সোমবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সাত দিন পার হলেও দেখা মিলল না বিপ্লবের!

সোহেল সানি

সাত দিন পার হলেও দেখা মিলল না বিপ্লবের!

সাত দিন পার হলেও দেখা মিলল না বিপ্লবের! বিভিন্ন ব্যক্তি ও বিশেষ মহল থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছিল যে, আগামী সাত দিনের মধ্যে দেশে এক বিপ্লব সংঘটিত হয়ে যাবে। বয়ে যাবে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এক বিপজ্জনক অর্থনৈতিক ঘূর্ণাবর্ত। সরকারের ওপর এখন ত্রিমুখী আক্রমণ হতে যাচ্ছে- এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি অক্টোবর মাসেই সরকার পতনের চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করে ফেলেছে মর্মেও খবর ছিল। ব্যক্তিবিশেষ থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছিল যে, সরকারের ওপর একের পর এক চাপের পর এবার নতুন মার্কিন নীতি হবে সরকার পতনের। এ জন্য অনেকে কলমের কালিও খরচ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা অর্থনৈতিক মহলের ওপর নির্ভরতা রেখেই এই বার্তা দেশের আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। গুজববিরোধী মহল এটাকে তুড়ি মেড়ে উড়িয়ে দিলেও গুজবধারীদের ওই বার্তা দেশবাসীর মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পাশাপাশি এক ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। দেশে ক্ষমতাসীনদের নতজানু করতে এমনকি উৎখাতের প্রশ্নে একটা বিপ্লবই সংঘটিত হয়ে যাবে বলে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক মোড়লরা কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন বলেও দাবি করা হচ্ছিল, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে কিছুই ঘটেনি। অনুমাননির্ভর তথ্য-উপাত্ত হাজির করে বলা হচ্ছিল, দুর্নীতি এবং অর্থ পাচার সংক্রান্ত অভিযোগ তুলে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে। কিন্তু তেমনটি ঘটেনি। আরও বলা হচ্ছিল, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যতই নাজুক হতে থাকবে, রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ততই উত্তপ্ত হবে এবং তার আয়োজন সেভাবেই বিন্যাস করা হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এদিকে দেশের আপাতদৃষ্ট ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জনমনে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও ফুরফুরে মেজাজেই রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিত্যনতুন গুজব-গুঞ্জন রাজনীতির গতি-প্রকৃতিকে মনস্তাত্ত্বিক ধাক্কা দিলেও একেবারে নড়বড়ে করে দিতে পারছে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বর্তমান অবস্থাকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বলতে নারাজ, বরং এটাকে নির্বাচনী উত্তাপময় পরিস্থিতি হিসেবেই দেখছে। আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশের গোটা পরিস্থিতিই নির্বাচনমুখী হয়ে উঠবে বলেও মনে করছে আওয়ামী লীগ। সরকারের কৌশলী ব্যবস্থায় মার্কিন ভিসানীতি যেমন কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে, ঠিক তেমনি আসন্ন  নির্বাচন প্রশ্নেও মার্কিন নীতির পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। অর্থাৎ ব্যবসায়ী মহলের ওপর কোনো প্রকার আঘাত আসছে না। প্রসঙ্গত, ব্যক্তিবিশেষ আশঙ্কা করছিলেন যে, মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ দেওয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশের বাজারে দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে বাধ্য। তখন সাধারণ মানুষ এ নিয়ে সরকারকে দোষারোপ করা শুরু করবে, যার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া পড়বে আগামী নির্বাচনে। এও বলা হচ্ছিল, যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতি অনুসরণের আরেকটি পদক্ষেপ ঘটতে পারে আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের ব্যাপারে। নভেম্বরে এই দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে দেওয়া হতে পারে এবং সেটা বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রসঙ্গ তুলে আর রিজার্ভ প্রসঙ্গ ও বৈদেশিক মুদ্রা পাচার বিষয়গুলোকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে। এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোনো গুজবই সত্যাসত্য হয়ে ওঠেনি। বর্তমান সরকারকে ক্রমাগত বন্ধুহীন করা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে নানা অপপ্রচারের মাধ্যমে প্রভাবিত করার চেষ্টাও সফল হচ্ছে না। আশঙ্কা যাই হোক বাস্তবতা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলকে নিরীহ কর্মসূচির বন্ধনীতে আটকে দেওয়া সম্ভবপর হচ্ছে না। সরকার দিব্যি ভালো আছে। নির্বাচন কমিশনও একটি সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর