বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিডনির চিঠি

মেজর নাসির উদ্দিন আহমেদ (অব.) পিএইচডি

সিডনির চিঠি

প্রিয় পাঠক, যখন এই লেখাটি পড়ছেন, ততক্ষণে হয়তো আমি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে তিন সপ্তাহের স্বপ্নিল ভ্রমণ শেষে দেশের পথে। একমাত্র কন্যা, নিকটাত্মীয়, স্কুল ও কলেজ জীবনের বন্ধু আর একঝাঁক প্রাক্তন সেনা ও নৌ-কর্মকর্তার আন্তরিকতায় কখন যে দিনগুলো ফুরিয়ে গেল, বুঝতেই পারিনি। তবে বুঝতে পেরেছি সুযোগ পেলে কত কিছু করার সক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং সব হারিয়েও ঘুরে দাঁড়ানোর পরম্পরা পূর্বপুরুষদের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রেই আমরা পেয়ে থাকি। আর তারই পরিপূর্ণ প্রতিফলন যেন সিডনির ঘরে দুয়ারে। বর্ণাঢ্য কর্মজীবন, দীর্ঘদিনের সুখের সংসার কিংবা নিকটাত্মীয়দের ছেড়ে দুটি সুটকেস নিয়ে একদা যারা সিডনিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন, আজ তারা সবাই যেন সাফল্যের একেকটি জীবনালেখ্য।

সিডনির পথে-প্রান্তরে বাংলাদেশিদের দেখেছি ভিন্নভাবে। স্ত্রীদের পাশাপাশি প্রতিটি স্বামী ঘর-সংসার ও সন্তানদের দেখভাল করেন সমানতালে। পুরুষতান্ত্রিক দাম্ভিকতা কিংবা স্ত্রীর ওপর পৌরষত্ব জাহিরের খোলস ছেড়ে বিদেশে তারা বেঁধেছেন মায়ার সংসার। স্ত্রীরাও প্রত্যেকে কিছু না কিছু করছেন এখানে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুবিধা, কোনো কাজকেই কেউ ছোট করে দেখে না। আমার বিদ্যাপীঠ রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের প্রায় অর্ধশত প্রাক্তন ক্যাডেটের বসবাস এই সিডনি ও তার আশপাশে। দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি আর রাজার জন্মদিন উপলক্ষে আরও এক দিন- এই তিন দিনের ছুটিতে পুনর্মিলনী হলো সমুদ্রতীরে উলংগং নামক পর্যটন শহরে। এখানে রাজার জন্মদিন উপলক্ষে সাপ্তাহিক ছুটির আগে বা পরে এক দিন ছুটি পালন করা হয়, কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখে নয়। ছুটিতে উচ্চশিক্ষায় ব্যস্ত একজন পিকআপ নিয়ে চলে এলেন। পুনর্মিলনী আয়োজনের সব সরঞ্জাম, খাবার, পানীয় ইত্যাদি বহন করতে টাকার বিনিময়ে তিনি নির্দ্বিধায় সেবা দিলেন এবং প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে নামিয়ে দিলেন। সেখানে আরও পেলাম আমার জেলা কুমিল্লার এক ছাত্রকে। ইংরেজিতে পড়ছে সে। অথচ ঘণ্টাভিত্তিক মজুরির বিনিময়ে তিন দিনে পুনর্মিলনীতে আসা সবার সেবা করল এই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। সেখানে কথা হলো দুজন বাংলাদেশি গৃহিণীর সঙ্গে। তারা বিভিন্ন দেশের নারী-পুরুষকে গাড়ি চালানো প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। এভাবেই খুলেছেন ড্রাইভিং স্কুল। আরও দুজন নিজ বাসায়ই দুটি কক্ষে খুলেছেন দুটি বুটিক শপ। দেশ-বিদেশের কাপড়-চোপড় মূলত অনলাইনে বিক্রি করেন তারা। চারজনেরই আবার নির্দিষ্ট চাকরিও রয়েছে। মূলত একজনের আয়ে সিডনিতে চলা প্রায় অসম্ভব। এখানে একটি শিঙ্গাড়া খেতে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৫৫ টাকা এবং একটি পিঁয়াজু খেতে প্রায় ৭৮ টাকা গুনতে হয়। শিশুদের লালন-পালন, যত্ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর প্রশিক্ষণ নিলেও মেলে আকর্ষণীয় চাকরি বা ঘরে বসে উপার্জনের উপায়। তবে প্রশিক্ষণ না নিয়ে অন্যের বাচ্চা দেখভালের আইনত সুযোগ নেই। যে কোনো কিছু করার ক্ষেত্রেই একটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মূলত নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে সম্যক ধারণা দেওয়াই তাদের মূল উদ্দেশ্য।

নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তথাকথিত সভ্য সমাজে নারী-পুরুষের বেহায়াপনা কিংবা শিশুদের একাকিত্বের বিচ্ছিন্ন ঘটনার বিপরীতে দেখেছি শিশুবান্ধব এক ভিন্ন জগৎ। ‘স্কুল জোন’ চিহ্নিত রাস্তায় অতি সাবধানে গাড়ি চালান সবাই। প্রতিটি স্কুলে রয়েছে একাধিক খেলার মাঠ, বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বিশাল শেড, বক্সিং রিং, শিশু পার্কের আদলে খেলনা ইত্যাদি। প্রতিটি খেলার মাঠে যেন সবুজ ঘাসের কার্পেট বিছানো। স্কুলের চারদিকে গাছে গাছে ফুল আর ফলের সমারোহ। ফুলের বাহারি রং আর শিক্ষাঙ্গনের দালানকোঠা ও দেয়ালের উজ্জ্বল রং রঙিন করে তোলে শিশুদের মনোজগৎ। তাদের আঁকা ছবি ও রঙের ব্যবহার দেখে অঙ্কন শিক্ষক ও স্কুলের নিজস্ব মনোবিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন শিশুর ভিতরের জগৎটাকে। আর তা যথাযথভাবে জানিয়ে দেন অভিভাবককে। কখনো অভিভাবকদের অবহেলা পরিলক্ষিত হলে তা রাষ্ট্রের নজরে আনে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এভাবে প্রতিটি শিশুকে উপযুক্ত মানবসম্পদে পরিণত করতে বদ্ধপরিকর বৃহৎ ভূখণ্ডের বিপরীতে স্বল্প জনসংখ্যার দেশ অস্ট্রেলিয়া। একজন মা তার শিশুর অসুস্থতার খবর কর্মস্থলে জানানো মাত্র ছুটি মঞ্জুর হয়ে যায় এবং তার নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া হয়। মায়ের কাজের চাপে শিশুর অযত্ন বা অসুস্থতার ঘটনা মানতে নারাজ রাষ্ট্রব্যবস্থা। নারী, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণদের জন্য এ যেন এক স্বর্গরাজ্য। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সবাই সর্বোচ্চ সম্মান নিয়ে কাজ করেন। অনাকাক্সিক্ষত কিছু ঘটলে রাগ দেখানো বা বকাঝকার বিপরীতে তাকে পেশাদারিত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। সংশোধন না হলে বা নির্দিষ্ট কাজের জন্য উপযুক্ত না হলে অন্য ধরনের কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাই চাকরি হারানোর ভয়ে কেউ মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করেন না বা কাউকে কোনো অন্যায় আবদার সহ্য করতে হয় না। এ দেশে কাজের মাঝেই আনন্দ খোঁজেন প্রবীণরা, অবসরে নয়। বয়স অনুপাতে হালকা কাজ করেন বিনা লাজে। বেশ কয়েকজন প্রবীণকে দেখেছি যারা জনসমাগমের স্থানে ঘুরে বেড়ান ও ময়লা কিছু দেখলে ক্লিপ দিয়ে ধরে ব্যাগে ভরেন। অনেকেই একসময় হয়তো উচ্চপদে ছিলেন, এখন এই হালকা কাজের মধ্য দিয়ে নিজেকে কর্মক্ষম ভাবেন, যা তার মন ও শরীরকে ভালো রাখে। বাস, মেট্রো ট্রেন, অফিস-আদালত ও বিপণিবিতানে ব্যাটারিচালিত হুইলচেয়ারে বসে অনায়াসে বিচরণ করতে পারেন একজন প্রতিবন্ধী। এক দিন কয়েক সেকেন্ডের জন্য একটি বাস আমাকে ফেলেই চলে যায়। পরের বাসের জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় হাজির ব্যাটারিচালিত হুইলচেয়ারে বসা একজন প্রতিবন্ধী। পরম মমতায় তাকে লাইনের সামনে স্থান দিল সবাই। সেকেন্ডের কাঁটা মেপে নির্দিষ্ট সময়ে বাস এসে থামল। এ দেশে বাস বা ট্রেনের পাদানি বা উচ্চতা সব সময় ফুটপাত বা প্ল্যাটফরমের সমান্তরাল থাকে, যাতে কারও সাহায্য ছাড়াই একজন প্রতিবন্ধী বাস বা ট্রেনে উঠতে পারেন। তারপরও বাসের স্মার্টচালক নেমে এলেন এবং বাসের দরজার পাশে থাকা একটি পাটাতন এমনভাবে বিছিয়ে দিলেন, যেন কোনো ঝাঁকুনি ছাড়াই হুইলচেয়ার নিয়ে সেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তি একক প্রচেষ্টায় নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে পারেন এবং সিটের হাতলের সঙ্গে হুইলচেয়ার লক করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন। ট্রেনে ওঠার সময়ও এক দিন এমনটা প্রত্যক্ষ করেছি।

অন্যান্য রুচিবোধ আর পশু-পাখি ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা নিয়ে বেড়ে ওঠে এ দেশের শিশুরা। ভিন্ন দেশের কোনো বীজ, মাটি বা লতাগুল্ম নিয়ে এ দেশে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ। আবার সরকারিভাবে এই বিশাল দেশের যে স্থান যে গাছ বা ফুল-ফলের জন্য উপযুক্ত, তা-ই রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফলে অস্ট্রেলিয়া চারদিকে ফুল-ফলের সমারোহ থাকে বছরজুড়ে। বিশেষত বনে-জঙ্গলে নিজ থেকে বা অযত্নে ফোটা ফুল বা দৃষ্টিনন্দন পাতাবিশিষ্ট গাছ সরকারিভাবে রোপণ ও বণ্টন করা হয়। বাড়ির সামনে ও পেছনে ফুল এবং সবুজ অংশ থাকবে না, এমনটা যেন চিন্তাও করতে পারেন না অস্ট্রেলিয়া নাগরিকরা। প্রতিটি বাড়ির পেছনে ব্যাকইয়ার্ড বা সবুজ চত্বরে পশু-পাখি, ফুল-ফলের যত্নের মধ্য দিয়ে অবচেতন মনে শিশুরা পশু ও প্রকৃতিপ্রেমী হয়ে ওঠে। তাদের মাঝে জাগ্রত হয় অনন্য রুচিবোধ। বারবিকিউ এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এসব ব্যাকইয়ার্ডে ছুটি উপভোগ এ দেশের অন্যতম সংস্কৃতি। এত সুখ-সমৃদ্ধির মধ্যে একমাত্র আতঙ্ক হলো জরিমানা। প্রতিবেশীর অসুবিধা, বাড়ির চারপাশে আগাছা জন্মানো, রাস্তাঘাট ময়লা করা বা ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে গুনতে হয় মোটা অঙ্কের জরিমানা।

প্রবীণদের স্বেচ্ছাশ্রম এবং ছাত্রছাত্রীদের অবাধে কাজ করার সুযোগ রয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। স্কুলের সামনে প্রবীণরা গায়ে উজ্জ্বল বর্ণের সেফটি জ্যাকেট চাপিয়ে শিশুদের রাস্তা পারাপার ও সুশৃঙ্খলভাবে স্কুলে প্রবেশের ক্ষেত্রে সহায়তা করেন বিনা পারিশ্রমিকে। সেভ দ্য চিলড্রেন ও অন্যান্য বহু ফাউন্ডেশনের অসংখ্য দোকান রয়েছে সিডনিতে। এসব দোকানে নতুন-পুরনো যে কোনো পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপড়, বই, গৃহসামগ্রী ও অন্যান্য দ্রব্য গ্রহণ, সাজানো, বিক্রি ও প্যাকিং করার কাজ বিনা পারিশ্রমিকে করেন প্রবীণ ও তরুণ ছাত্রছাত্রীরা এক হয়ে। কফি শপ, পর্যটন কেন্দ্র কিংবা বিনোদন কেন্দ্রে ১৮ বছরের নিচের বয়সী ছাত্রছাত্রীরাও কাজ করে। দেশ-বিদেশের হাজার জনের সঙ্গে কথা বলে ও তাদের গাইড করে পরিপূর্ণ হয় তাদের অভিজ্ঞতার ঝুলি। ফলে শিক্ষাঙ্গনে কোনো বক্তব্য উপস্থাপন বা চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার প্রদানের সময় তাদের মাঝে কোনো জড়তা থাকে না। এমন অভিজ্ঞতাই তাদের ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্র নির্বাচন বা উপযুক্ত স্থানে নিয়োগ পেতে সহায়তা করে। আবার কিছু অর্থ উপার্জন তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় এবং নিজ খরচে নতুন কিছু করার বা নতুন কিছু দেখার সক্ষমতা প্রদান করে, যা বেশ ভালোই উপভোগ করে অস্ট্রেলিয়ার ছাত্রছাত্রীরা।

সিডনিতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি থাকেন ল্যাকেম্বা নামক স্থানে। পুরো সিডনিতে জালের মতো বিছানো হয়েছে রেললাইন। ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্যবহার করে মিনিট গুনে বলা যায় কে কখন কোথায় পৌঁছবেন। নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ট্রেনে চেপেই ল্যাকেম্বা গেলাম। দেশি স্বাদের সব খাবারই পাওয়া যায় এখানে। দেশের তরি-তরকারি, মাছ-গোস্ত সবই আছে। বাংলাদেশি বহু নারী ও তরুণী হাসিমুখে কাজ করেন বিভিন্ন বিপণি কেন্দ্রে। ঘরে তৈরি পিঠা-পুলি, মিষ্টি দই, নাড়ু, আচার গৃহিণীরা রেখে যান এসব দোকানে। বিক্রির পর টাকার লেনদেন হয়। কান পাতলে এখানেও শোনা যায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের আলাপ। বাংলাদেশি শিল্পীদের নাচ-গানের অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বা পোস্টার এবং কিছু রাজনৈতিক নেতার ছবিসহ ছোট ছোট পোস্টারও নজরে পড়ল। এ দেশের একজন সংসদ সদস্যের কার্যালয়ও আছে এখানে। অন্যান্য স্থানেও দেখেছি এমন বহু সংসদ সদস্যের কার্যালয়। কোনো ভিড়ভাট্টা নেই, তদবির নেই। জাতীয় স্বার্থে সংসদে স্থানীয়দের পক্ষে কী বলা উচিত- এমন পরামর্শই এখানে মুখ্য। কাউন্সিল নামক শক্তিশালী স্থানীয় প্রশাসনই জনগণের সব অভাব-অভিযোগ এবং সুবিধা-অসুবিধার বিষয়ে লক্ষ্য রাখেন। আমাদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মাঝে অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সংসদের পাঁচজন এমপি বা সংসদ সদস্য যোগ দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন ‘শ্যাডো প্রাইম মিনিস্টার’ বা বিরোধীদলীয় নেত্রী। ভদ্রমহিলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় সবার সঙ্গে নাচলেন। অনুষ্ঠান শেষে সবার মতো পাঁচজন এমপি বা সংসদ সদস্য লাইন ধরলেন খাবার সংগ্রহের জন্য। আমার পেছনে থাকা একজন এমপিকে সৌজন্যবশত সামনে আসতে অনুরোধ করলাম। বিনয়ের সঙ্গে তিনি আমার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলেন। আমার কাণ্ডকলাপ দেখে হাসলেন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ক্যাডেট কলেজ জীবনের বন্ধুটি। বললেন, এ দেশের রাজনীতিবিদরা অন্যের চেয়ে বেশি কোনো সুযোগ সুবিধা নেবেন, এমনটা ভাবতেও পারেন না। তিনি লাইন ভেঙে খাবার সংগ্রহ করেছেন- এটাই হয়তো পরবর্তী নির্বাচনে তাকে ডোবাবে। কিংবা মিডিয়া হয়তো এই খবরটিকে ব্যাংগ করে প্রকাশ করবে। আরও বললেন, দেশের আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আচমকা ফুটপাতে হাঁটতে হাঁটতে গল্প করা, ট্রাফিক আইন ভঙ্গের দায়ে প্রধান বিচারপতির পদ হারানো ও জরিমানা প্রদান এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর লাইন ধরে কফি শপ থেকে কফি কেনার কথা। আমাদের দেশের রাজনীতিতে এমন সভ্যতা প্রত্যাশা করেই দেশের পথে যাত্রা করব। তবে জানি না দেশে ফিরে কী দেখব। ট্রেনে করেই ঘরে ফেরার পথ ধরলাম। মোবাইল ফোনে দেশের খবর পড়ছিলাম, যার একটি ১৯ হাজার টাকা লিফটিং জ্যাক প্রায় ১৫ গুণ বেশি দিয়ে অর্থাৎ ৩ লাখ টাকায় কিনেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আরেক খবর ১৬৫ টাকার তালা ৫৫৯০ টাকায় ক্রয়সহ বিভিন্নভাবে রেলওয়ের ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে উধাও রেলওয়ের জনৈক কন্ট্রোলার অব স্টোরস (সিওএস) বেলাল হোসেন। তবে লাল দালানের বদলে বেলালের ঠিকানা এখন কানাডায়। দেশের নিরীহ মানুষের লাল রক্ত চোষা এমন কত বেলাল অস্ট্রেলিয়ায় আছে কে জানে?

লেখক : গবেষক, বিশ্লেষক ও কলামিস্ট

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর