রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আবহাওয়ার পরিবর্তন ও পরিবেশ

পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে সমুদ্র স্রোতগুলো একত্রে এক বিরাট ফ্লাইং হুইল বা কনভেয়ার বেল্টের কাজ করে। কখনো হিমশীতল পানি বয়ে আসে মেরু প্রদেশ থেকে, কখনো উষ্ণ পানি প্রবাহিত হয় নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে উত্তর ও দক্ষিণে। সঙ্গে সঙ্গে স্থান পরিবর্তন হয় নিম্নচাপ বলয়গুলোর। পরিবর্তন হয় অসংখ্য সমুদ্র স্রোতের, যার একটির নাম এল নিনো, যেটি পর্যায়ক্রমে পৃথিবীর বুকে তৈরি হয়, আবার হারিয়েও যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় বিষুবরেখার দক্ষিণে প্রশান্ত মহাসাগরের যে অংশ রয়েছে তার পূর্ব প্রান্তের পানির তাপমাত্রা পশ্চিম প্রান্তের তুলনায় আশ্চর্যজনকভাবে কম। তাপমাত্রার এই পার্থক্য প্রায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মহাসাগরের এই প্রান্তে উল্লেখযোগ্য দেশগুলো হলো দক্ষিণ আমেরিকার পেরু, ইকোয়েডর ও চিলির উত্তরাংশ। সমুদ্রের গভীর থেকে মাছের খাদ্যসমৃদ্ধ শীতল পানি উঠে আসার ফলে সাগরপাড়ে এই অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে পৃথিবীর সুবিখ্যাত মৎস্যচাষ কেন্দ্র। বাণিজ্যিক বায়ুর প্রভাবে শীতল পানির স্রোতে (পেরু স্রোত) দক্ষিণ-পূর্ব থেকে উত্তর-পশ্চিমে এসে বয়ে যায় বিষুবরেখা বরাবর এবং ক্রমশ এই পানির উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। উষ্ণ পানি গিয়ে সঞ্চিত হয় ইন্দোনেশিয়ার নিকটবর্তী অঞ্চলে। স্বাভাবিক নিয়মেই পানি বাষ্পীভূত হয়ে সৃষ্টি হয় মেঘপুঞ্জের। নেমে আসে বৃষ্টিরধারা। আবার দক্ষিণ মেরু অঞ্চল থেকে বয়ে আসে হিমশীতল স্রোত। দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিমতটে ধাক্কা খেয়ে উত্তরে প্রবাহিত হয়ে আবার বিষুবরেখার সমান্তরালে-পূর্ব থেকে পশ্চিমাভিমুখে-একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায়। এভাবেই চলতে থাকে। প্রতি পাঁচ থেকে ১০ বছর অন্তর আসে পরিবর্তন। কোনো অজ্ঞাত কারণে বাণিজ্যিক বায়ুর ক্ষমতা অনেক কমে যায়। অনেক সময় বিপরীতমুখীও হয়। বায়ুর প্রবাহ পূর্ব থেকে পশ্চিমে না হয়ে হয় পশ্চিম থেকে পূর্বে। ফলস্বরূপ উষ্ণ পানি এসে সঞ্চিত হয় দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে। এতে ঠান্ডা পানির মাছের মৃত্যু হয়। অবনতি হয় মৎস্যশিল্পের। যেসব পাখি মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে তারা মরতে থাকে ঝাঁকে ঝাঁকে।

আফতাব চৌধুরী

সর্বশেষ খবর