়টি নিয়ে ভাববে না? মহাকাশের শেষ সীমানা থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সব অস্তিত্বের তিনিই নিয়ন্তা। আর শেষ পর্যন্ত সবাই তাঁর বিচারের মুখোমুখি হবে এক নির্দিষ্ট দিনে। সেই দিনটি মনে হবে তোমাদের হিসাবের হাজার বছরের সমান।’ (সুরা সাজদাহ, আয়াত ৪-৫)। আল্লাহতায়ালা একক স্রষ্টা, আর এ কারণেই তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করা কঠোরভাবে নিষেধ। অর্থাৎ স্রষ্টা গুণের মাঝেই লুকিয়ে আছে তাওহিদের পক্ষে অমোঘ যুক্তি। আল্লাহ বলেন, জিজ্ঞেস কর, ‘আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিপালক কে?’ বল, ‘আল্লাহ’! জিজ্ঞেস কর, ‘তবে কেন তোমরা আল্লাহ ছাড়া এমন কাউকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করবে, যারা নিজেদেরই কোনো উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না?’ ওদের জিজ্ঞেস কর, ‘অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি কখনো সমান হতে পারে অথবা আলো ও অন্ধকার কি কখনো সমান হয়?’ অথবা তারা কি সত্যিই বিশ্বাস করে যে, যাদের তারা আল্লাহর শরিক ভাবে, তারাও আল্লাহর মতো সৃষ্টি করেছে? এবং তা দেখে মনে হয়েছে যে, উভয়েরই সৃষ্টি এক? হে নবী! বল, আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি এককভাবেই সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’ (সুরা রাদ, আয়াত ১৬)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! তোমরাই বল যিনি সৃষ্টি করেন তাঁর সঙ্গে কি এমন কোনো কিছুর তুলনা হয়, যা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না? এরপরও কি তোমরা মুক্তমনে প্রকৃতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে না?’ (সুরা নাহল, আয়াত ১৭)।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

পীর সাহেব, আউলিয়ানগর

www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর