শেখ রাসেল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান। ১৮ অক্টোবর, ১৯৬৪ সালে তার জন্ম। বার্ট্রান্ড রাসেল ছিলেন সেই সময়ের দার্শনিকদের মধ্যে অন্যতম, যিনি বিশ্বশান্তির পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করতেন। তাঁর এ শ্রদ্ধার প্রতিফলন ঘটে নিজের ছেলে রাসেলের ক্ষেত্রে। বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রিয় লেখক খ্যাতিমান দার্শনিক ও নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্ব বার্ট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে পরিবারের নতুন সদস্যের নাম রাখেন ‘রাসেল’। শেখ রাসেল একটি নিষ্পাপ শিশু, পবিত্র ফুলের মতো। সবার আদরের ছিল সে। পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাকে আদর করতেন, মায়ের আদর ছিল, ভাইবোনেরাও তাকে ভীষণ আদর করতেন, ভালোবাসতেন। রাসেল ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিল, ভাইবোনদের মধ্যে সে-ই ছিল সবার নজর কাড়ার, আদর নেওয়া আর পাওয়ার, খেলনার পুতুলের মতো, যেন সারাক্ষণই তাকে বড় ভাইবোনেরা আদর করত, টানাটানি করত। দেখতেও ছিল দারুণ ফুটফুটে, যেন বাগানের সদ্যপ্রস্ফুটিত একটা গোলাপ ফুল। ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে শেখ রাসেলের শিক্ষাজীবন শুরু হয় চার বছর বয়সে। প্রথম কিছুদিন পরিবারের কাউকে না কাউকে রাসেলকে স্কুলে দিয়ে আসতে হতো। ধীরে ধীরে সে নিজেই স্কুলের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে। পরে স্কুলে যাওয়ার জন্য সে ব্যাকুল হতো আর ধীরে ধীরে পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে উঠত। খুব অল্প সময়েই স্কুলে রাসেলের অনেক বন্ধু জুটে যায়। মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল তার এবং খুব বন্ধুবৎসল ছিল সে। তার সেই সময়ের অনেক বন্ধুবান্ধব স্মৃতিচারণা করে বলেছেন, একেবারেই নিরহংকার, নির্বিবাদী ছিল রাসেল। তাকে যে কেউ হত্যা করতে পারে, মেরে ফেলতে পারে এ কথা আমরা কেউ চিন্তাই করতে পারি না। স্কুলের শিক্ষকরাও তাকে খুব ভালোবাসতেন, স্নেহ করতেন। গৃহশিক্ষিকা গীতালি চক্রবর্তীর ভীষণ আদরের ছিল শেখ রাসেল। সবাইকে সে মাতিয়ে রাখত আর নিজে মেতে থাকত। সহপাঠীরাও তার সঙ্গে খেলত, আনন্দ করত। সবার আদরের নিষ্পাপ, নির্মল শিশু শেখ রাসেলের প্রাণ গেল ঘাতকের নির্মম আঘাতে। ঘাতকের হাত একবারও কাঁপল না। ওই নিষ্ঠুর পাষণ্ডগুলো আল্লাহকেও ভয় পেল না। কী অপরাধ ছিল রাসেলের? কেন তাকে জীবন দিতে হলো? সে তো রাজনীতি করেনি, রাজনীতি বোঝেওনি। বোঝার মতো বয়সও তার ছিল না। কিশোর অপরাধীও ছিল না। একটা প্রাণচঞ্চল ফুটফুটে ১০ বছর বয়সের নিষ্পাপ শিশু। তার তখন বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে খেলার বয়স। ছোট্ট নিষ্পাপ এই শিশুটিকে হত্যা করতে খুনিদের কি হাতগুলো একটুও কাঁপেনি? তাদের বুক থরথর করেনি? খুনিদের কি সন্তান ছিল না? বা তাদের স্বজনদের শিশু সন্তান ছিল না? ভাবতে অবাক লাগে সেই নিরপরাধ-নিষ্পাপ শিশুদের মুখ একবারও কি এই খুনিদের মনে ভেসে ওঠেনি? কি নির্দয় নিষ্ঠুর সেই খুনিরা। যুদ্ধ ক্ষেত্রেও মানবিক নীতি অনুসারে নিরপরাধ নারী ও শিশুকে হত্যা করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এটা জেনেও খুনিরা নিষ্পাপ রাসেলকে কী করে খুন করতে সাহস পেল?
মানবতাবিরোধী মানবতাহীন কিছু পশু তাকেসহ বঙ্গবন্ধুর গোটা পরিবারকে হত্যা করেছিল সেদিন। ভাগ্যক্রমে বিদেশে অবস্থান করায় দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে যান; যা ছিল মানব ইতিহাসে এক ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞ। এ হত্যাকাণ্ড কারবালার নিষ্ঠুর, নির্মম, হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ডকেও হার মানায়। সভ্য জগতে এমনটি করতে পারে কেউ? কোথাও কি আর ঘটেছে এমন হত্যাকাণ্ড; যেখানে নারী-শিশুকেও রেহাই দেয়নি ঘাতকরা?
![](/assets/archive/images/Print-Edition/2023/10.%20October/18-10-2023/BD-Pratidin_2023-10-18-14.jpg)
লেখক : প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক