শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অহংকার একটি নিন্দনীয় গুনাহ

মো. আমিনুল ইসলাম

অহংকার একটি নিন্দনীয় গুনাহ

পৃথিবীতে মানুষ সব সময় অপরের চেয়ে নিজেকে বড় ও উত্তম ভাবতে ভালোবাসে এবং অন্যকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে আনন্দ পায়। এর নামই অহংকার। কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। অহংকার একমাত্র আল্লাহর ভূষণ এবং তিনিই অহংকার করার অধিকার রাখেন। সৃষ্টির কারও অহংকার করা শোভা পায় না। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর জমিনে তোমরা দম্ভভরে চলাফেরা কর না, কেননা তুমি কখনোই এ জমিন বিদীর্ণ করতে পারবে না, আর উচ্চতায় তুমি কখনো পর্বত সমানও হতে পারবে না’ (সুরা বনি ইসরাইল-৩৭)। অবশ্যই আল্লাহতায়ালা এমন মানুষকে কখনোই পছন্দ করেন না, যে অহংকারী ও দাম্ভিক’ (সুরা নিসা-৩৬)।

‘তিনি কখনো অহংকারীদের পছন্দ করেন না’ (সুরা আন নাহল-২৩)।

অহংকারের অর্থ হচ্ছে নিজেকে অন্যের চেয়ে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ এবং অন্যকে নিজের তুলনায় হেয় ও ঘৃণ্য মনে করা যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। হাদিসে এ ব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্কবাণী করা হয়েছে। রসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ ওহির মাধ্যমে আমার কাছে নির্দেশ পাঠিয়েছেন, নম্রতা অবলম্বন কর। কেউ যেন অন্যের ওপর গর্ব ও অহংকারের পথ অবলম্বন না করে এবং কেউ যেন কারও ওপর জুলুম না করে’ (মুসলিম)।

রসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, অহংকার আমার চাদর এবং শ্রেষ্ঠত্ব আমার ইজার। সুতরাং যে ব্যক্তি এ দুটির কোনো একটি নিয়ে আমার সঙ্গে বিরোধিতা করবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব’ (ইবনে মাজাহ)।

অহংকার মানুষের মর্যাদাকে বিনষ্ট করে আর বিনয় মানুষের ভাব মর্যাদাকে সমুন্নত করে। অহংকারী নিজেকে নিজের কাছে অনেক বড় মনে করে। কিন্তু অহংকারীদের আল্লাহর কাছে কোনো মূল্য নেই।

অহংকারী ব্যক্তি কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না। আল্লাহ বলেন, ‘কেয়ামতের দিন তুমি দেখবে যারা আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপ করে তাদের মুখগুলো সব কদাকার। জাহান্নাম কি অহংকারীদের ঠিকানা নয়?’ (সুরা জুমার-৬০)।

‘ওদের তখন বলা হবে যাও, প্রবেশ করো জাহান্নামের দরজাগুলো দিয়ে, তোমরা সেখানেই চিরদিন থাকবে। অহংকারীদের জন্য কত নিকৃষ্ট হবে এ ঠিকানা’ (সুরা জুমার-৭২)।

রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিল পরিমাণ অহংকার যার অন্তরে আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না, আর তিল পরিমাণ ইমান যার অন্তরে আছে সে দোজখে যাবে না’ (তিরমিজি)।

কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা অহংকারী ও দাম্ভিকের সঙ্গে কথা বলবেন না। তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতেও তাকাবেন না। তাকে গুনাহ থেকেও পরিত্রাণ দেবেন না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির সঙ্গে কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা কথা বলবেন না, তাদের গুনাহও মাফ করবেন না, তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতেও তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। তারা হচ্ছে বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যুক দেশের শাসক ও অহংকারী ফকির’ (মুসলিম)।

অহংকার করার কারণ হলো জ্ঞানের অভাব, পারিবারিক শিক্ষার অভাব, পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহার, হিংসার মানসিকতা, সম্পদের আধিক্য, আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা। মন থেকে অহংকার দূর করার জন্য আমাদের নিয়মিত যা করতে হবে, নিজের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন, একদিন আমরা সবাই এই পৃথিবীর মায়া, সন্তান, পরিবার, সম্পদ রেখে চলে যাব। কবর হবে আমাদের ঠিকানা। এই চিন্তা অন্তরে ধারণ করে দুনিয়ার বুকে জীবনযাপন করতে হবে, তাহলে অন্তর থেকে অহংকার দূরীভূত হবে। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে, আমার প্রতিটি কর্মকাণ্ড আল্লাহ দেখছেন এবং ফেরেশতারা তা রেকর্ড করছেন এ ব্যাপারে অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে। তাহলে আশা করা যায়, আমাদের মনে যতটুকু অহংকার আছে তা থেকে আমরা মুক্ত হতে পারব। আল্লাহ অহংকার করার জন্য ইবলিশকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছেন। অহংকারী আল্লাহর কাছে অত্যন্ত খারাপ সৃষ্টি বলে বিবেচিত। সুতরাং অহংকারী হওয়ার ইচ্ছা থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। অন্যের ভুল ক্ষমা করে দিই। মানুষের কল্যাণে কাজ করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর