শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নবীজি (সা.)-এর প্রতি সৃষ্টিকুলের ভালোবাসা

মুফতি মোহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

নবীজি (সা.)-এর প্রতি সৃষ্টিকুলের ভালোবাসা

আল্লাহতায়ালা প্রিয় নবীজি (সা.)-কে ভালোবাসেন। প্রিয় নবীজি (সা.)-এর মাধ্যমে তিনি ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবনবিধান করেছেন। হেদায়েতের জন্য মানবজাতিকে দিয়েছেন আল কোরআন। পবিত্র আল কোরআন থেকে আমরা জানতে পারি, নবী করিম (সা.)-এর উম্মতের ওপর আল্লাহতায়ালার এত বড় ইহসান তথা দয়া যে, মহান আল্লাহতায়ালা নবীজিকে রহমাতুল্লিল আলামিন ঘোষণা করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, আর আমি তো আপনাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতস্বরূপ তথা রাহমাতুল্লিল আলামিন হিসেবে প্রেরণ করেছি (সুরা আম্বিয়া-১০৭)। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, নবীজি (সা.) ইমানদার ব্যক্তিদের কাছে তাদের নিজেদের জানের চেয়েও অধিক ঘনিষ্ঠ (সুরা আহজাব-৬)।

মানুষের মধ্যে মুহব্বত তথা ভালোবাসার বিষয়টি সৃষ্টিগত এবং জন্মগত বিষয়। কোনো জ্ঞানবান ব্যক্তি তার জীবনে মুহব্বতশূন্য হতে পারে না। প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতে হবে আল্লাহতায়ালাকে, তাঁর প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সা.)-কে। কেননা বোখারির তরজুমাতুল বাব হুব্বে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনাল ইমান। নবীজির প্রেম ইমানের অঙ্গ। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ ইমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তার কাছে আমি তার পিতা, সন্তান-সন্ততি এবং সব মানুষ থেকে অধিক প্রিয় হব না (বোখারি)। সৃষ্টিকুলের মধ্যে শুধু মানুষ নয় পাহাড়ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসত। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই উহুদ একটি পাহাড়। আমাদের সে ভালোবাসে আমরাও তাকে ভালোবাসি (মুসলিম)। আমরা জানি গাছ কথা বলতে পারে না; কিন্তু প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর সৃষ্টি গাছও সালাম দিয়েছে। এগুলো নবুয়তের দলিল, মুজিজা। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মক্কায় ছিলাম। আমরা তাঁর সঙ্গে মক্কার কোনো এক প্রান্তে বের হলাম। আমরা পাহাড় এবং গাছের মাঝখান অতিক্রম করছিলাম। গাছ এবং পাহাড় অতিক্রম করামাত্রই আমাদের এই বলে সালাম করেছে আসসালামু আলাইকা ইয়া রসুল আল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (জামে তিরমিজি) সুবহান আল্লাহ! নবীজির শরীরের কোনো ছায়া ছিল না। হজরত জাকওয়ান (রা.) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই চন্দ্রসূর্যের আলোয় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো ছায়া দেখা যেত না। কেননা তিনি ছিলেন নুর। মাছি তার পবিত্র দেহ মোবারক ও কাপড়ের ওপর বসত না (জুরকানি ৪র্থ খন্ড-২৪০)।

উসতুনায়ে হান্নানা নামে সৌভাগ্যবান একটি মরা খেজুর গাছের কথা আমরা জানি। মসজিদে নববিতে রসুলুল্লাহ (সা.) একটি খেজুর গাছের শুকনা কাঠের সঙ্গে হেলান দিয়ে খুতবা দিতেন। দিনে দিনে মসজিদে নববিতে মুসলমানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে পেছনের সাহাবিদের জন্য জুমার খুতবা শোনা বড়ই কষ্টকর হয়ে পড়ে। ফলে মদিনার এক আনসারি সাহাবি একটি মিম্বর তৈরি করলেন। রসুলুল্লাহ (সা.) যখন সেই নতুন মিম্বরে উঠে খুতবা দেওয়া শুরু করলেন, তখন উপস্থিত সাহাবিগণ ছোট বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পান। তখন রসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বর থেকে নেমে সেই খেজুর গাছের কাছে গিয়ে খেজুর গাছটিকে প্রশ্ন করলেন, তুমি এভাবে কান্না করছ কেন? উত্তরে সেই খেজুর গাছটি বলতে শুরু করল, হুজুর আপনি আমার ওপর হেলান দিয়ে আর কোনো দিন খুতবা দেবেন না তা আমি সহ্য করতে পারছি না। রসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বুকে জড়িয়ে সান্ত¡না দিলেন এবং জান্নাতে নবীজির (সা.) সঙ্গে থাকার সুসংবাদ দিলেন এবং উপস্থিত সাহাবিদের নির্দেশ দিলেন তাকে যেন নতুন মিম্বরের নিচে দাফন করা হয় (তিরমিজি, ইবনু মাজাহ)। অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) খেজুর গাছের গুঁড়ির সঙ্গে ভর দিয়ে জুমার খুতবা দিতেন। যখন মদিনার মসজিদে নববির মিম্বর তৈরি করা হলো খেজুরের গুঁড়িটা কাঁদতে লাগল। রসুলুল্লাহ (সা.) গাছটির কাছে গেলেন এবং তা স্পর্শ করলেন। ফলে এটা চুপ করল (জামে তিরমিজি, বোখারি)।

লেখক : ইসলামি মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ইমাম (প্রথম) ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সর্বশেষ খবর