শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করা থেকে বিরত হই

মো. আমিনুল ইসলাম

শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করা থেকে বিরত হই

আরবি ভাষায় শয়তান মানে সীমা লংঘনকারী, দাম্ভিক ও স্বৈরাচারী। শয়তানকে ইবলিশ বলার কারণ হলো হতাশা ও নিরাশার ফলে তার অহমিকা প্রবল উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং সে সব ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। শয়তানকে পবিত্র কোরআনের সুরা নাসে ‘খান্নাস’ও বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমি ফেরেশতাদের বলেছিলাম তোমরা সবাই আদমকে সিজদা করো, তখন তারা সবাই সেজদা করল, কিন্তু ইবলিশ ছাড়া। সে ছিল জিনদেরই একজন। সে তার মালিকের আদেশের নাফরমানি করল’ (সুরা আল কাহাফ-৫০)। এই আয়াতে স্পষ্ট হয়ে গেল শয়তান হলো অহংকারী, অবাধ্য এক জিন। সে আল্লাহর আদেশের নাফরমানি করার কারণে তাকে জান্নাত থেকে বিতাড়িত করা হলো। এরপর সে দুনিয়ার জীবনে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু হয়ে দাঁড়ালো এবং তাকে বিভ্রান্ত করে পাপের পথে পরিচালিত করতে সচেষ্ট হলো। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ, তোমরা যারা ইমান এনেছ, কখনো শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। তোমাদের মধ্যে যে কেউই শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সে যেন জেনে রাখে, অভিশপ্ত শয়তান তো তাকে অশ্লীলতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ দিবে’ (সুরা আন নূর-২১)। ‘হে মানুষ, তোমরা আল্লাহর জমিনে যা কিছু হালাল ও পবিত্র জিনিস আছে তা খাও এবং কোনো অবস্থায়ই হালাল হারামের ব্যাপারে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। অবশ্যই সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন’ (সুরা বাকারা-১৬৮)। ‘শয়তানের কাজ হচ্ছে, সে তোমাদের সব সময় পাপ ও অশ্লীল কাজের আদেশ দেবে এবং সে চাইবে যেন আল্লাহতায়ালার নামে তোমরা এমন সব কথা বলতে শুরু করো যে সম্পর্কে তোমরা কিছুই জানো না’ (সুরা বাকারা-১৬৯)। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘আমি আমার বান্দাকে যে সম্পদ দিয়েছি তা বৈধ। আর আমি আমার সব বান্দাকেই একনিষ্ঠ দীনের ওপর সৃষ্টি করেছি। তারপর তাদের কাছে শয়তানরা এসে তাদের দীন থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় এবং তাদের ওপর তা হারাম করে দেয় যা আমি তাদের জন্য হালাল করেছিলাম’ (মুসলিম শরিফ)। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আদম সন্তানের অন্তরে একাধারে শয়তানি প্রভাব এবং ফেরেশতার প্রভাব বিদ্যমান থাকে’ (মুস্তাদরাকে হাকিম)। শয়তানি ওয়াসওয়াসার প্রভাবে অসৎ কাজের কল্যাণ এবং উপকারিতাগুলো সামনে এসে উপস্থিত হয় এবং তাতে সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার পথগুলো উন্মুক্ত হয়। বিপরীতে ফেরেশতাদের ইলহামের প্রভাবে সৎ ও নেক কাজের জন্য আল্লাহতায়ালা যে কল্যাণ ও পুরস্কার দানের ওয়াদা করেছেন সেগুলোর জন্য আগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং সত্য ও সঠিক পথে চলতে গিয়ে অন্তরে শান্তি লাভ হয় (সহিহ ইবনে হিব্বান)। ব্যভিচার, অশ্লীলতা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও গুনাহের কাজ। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেও না। অবশ্যই এটা অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট পন্থা। তারপরও আমরা শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে প্রতিনিয়ত এই অশ্লীলতার মধ্যে ডুবে আছি। অন্যায়, ব্যভিচার করে যাচ্ছি। শয়তানের মূল কাজ হলো মানুষের সঙ্গে শত্রুতা করা। তাদের যে কোনো মূল্যে জাহান্নামের অধিবাসী করা। শয়তান সব সময় মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দেয়। মানুষকে খারাপ পথে পরিচালিত করার জন্য সচেষ্ট থাকে। শয়তানের অন্যতম কাজ হলো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। মানুষের মধ্যে শত্রুতা তৈরি করা। সে জন্য শয়তান মানুষের মনে আল্লাহর ভয়কে ভুলিয়ে দেয়। শয়তান মানুষকে দরিদ্রতার ভয় দেখায়। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে মানুষ যখন অসচেতন হয় তখনই শয়তান তাকে ধোঁকা দেয়, আর যখনই সে সতর্ক হয় ও আল্লাহকে স্মরণ করে তখনই শয়তান পিছিয়ে যায়। তাকে আর ধোঁকা বা বিভ্রান্ত করতে পারে না। আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তানরা, আমি কি তোমাদের বলি নাই, তোমরা শয়তানের ইবাদত করো না। অবশ্যই সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন’ (সুরা ইয়াসিন-৬০)। ইবাদত করার অর্থ হলো আনুগত্য করা। শয়তান আল্লাহর আনুগত্য অস্বীকার করার জন্য জান্নাত থেকে বিতাড়িত হয়েছে। সুতরাং সেই শয়তানের আনুগত্য করা মানুষের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। শয়তান প্রতিনিয়ত আমাদের প্ররোচিত করে খারাপ ও নিষিদ্ধ কাজগুলো করতে এবং উৎসাহিত করে কোরআনের ‘নিষেধ’ মেনে চলতে। ফলে আমরা পাপে নিমজ্জিত হই। অথচ এই শয়তানই কেয়ামতের ময়দানে আমাদের বিপক্ষে কথা বলবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যখন বিচার ফয়সালা হয়ে যাবে তখন শয়তান বলবে, আল্লাহতায়ালা তোমাদের সঙ্গে যে ওয়াদা করেছেন তা সত্য ওয়াদা। আমিও তোমাদের সঙ্গে ওয়াদা করেছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদের সঙ্গে ওয়াদার বরখেলাপ করেছি। ...আমি যেমন তোমাদের উদ্ধারে কোনো রকম সাহায্য করতে পারব না, তেমনি তোমরাও আমার উদ্ধারে কোনো সাহায্য করতে পারবে না’ (সুরা ইবরাহিম-২২)। এই আয়াতে এটাই স্পষ্ট হয়ে গেল দুনিয়ার জীবনে শয়তান আমাদের পথভ্রষ্ট করার জন্য যা কিছু করেছে তা সব ছিল নিছক ধাপ্পাবাজি আর প্রতারণা। শয়তানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মানুষ জাহান্নামি হয়েছে। সৎকাজের মোকাবিলায় অসৎ কাজ করার জন্য শয়তান উৎসাহিত করেছে। আর মানুষ কোরআন হাদিসের আলোকে জীবন পরিচালিত না করে শয়তানের কথা শুনে আজ জাহান্নামি। সুতরাং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করা থেকে বিরত হওয়ার পাশাপাশি এখনই আমরা সচেতন হই। তা না হলে পরকালের জীবনে আমাদের পাপের কারণে জাহান্নামি হতে হবে। আমাদের গুনাহর দায়ভার আমাদেরই বহন করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে নিরাপদ থাকার তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর