রবিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভাবতে হবে পুলিশ নিয়ে

আলম রায়হান

ভাবতে হবে পুলিশ নিয়ে

পানির পাম্পের একটি বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল, ‘পানি নিয়ে ভাবনা, আর না আর না’। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পানি নিয়ে ভাবার আছে, ভাবতে হবে। পানির মতো সমান গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে পুলিশ নিয়েও। এ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভেবেছেন, ভেবেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও। তাঁরা ভেবেছেন গভীরভাবে। ভেবেছেন আরও অনেকে এবং ভাবছেন। তবে সব ভাবনাই যেন ভাসাভাসা। এ বিষয়ে গবেষণারও অন্ত নেই। তবে এসব ভাবনা ও গবেষণার সিংহভাগই পুলিশের কর্মকাণ্ডের প্রভাব নিয়ে। বৃক্ষ বাদ দিয়ে ফুল ও ফল নিয়ে ভাবনার মতো। এ ভাবনা মোটেই অবান্তর নয়। কিন্তু প্রথমে জরুরি হচ্ছে, খোদ পুলিশ নিয়ে ভাবা। ফুল ও ফল পেতে হলে যেমন আগে বৃক্ষ নিয়ে ভাবতে হয়, তেমনই পুলিশকে বৃক্ষ বিবেচনা করে মূল থেকে ভাবতে হবে। যেমন ভেবেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। রবীন্দ্রনাথ ভেবেছেন নিরাপদ দূরত্বে থেকে। আর বঙ্গবন্ধু ভেবেছেন সম্পৃক্ত হয়ে, মূল থেকে; নিজের বিবেচনা করে। যে কারণে দুজনের ভাবনার প্রকাশ ঘটেছে দুই ভাবে। তবে ভাবনার মূল কথাটি এক ও অভিন্ন। তাঁরা পুলিশকে বৃক্ষ হিসেবেই বিবেচনা করেছেন।

রবীন্দ্রনাথ পুলিশ প্রসঙ্গে কাব্যে ও গদ্যে তাঁর ভাবনা প্রকাশ করেছেন। পুলিশের প্রতি সে সময়কার চিন্তা, আশা, বিতৃষ্ণা ও অভিজ্ঞতার চিত্র ফুটে উঠেছে রবীন্দ্ররচনায়। পুলিশের কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি পুলিশ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আবার পুলিশ ছাড়া সাধারণ মানুষের যে গত্যন্তর নেই, তা-ও তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। তা ছাড়া সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশেরও যে পরিবর্তন ঘটবে তা-ও তুলে ধরেছেন বিশ্বকবি। তাঁর বিবেচনায়, সমাজব্যবস্থার জটিল কাঠামোর মধ্যে যে সমন্বয় প্রয়োজন তা রক্ষায় সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে পুলিশ। যুগে যুগে মানুষের রক্ষক হিসেবে পুলিশের যে ভূমিকা তা-ও বিভিন্ন আঙ্গিকে ফুটে উঠেছে রবীন্দ্ররচনায়। আবার বাদ পড়েনি সেই প্রসঙ্গ, ‘রক্ষক অনেক সময় ভক্ষকের ভূমিকা নেয়’। নিজের জীবনে পুলিশের সঙ্গে কবিগুরুর বিভিন্ন ঘটনাও পুলিশ সম্পর্কে তাঁর ভাবনা প্রভাবিত করেছে। পুলিশকে নিয়ে অনেকেরই যে চিরায়ত ভীতিকর ধারণা, তার একটি প্রতিচ্ছবি কবিগুরুর পূরবী কাব্যগ্রন্থে রয়েছে, ‘ঘরের খবর পাইনে কিছুই, গুজব শুনি নাকি/কুলিশপাণি পুলিস সেথায় লাগায় হাঁকাহাঁকি।/ ...সিমলে নাকি দারুণ গরম শুনছি দার্জিলিঙে,/নকল শিবের তাণ্ডবে আজ পুলিস বাজায় শিঙে।’ এদিকে ‘দেশনায়ক’-এ রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘ঘরে আগুন লাগিলে কি পুলিসের থানাতে খবর পাঠাইয়া নিশ্চিন্ত থাকিবে। ইতোমধ্যে চোখের সামনে যখন স্ত্রী-পুত্র পুড়িয়া মরিবে তখন দারোগার শৈথিল্য সন্বন্ধে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নালিশ করিবার জন্য বিরাট সভা আহ্বান করিয়া কি বিশেষ সান্ত্বনা লাভ করা যায়?’ পুলিশকে ঘুষ দেওয়ার রেওয়াজের বিষয়টিও উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথের ‘আত্মপরিচয়’-এ। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘পুলিস দারোগা যদি ঘুষ লইয়া বলপূর্বক অন্যায় করে তবে দুর্বল বলিয়া আমি সেটাকে হয়তো মানিতে বাধ্য হইতে পারি কিন্তু সেইটাকেই রাজ শাসনতন্ত্রের চরম সত্য বলিয়া কেন স্বীকার করিব?’ পুলিশের ঘুষ নেওয়ার মূল কারণ হিসেবে বিশ্বকবি আসলে শাসনব্যবস্থাকেই দায়ী করেছেন। এদিকে রবীন্দ্রনাথ যে তাঁর লেখায় পুলিশ সম্পর্কিত শুধু নেতিবাচক দিকগুলোই ফুটিয়ে তুলেছেন, তা কিন্তু নয়। বরং তাঁর লেখায় পুলিশ সম্পর্কে ফুটে উঠেছিল অনেক ইতিবাচক দিক। মানুষের প্রয়োজনে, বিপদে-আপদে যেভাবে পুলিশকে দেখতে পাওয়া যায়। কবিগুরুর সাহিত্যকর্মে রয়েছে তার অগণিত উদাহরণ। পুলিশ যে কোনো ব্যক্তিকে দেয় সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা। এমনকি পুলিশের কর্মের জন্যই রাষ্ট্রযন্ত্র নিশ্চিন্তে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’ প্রবন্ধ যেন এরই এক নান্দনিক প্রকাশ। এদিকে ঔপনিবেশিক পুলিশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছিল জনবিরোধী। স্বভাবতই তখন পুলিশের প্রতি মানুষের ক্ষোভ ছিল তীব্র। রবীন্দ্রনাথও প্রায়ই সেই ক্ষোভের প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি পুলিশের চাকরি বা ক্ষমতাকে জনসেবা করার বড় সুযোগ হিসেবেও দেখেছেন রবীন্দ্রনাথ। ঠাকুরবাড়ির দুটি চুরির মামলার কিনারা করায় খুশি হয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘মিশনারিদের অপেক্ষা পুলিশের জনসেবার সুযোগ বেশি।’

রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন, পুলিশ সমাজেরই প্রতিনিধি এবং ইচ্ছা করলেই ইংরেজ শাসিত ও আশ্রিত সেই পুলিশকে সহজেই বদলানো সম্ভব ছিল না। পুলিশ সম্পর্কে কখনো কখনো নেতিবাচকতার মধ্যেও ইতিবাচকতার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি, যে ইঙ্গিতের মধ্যে পুলিশ সংস্কারের বিষয়টি প্রণিধানযোগ্য। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আচ্ছন্ন সনাতনী প্রবণতায় তমসাচ্ছন্ন তৎকালীন সেই পুলিশের পরিবর্তনের পক্ষে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ, যার পথে বাধা হিসেবে তিনি চিহ্নিত করেছেন সমাজব্যবস্থার জটিলতম পরিকাঠামোকে। অতীত থেকে সাম্প্রতিক বাস্তবতায় আশাভরসার প্রয়োজন। এমনকি অপ্রয়োজনেও মানুষকে পুলিশের দ্বারস্থ হতে হয়। উল্লেখ্য, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ধারণাও রবীন্দ্রনাথ দিয়েছিলেন।

কারও কারও মতে, রবীন্দ্রনাথের পুলিশভাবনা থেকেই অনেকখানি প্রভাবিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে কারণে পাকিস্তানের ২৪ বছরের দুঃশাসনে পুলিশের রণচণ্ডী মূর্তি দেখার স্মৃতির প্রভাব থেকে উঠে এসে স্বাধীন বাংলাদেশে পুলিশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু গভীরে গিয়ে অন্যরকম ভাবতে পেরেছেন। তাঁর এ অনুভূতির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রথম পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠানে। সেদিন জাতির জনকের ভাষণ আজও প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেছিলেন, ‘মনে রাখবেন, আপনাদের মানুষ যেন ভয় না করে। আপনাদের যেন মানুষ ভালোবাসে। আপনারা জানেন, অনেক দেশে পুলিশকে মানুষ শ্রদ্ধা করে। আপনারা শ্রদ্ধা অর্জন করতে শিখুন।’ তিনি বলেছিলেন, ‘আজ থেকে শুরু হোক আপনাদের নতুন জীবন। এই পুলিশ সপ্তাহ থেকে আপনারা নতুন মনোভাব নিয়ে কাজ শুরু করুন, যাতে বাংলাদেশের পুলিশ দুনিয়ার বুকে গর্বের বস্তু হয়ে উঠতে পারে। এটিই আমি চাই আপনাদের কাছে। আপনাদের জন্য আমার সহানুভূতি আছে। আপনারা জানেন, আপনাদের আমি ভালোবাসি। আপনাদের জন্য চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করেও আমি ক্লান্তিবোধ করি না। কিন্তু আমি চাই, আপনারা মানুষকে ভালোবাসুন। তা হলেই শান্তি আসবে।’ জাতির পিতা বাংলাদেশ পুলিশের শুরুর দিকটাও ভোলেননি। তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে আছে যেদিন আমি জেল থেকে বের হয়ে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের বুকে ফিরে আসি, সেদিন দেখেছিলাম আমাদের পুলিশ বাহিনীর না আছে কাপড়, না আছে জামা, না কিছু। অনেককে আমি ডিউটি করতে দেখেছি লুঙ্গি পরে। একদিন রাতে তারা আমার বাড়ি গিয়েছিল। তাদের পরনে ছিল লুঙ্গি, গায়ে জামা, হাতে বন্দুক।’

বলা বাহুল, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ এবং জাতির পিতা পুলিশ নিয়ে যেভাবে ভেবেছেন তার প্রতিফলন আসলে ঘটেনি। বরং প্রায়ই এ বাহিনীর জন্মকালীন প্রবণতা প্রকটভাবে দৃশ্যমান হয় সাধারণের কাছে। উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলে পুলিশ বাহিনী গঠিত হয়েছিল ভারতে ব্রিটিশ দখল টিকিয়ে রাখার জন্য। ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন ঔপনিবেশিক শাসনের জন্য উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছিল। ঔপনিবেশিক পুলিশ ছিল অধিকাংশ ক্ষেত্রে জনবিরোধী। স্বভাবতই তখন পুলিশের প্রতি মানুষের ক্ষোভ ছিল, ছিল ঘৃণা। ১৯২৪ সালে ব্রিটিশ সরকার জারিকৃত ‘বেঙ্গল ক্রিমিন্যাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট অর্ডিন্যান্স’-এর আওতায় এ অঞ্চলের পুলিশ বাহিনী জনগণের দৃষ্টিতে গণবিরোধী ভয়ংকর দানবীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। যার ধারাবাহিকতা কমবেশি অব্যাহত ছিল পাকিস্তান শাসনের পুরো আমল। কিন্তু ’৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে সেই পুলিশই অন্যরূপে ধরা দেয় বাংলাদেশের মাটিতে। এর সূচনা প্রসঙ্গে জাতির পিতা যথার্থই বলেছেন, ‘যতদিন বাংলার স্বাধীনতা থাকবে, ততদিন বাংলার মানুষ থাকবে, ততদিন এই রাজারবাগের ইতিহাস লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। ২৫ মার্চ রাতে যখন ইয়াহিয়া খানের সৈন্যবাহিনী বাংলাদেশের মানুষকে আক্রমণ করে, তখন তারা চারটি জায়গা বেছে নিয়ে তার ওপর আক্রমণ চালায়। সেই জায়গা চারটি হচ্ছে রাজারবাগ, পিলখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর আমার বাড়ি। একই সময়ে তারা এ চার জায়গায় আক্রমণ চালায়। রাজারবাগের পুলিশ সেদিন সামান্য অস্ত্র নিয়ে বীরবিক্রমে সেই সামরিক বাহিনীর মোকাবিলা করেন। কয়েক ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধ করেন। তারা এগিয়ে আসেন বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করতে।’

বাংলাদেশের ইতিহাসে ২৫ মার্চ রাতে রাজারবাগ পুলিশ বাহিনীর ঘটনা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এ কথা যেমন বাস্তব তেমনই সত্য, স্বাধীন বাংলাদেশে পুলিশের অনেক ঘটনা আছে যা জনমনে অন্যভাবে লেখা হয়। যেসব ঘটনা পুলিশ প্রসঙ্গে জনক্ষোভের উপাখ্যান তৈরি করেছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এ দিকটি নিয়েই কেবল আলোচনা-সমালোচনা হয়। কিন্তু সমস্যার গভীরে যাওয়ার একাগ্র চেষ্টা ততটা হয় বলে মনে হয় না। যেমন বৃক্ষের সমস্যার দিকে নজর দেওয়ার বদলে ফুলের পোকা আর ফলের পুষ্টিগুণ নিয়ে চায়ের কাপে ঝড়। এ বিভ্রমে আক্রান্ত না হয়ে প্রয়োজন পুলিশের সমস্যা দূর করার চেষ্টা করা। সবাই জানে, পুলিশের অভ্যন্তরে অনেক সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান হচ্ছে বিভিন্ন স্তরের মধ্যে বৈষম্য। আর পুলিশের নিচের দিকে বেতন কাঠামো বিবেচনায় নিলে মনে হতে পারে, তারা সবাই সন্ন্যাসী! তাদের দুই বেলা দুই মুঠো শাকান্ন জুটলেই হয়। তাদের স্ত্রী-কন্যার কোনো চাহিদা নেই। সন্তানদের লেখাপড়ার বালাই নেই। পুলিশ হাসপাতালে গেলে দেখা যাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত পুলিশের সংখ্যা কত! আবার হাসপাতালের সুরম্য ভবন দেখে মনে করা ঠিক হবে না, পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসা খুবই সরেস। এখানেই শেষ নয়। অধিক সময় দায়িত্ব পালনসহ নানান কারণে পুলিশের একটি বিরাট অংশ মানসিক বৈকল্যে ভোগে। যার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে। প্রাপ্ত এক পরিসংখ্যানমতে, ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল এ তিন বছরে বাংলাদেশ পুলিশের মোট ১৮ জন সদস্য আত্মহত্যা করেছেন। এরা সবাই কনস্টেবল ও এসআই পদমর্যাদার। তার মানে, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আত্মহত্যা করছেন না, করছেন নিম্নপদস্থরা। কিন্তু কেন? এ রকমের প্রশ্ন আছে সোর্স মানি নিয়েও। এ টাকার কোনো অডিটবিধান নেই। কারণ এ টাকা দেওয়া হয় অপরাধ সম্পর্কে নানান তথ্য সংগ্রহণের জন্য সোর্সের পেছনে ব্যয় করার জন্য। কিন্তু এ টাকার সিংহভাগ কী করা হয় তা ওপেন সিক্রেট। আরও কিছু টাকা বরাদ্দ আছে। ব্যাখ্যা হচ্ছে, যেহেতু সরকারি কাঠামোয় বেতন বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না সেহেতু এ গোঁজামিলের ব্যবস্থা। উত্তম! কিন্তু এ থেকে নিচের দিকের পুলিশ বঞ্চিত হবে কেন? তাহলে কি অঘোষিতভাবে ধরেই নেওয়া হয়, নিচের পুলিশের অন্যরকম ইনকাম আছে? শোনা যায়, এ ইনকাম কেবল নিজের ভোগের জন্য নয়, ওপরের দিকে নজরানা দেওয়ার জন্যও করতে হয়! আর পুলিশকেও নাকি অভ্যন্তরীণ কাজের জন্য পদে পদে টাকা দিতে হয়। এর বাইরেও বৈষম্যের শিকার হয় পুলিশ। বিশেষ করে পদোন্নতি। নিচ থেকে ওপর, যেন জগদ্দল পাথরে চাপা পড়ে আছে।

বিরাজমান ধারায় পুলিশকেন্দ্রিক জনপ্রত্যাশা পূরণের আশা কি দুরাশা নয়? ভাবা প্রয়োজন! পুলিশকে আপন ভেবে ভাবলে স্পষ্ট হবে, জনরক্ষার এ বাহিনীর যা কিছু সমস্যা তার মূলে রয়েছে যুগে যুগে শাসক শ্রেণির ইচ্ছাপূরণের ‘ভাইরাস’। যে কারণে মেধা-মনন-দক্ষতা-সততার বদলে প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘আমার লোক’/‘আমাদের লোক’ কালচারের বিভ্রান্তি। এ ধারায় কেবল নিচের দিকে নয়, পুলিশের ওপরের দিকের নেতৃত্বেরও বারোটা বেজেছে। এ ক্ষেত্রে সনাতনী প্রবচনের অবস্থাও হয়েছে উল্টে যাওয়া প্রবচনের মতো। প্রচলিত প্রবচন, মাছের পচন শুরু হয় মাথায়। কিন্তু পুলিশের বেলায় উল্টো হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। মনে করা হয়, পুলিশের পচন লেজ থেকে মাথায় উঠে গেছে মারাত্মকভাবে। ফলে বাস্তবতা এই, ‘সর্বাঙ্গে ঘা, মলম দেব কোথা!’ তবু পুলিশ নিয়ে ভাবতে হবে, বৃক্ষ হিসেবে।  

লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর