ছাগল দিয়ে হালচাষ করলে যা হয় ঠিক তেমনি ঘটছে জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, সার্টিফিকেট তৈরিতে একদল অর্ধমূর্খকে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনায়। ফলে সর্বত্র ভুলের ছড়াছড়ি। কারও বাবার নামের জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক দলের নাম, মায়ের নামে রয়েছে মহা ভুল, ঠিকানা ও নিজের নামেও ভুল, স্বামীর স্থলে ছাপা হয়েছে বাবার নাম, জন্ম সালের সংখ্যা আগ-পিছে বেড়ে গেছে বয়স, কখনো আবার পুরুষের এনআইডিতে ছাপা হয়েছে নারীর ছবি। ভুল সংশোধনে প্রতিদিন লাখো মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে। উৎকোচের মহোৎসবও চলছে। ধরা খাওয়ার ভয়ে তারা সরাসরি অর্থ নেন না। যে কারণে দালালের পেছনে খরচ করতে হচ্ছে মোটা টাকা। একটি বানান সংশোধনে পেরিয়ে যাচ্ছে বছরের বেশি। কারও আবার ভুল সংশোধনের আগেই মৃত্যু হচ্ছে। ভোগান্তির হাত থেকে চিরতরে রক্ষা পাচ্ছেন এ ধরনের সৌভাগ্যবানরা। নিজেরা দোষী না হলেও করণিক এসব ভুলের কারণে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে দেশের মানুষকে। নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। পরিচয়পত্রে ভুল থাকায় চাকরি হচ্ছে না, কেউ বেতন বা পেনশন পাচ্ছেন না, কেউ ব্যাংকে লেনদেন করতে পারছেন না। অনেক হতদরিদ্র ত্রাণ নিতে পারছেন না। হচ্ছে না পাসপোর্ট ও ভিসা। আইইএলটিএস-এ কাক্সিক্ষত স্কোর তুলেও বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ হারাচ্ছেন। অসংখ্য মানুষের নিজের নামের বানানেই ভুল আসছে। নিজের নাম তো কারও ভুল হওয়ার কথা নয়। নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন প্রায় ১২ কোটি মানুষ। ৪ অক্টোবর পর্যন্ত এনআইডি সংশোধনের আবেদন জমা পড়েছে ৫৭ লাখ ২৯ হাজার ৫৭৯টি। সবচেয়ে বেশি ভুল ঢাকা অঞ্চলে। জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা পাসপোর্টে ভুল থাকা সত্ত্বেও ভোগান্তির ভয়ে সংশোধনের আবেদন করেননি এমন সংখ্যাও অজস্র। অভিযোগ রয়েছে, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে উৎকোচ নেওয়ার লোভে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করার ঘটনাও খুব একটা কম নয়। যে কারণেই ভুল হোক না কেন, নাগরিকরা যাতে হয়রানি ছাড়া ভুল সংশোধনের সুযোগ পান তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। গণক্ষোভ প্রশমনে তারা এ বিষয়ে নজর দেবেন এমনটিই প্রত্যাশিত।