মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নিরাপদ খাদ্য

দয়া নয় ভোক্তাদের অধিকার

জীবনধারণের জন্য মানুষ খাদ্য খায়। সে খাদ্য অনিরাপদ হলে মানুষের জীবনরক্ষা দূরের কথা, তা বিপন্ন হওয়ার বিপদ ঘটে। বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে ছিল খাদ্য ঘাটতির দেশ। মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খানের আমলে টাকায় যখন আট মণ চাল পাওয়া যেত, তখনো দুর্ভিক্ষ আঘাত হানত এ দেশে। আর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে অবিভক্ত বাংলার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে খাদ্যাভাবে বা দুর্ভিক্ষে। পাকিস্তান আমলেও খাদ্যাভাব ছিল নিয়তির লিখন। স্বাধীনতার পর সাড়ে তিন দশক মঙ্গা ছিল সাংবার্ষিক বিষয়। দুর্ভিক্ষও আঘাত হেনেছে। সে দুর্দিনের অবসান ঘটিয়ে গত দেড় দশকে খাদ্যোৎপাদন ঈর্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রধান খাদ্যশস্য ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। সবজি উৎপাদনেও তৃতীয়, আম ও আলু উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে তৃতীয়। ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম। ছাগল উৎপাদনে চতুর্থ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী স্বাধীনতা-পরবর্তী বছরে খাদ্য উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন, সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট দানাদার শস্য চাল, গম ও ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে ৪ কোটি ৭৮ লাখ ৩৯ হাজার টন। এর মধ্যে শুধু চালের উৎপাদন ৪ কোটি ১ লাখ ৭৬ হাজার টন। অর্থাৎ কৃষিতে গত কয়েক বছরে উৎপাদনের এক নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। অনেক ফসলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের একটি। তার পরও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। আমরা যে খাদ্য খাই তা নিরাপদ কি না সে সংশয় আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এ সংশয়ের অবসানে উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত কীভাবে নিরাপদ খাদ্য দেওয়া যায় সে বিষয়ে ফলপ্রসূ উদ্যোগ নিতে হবে। আশার কথা, এ বিষয়ে সরকার বসে নেই। কাজটি চ্যালেঞ্জিং হলেও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারের গরজ চোখে পড়ার মতো। এজন্য ২০১৩ সালে সরকার নিরাপদ খাদ্য আইন ও ২০১৫ সালে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজার থেকে সংগ্রহ করে ৪৭ ধরনের খাদ্যপণ্য পরীক্ষা করে ১৫ ধরনের খাদ্যপণ্যে বিরূপ ফল পেয়েছে। একই অর্থবছরে ১৬৫টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে এবং ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। স্কুল পর্যায়ে পাঠ্যবইয়ে নিরাপদ খাদ্যবিষয়ক কনটেন্ট যুক্ত করার কার্যক্রম চলমান। নিরাপদ খাদ্য দেশবাসীর অধিকার। তা নিশ্চিত করা সরকারের কর্তব্য। আমরা আশা করব এ কর্তব্য পালনে সরকার দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ভূমিকা পালন করবে।

সর্বশেষ খবর