শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হালাল উপার্জন উত্তম ইবাদত

মো. আমিনুল ইসলাম

হালাল উপার্জন উত্তম ইবাদত

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যেমন ফরজ ইবাদতের অংশ তেমনি হালাল উপার্জন করাও ফরজ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘সালাত আদায় সমাপ্ত হয়ে গেলে তোমরা পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর।’ (সুরা জুমার, আয়াত ১০)

হালাল উপার্জন অন্যতম ফরজ ইবাদত। হাদিস শরিফে এসেছে, রসুল (সা.) বলেন, হালাল জীবিকার সন্ধান করা নির্ধারিত ফরজগুলোর পরে বিশেষ একটি ফরজ। (বায়হাকি) সব মুসলিম নারী ও পুরুষের ওপর হালাল উপার্জন ফরজ। (জামিউল আখবার ১০৭৯) হালাল উপার্জন একটি জিহাদ। (কানযুল উম্মাল ৯২০৫)।

আমাদের মনে রাখতে হবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র। ইসলামও পবিত্র ধর্ম। সুতরাং একজন মুসলমানকে সব সময় পবিত্রতা রক্ষা করে চলতে হয়। আল্লাহ পবিত্র বস্তু ছাড়া অন্য কোনো কিছু গ্রহণ করেন না। রসুল (সা.) বলেন, হারাম অর্জন দ্বারা পুষ্ট দেহ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (মুসনাদে আহমদ)।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ তোমরা আহার কর আমি তোমাদের যে হালাল রিজিক দিয়েছি তা থেকে। আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত কর। (সুরা বাকারা, আয়াত নম্বর ১৭২)। এ আয়াতে হারাম খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং হালাল ও পবিত্র বস্তু খেতে উৎসাহিত করা হয়েছে। হারাম বস্তু খেলে ইবাদতের আগ্রহ যেমন লোপ পায় তেমনি অন্তরে সৃষ্টি হয় মন্দ অভ্যাস ও অসৎচরিত্রতা। আর হালাল উপার্জনের মাধ্যমেই আমরা হালাল খাদ্য গ্রহণ করে হারামকে বর্জন করতে পারি। হালাল উপার্জনের মধ্যেই রয়েছে উপকারিতা আর বরকত। হালাল মানুষের মনকে আলোকিত করে। অন্তরে সততা ও ন্যায়কে সুদৃঢ় করে। রসুল (সা.) একবার সাহাবা সাদ ইবনে ওয়াক্কাসকে ডেকে বলেন, হে সাদ তোমার খাবার পবিত্র কর, তাহলে তোমার দোয়া কবুল হবে। (তাবারানি)। মানুষ জীবনে যা ভোগ বা উপভোগ করে সবই তার রিজিক। হালাল রিজিক ইবাদত কবুল বা নেক আমলের অন্যতম প্রধান শর্ত। সুতরাং রিজিক বৈধ হতে হলে দুটি প্রধান বিষয়ের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে। এক. ব্যবহার্য ভোগ্যবস্তুটি হালাল বা পবিত্র হতে হবে এবং দুই. তা অর্জনের প্রক্রিয়াটি হালাল বা বৈধপথে উপার্জিত হতে হবে। এ দুয়ের মধ্যে কোনোরকম ব্যত্যয় ঘটলে এ রিজিক হালাল বা পবিত্র হবে না।

আল্লাহ বলেন, হে রসুলগণ, তোমরা পাক পবিত্র জিনিসগুলো খাও, নেক আমল কর। (সুরা মোমেনুন, আয়াত ৫১)। এই আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর রসুলদের হালাল ও পবিত্র জিনিস খাওয়ার জন্য ওহি দ্বারা নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ আরও বলেন, আমি যেসব পাক পবিত্র জিনিস তোমাদের দান করেছি নিঃসংকোচে তা তোমরা খাও এবং নেয়ামতের জন্য আল্লাহতায়ালার শোকর আদায় করো। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৭২)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন চান তাঁর বান্দারা হালালভাবে রিজিক উপার্জন করুক এবং হারাম থেকে বেঁচে থাকুক। সে জন্য তিনি নবী রসুলদের প্রত্যেককে হালাল রিজিক অন্বেষণের তাগিদ দিয়েছেন। তাঁর হুকুমে নবীরাও জীবিকা উপার্জনের জন্য হালাল পেশা বেছে নিয়েছেন। রিজিক বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ। আল্লাহর গুণবাচক নামের মধ্যে একটি নাম হলো আল্লাহু রাজ্জাকুন অর্থাৎ আল্লাহ রিজিকদাতা।

আমাদের প্রিয় নবী রসুল (সা.) মক্কার বুকে ভেড়া বকরি চরিয়ে জীবিকা উপার্জন করছেন। মা খাদিজার (রা.) ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। সে জন্য তিনি সিরিয়া ও অন্যান্য দূরদেশ সফর করেছেন। এসব কিছুই আমাদের জন্য আদর্শ করণীয়।

আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা যেন হালাল ও বৈধভাবে উপার্জন করি।

হারাম উপার্জন ইসলামে নিষিদ্ধ ও গুনাহের কাজ। রসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর যাবতীয় ফরজ পালনের পর হালাল পথে উপার্জন করা ফরজ। (শুয়াবুল ইমান, ০৬/২৯২০)।

আমাদের মনে রাখতে হবে, হালাল উপার্জনের মাধ্যমে আমাদের আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। উপার্জন না থাকলে দারিদ্র্য এসে ভর করে। এ জন্য আমাদের সবাইকে সৎপথে থেকে হালাল উপার্জন করে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। হারাম হালাল মেনে চলতে হবে। হালাল উপায়ে জীবিকা উপার্জন করতে হবে।

রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি হালাল ও বৈধভাবে সম্পদ অর্জন করে তাকে বরকত দান করা হয়, আর যে ব্যক্তি হারাম ও অবৈধ পন্থায় সম্পদ অর্জন করে সে এমন এক ব্যক্তির মতো যে আহার করেও তৃপ্ত হয় না। (মুসলিম শরিফ, ১০৫২)।

হারাম উপার্জন করে কোনো ফরজ কিংবা নফল ইবাদত করলেও তা কবুল হয় না। হালাল উপার্জন দোয়া কবুলের পূর্বশর্ত। হারাম উপার্জনের মাধ্যমে সম্পদশালী হওয়া যায়, দুনিয়ার জীবনে সুখী হয়তো হওয়া যায় কিন্তু পরকালে হারাম উপার্জনের মাধ্যমে খাদ্য ভক্ষণ করা ও আয়েসি জীবনযাপনের জন্য জাহান্নামি হতে হবে। রসুল (সা.) বলেছেন, যে শরীরের গোশত হারাম উপার্জনের মালে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মুসনাদে আহমদ)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে হালাল উপার্জনের তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর