সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কার ফাঁদে কার পা?

প্রভাষ আমিন

কার ফাঁদে কার পা?

আগামী বছরের শুরুতেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন নিয়ে এরই মধ্যে নানা প্রস্তুতি, নানা মেরুকরণ শুরু হয়েছে। তবে আরেকটি নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, আলোচনায় আসছে আগের নির্বাচনগুলোও। বিশেষ করে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত আগের নির্বাচন দুটি নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে। এটাই স্বাভাবিক। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই মানুষ ভবিষ্যতের দিকে এগোয়। যে যেই দলই করুন, আগের নির্বাচন দুটি ভালো হয়নি; এটা মানবেন সবাই। নির্বাচন দুটি কেন ভালো হয়নি, সে নিয়ে পারস্পরিক দায় চাপানোর খেলা চলছে। তবে এই তর্কের কোনো মীমাংসা নেই। আওয়ামী লীগের দৃষ্টিতে বিএনপির দোষ, বিএনপি পুরো দায় চাপায় আওয়ামী লীগের ঘাড়ে। সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দায় অবশ্যই বেশি। তবে বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি কি পুরোপুরি দায় এড়াতে পারবে? বিএনপির সর্বশেষ রাজনৈতিক অবস্থান, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে এ ধরনের রাজনৈতিক অবস্থান তারা নিতেই পারে। একই দাবিতে তারা ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তাহলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে সে দাবি থেকে তারা সরে এলো কেন? সেবার কি তাহলে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল?

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির দাবি মোটেই অযৌক্তিক নয়। কারণ দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনেই বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হয়নি। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনেই সরকার বদল হয়েছে। তাই ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা একটি দল ক্ষমতায় ফিরতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার সুরক্ষা চাইতেই পারে। কিন্তু সমস্যা হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এখন আর সংবিধানে নেই। কিন্তু সংবিধানে নেই বলেই তা আনা যাবে না, এমনও কোনো কথা নেই। সংবিধান অপরিবর্তনীয় কোনো বিষয় নয়। রাজনৈতিক সমঝোতা হলে যে কোনো কিছুই করা সম্ভব। মূল প্রশ্ন হলো, রাজনৈতিক সমঝোতার মতো পরিবেশ বাংলাদেশের রাজনীতিতে আছে কি না? এর উত্তর সবার জানা- নেই। বিএনপির দাবি যতই যৌক্তিক হোক, আওয়ামী লীগ না মানলে তো সেটা আদায় হবে না। আওয়ামী লীগ না মানলে বিএনপি আন্দোলন করে তা আদায় করে নিতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আন্দোলন করে সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায় করার মতো অবস্থায় কি আছে বিএনপি? যদি সেটা তারা না পারে এবং দাবিতে অনড় থেকে আগামী নির্বাচনে বিএনপি না আসে তাহলে কী দাঁড়াবে? ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে যদি আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসে; তখন বিএনপি কি আন্দোলন করে তাদের হটাতে পারবে? আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না; গত দুটি নির্বাচনে এ কলঙ্ক লাগানো গেছে আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী দলের গায়ে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে আওয়ামী লীগের কপালে সে কলঙ্কের সংখ্যা আরেকটি বাড়বে শুধু।

আজ ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে বিএনপিকে যতটা ছন্নছাড়া, মাঝিবিহীন নৌকা মনে হয়; ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে কিন্তু পরিস্থিতি তেমন ছিল না। সেবার জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে কয়েকটি সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় নির্বাচনে বিপুল বিজয় নির্বাচনি মাঠকে বিএনপির অনেকটাই অনুকূলে নিয়ে এসেছিল। তখন আওয়ামী লীগ সরকারেরও ছাড় দেওয়ার মানসিকতা ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোন করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়াকে। এমনকি নির্বাচনকালীন সরকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণেও সম্মত ছিল আওয়ামী লীগ। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাটা ছিল বিএনপির সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ভুল। আর বিএনপি আসেনি বলে ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির না আসার সুযোগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে যা ঘটল, তা বাংলাদেশ কেন বিশ্বের ইতিহাসেই নজিরবিহীন। নির্বাচনের আগেই ক্ষমতায় যাওয়ার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যায় আওয়ামী লীগ। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী একজন হলে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণার সুযোগ সংবিধান এবং নির্বাচনি আইনে আছে। কিন্তু অর্ধেকের বেশি প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি কখনো সৃষ্টি হতে পারে, এমন কথা নিশ্চয়ই সংবিধানপ্রণেতারাও ভাবেননি। তাই সাংবিধানিকভাবে সরকার বৈধ হলেও সে সরকারের নৈতিক মান উচ্চ ছিল না। বিএনপি না এলেও আওয়ামী লীগ চাইলে খুচরা দল, নিজ দলের বিদ্রোহীদের মাঠে নামিয়ে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের আবহ তৈরি করতে পারত। অন্তত ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের বাজে রেকর্ড তৈরি হতো না। কেন আওয়ামী লীগ ফাঁকা মাঠ পেয়েও এভাবে নিজেদের পায়ে নিজেরা কুড়াল মারল, এটা কিছুতেই আমার মাথায় ঢোকে না।

২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মধ্যে কিছুটা ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকলেও ২০১৮ সালে এসে আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ অনেকটাই ফুরফুরে ছিল। বেকায়দায় পড়া বিএনপি আগের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে যে ভুল করেছে তা শোধরাতে যেন মাঠে নামে। জটিল এক জগাখিচুড়ি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। বিএনপি-জামায়াতের ২০-দলীয় জোট বহাল রেখেই সৃষ্টি করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে আরেকটি বিকল্প জোট। ড. কামাল হোসেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো জনবিচ্ছিন্ন নেতাকে নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয় বিএনপি। জামায়াতের প্রার্থীর প্রতীকও ধানের শীষ, গণফোরামের প্রার্থীর প্রতীকও ধানের শীষ। এমন অসম্ভব রাজনৈতিক মেরুকরণ বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো হয়নি। কিন্তু অসম্ভব মেরুকরণও ক্ষমতাকে সম্ভব করতে পারেনি। বরং ২০১৪ সালে নির্বাচনে অংশ না নেওয়া যদি ভুল হয়, তাহলে ২০১৮ সালে অংশ নেওয়াটা হয়ে দাঁড়ায় মহাভুল। মাত্র ৬টি আসন বিএনপিকে রাজনীতিতেই অপাঙ্ক্তেয় করে তোলে। বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে প্রত্যাশার বিশাল বাবল তৈরি করা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অলিখিত অপমৃত্যু হয় নির্বাচনের রাতেই। তবে শুধু জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নয়, ৩০ ডিসেম্বর রাতে অপমৃত্যু ঘটে নির্বাচনি ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থারও।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে বহুল প্রচারিত ধারণা হলো, নির্বাচনটি আসলে আগের রাতে হয়েছে। গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায় ধারণাটি। বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক খারাপ নির্বাচনের রেকর্ড আছে। জিয়াউর রহমানের ‘হ্যাঁ-না’ ভোট, ’৭৯ সালের নির্বাচন, ’৮৮ সালের নির্বাচন, ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন। সেই তালিকায় ঠাঁই পাবে ২০১৪ সালের প্রার্থীবিহীন এবং ২০১৮ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনও। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনটি সম্পূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলেও কি বিএনপি-জামায়াত আর ড. কামালকে নিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারত? নির্বাচনি প্রক্রিয়া কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে আমার উত্তর হলো- না। টানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার জন্য নিশ্চয়ই বড় একটা অংশ তৈরি ছিল। আওয়ামী লীগবিরোধী ভোট নিশ্চয়ই বিএনপির বাক্সেই পড়ার কথা। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনি প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার পর আমার একবারও মনে হয়নি, বিএনপি জেতার জন্য নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল কোনোভাবে নির্বাচনে গিয়ে নিজেদের নিবন্ধন রক্ষা করা। বাই প্রোডাক্ট হিসেবে মনোনয়ন বাণিজ্য থেকে কিছু উপরি আয়ও করা গেছে। দুটি ছোট্ট অভিজ্ঞতার কথা বলি। নির্বাচনের সপ্তাহখানেক আগে আমি একবার পেশাগত কাজে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে আমি দেখেছি সাজ সাজ রব। তাদের নির্বাচনি প্রস্তুতি ছিল একদম নিখুঁত পেশাদার। প্রতিটি জেলার জন্য আলাদা আলাদা ডেস্ক। প্রতিটি আসন সম্পর্কে আলাদা আলাদা ফাইল। প্রতিটি ফাইলে অতীত সব নির্বাচনের ইতিহাস, বিস্তারিত ফলাফল, আওয়ামী লীগের প্রার্থী, সম্ভাব্য বিদ্রোহী, সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রার্থীর শক্তি এবং দুর্বলতা ইত্যাদির খুঁটিনাটি সবকিছু ছিল ফাইলে। বিএনপি যেখানে মাঠ প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল, সেখানে আওয়ামী লীগের এমন স্মার্ট নির্বাচনি প্রস্তুতি দেখে আমি একটু অবাকই হয়েছিলাম। পাশাপাশি বিএনপিকে মনে হয়েছে হালছাড়া, লক্ষ্যহীন, মাঝিহীন নৌকা। নির্বাচনের পাঁচ দিন আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের এক উপদেষ্টা আমার এক টকশোতে এসেছিলেন। অনুষ্ঠানের আগে তিনি আফসোস করে বলেছিলেন, আমাদের একটা নির্বাচনি প্রস্তুতি কমিটি আছে। আমি সেটার সদস্যও। কিন্তু আজ পর্যন্ত (নির্বাচনের পাঁচ দিন বাকি তখন) সে কমিটির কোনো মিটিংও হয়নি। দুই দলের এমন বিপরীতমুখী প্রস্তুতি দেখে আপনি কী সিদ্ধান্ত নেবেন। জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর যত বিরক্তই হোক, তারা তো বিএনপি প্রার্থীর বাসায় গিয়ে ভোট দিয়ে আসবে না।

শুধু নির্বাচনের পাঁচ দিন আগে বলেই নয়, নির্বাচনি জোট গঠন থেকে শুরু করে মনোনয়ন প্রক্রিয়া পর্যন্ত বিএনপি যা করেছে; তা কোনোভাবেই ক্ষমতায় যেতে চাওয়া কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড মনে হয়নি। ২০-দলীয় জোট আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে অনেক নাটক হয়েছে। তার চেয়ে বেশি নাটক হয়েছে বিএনপির নিজেদের প্রার্থী নিয়ে। এমনিতে তখন রাজপথে বিএনপির অস্তিত্ব না থাকলেও ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের শুরুর সপ্তাহটা গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনের অংশ ছিল বিক্ষোভে উত্তাল। বিক্ষোভটা সরকারের বিরুদ্ধে নয়, দলের বিরুদ্ধে। বিক্ষুব্ধরা মনোনয়ন কেনাবেচার অভিযোগ এনেছেন প্রকাশ্যে, সুনির্দিষ্টভাবে। বেশ কয়েকটি আসনে একদম অপরিচিত কারও কারও রহস্যজনক প্রক্রিয়ায় মনোনয়ন পাওয়ার ঘটনা সে অভিযোগের সত্যতাও প্রমাণ করেছে। পুরো প্রক্রিয়া দেখে আমার মনে হয়েছে, মির্জা ফখরুল বসে আছেন, কখন নির্বাচনটা শেষ হবে এবং তিনি বলবেন, আমরা আগেই বলেছিলাম, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেওয়াটা যে ভুল ছিল না, সেটা প্রমাণ করতেই যেন বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। মাত্র ৬ আসন পাওয়ার মতো অবিশ্বাস্য ফলাফলের পরও বিএনপি কিন্তু সে নির্বাচনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে, হাই কোর্টে, রাজপথে কোথাও কোনো শক্ত প্রতিবাদের চিহ্ন রাখতে পারেনি। দিনে নয়, রাতে ভোট হয়েছে; বারবার এ কথা বলা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি বিএনপি, চেষ্টাও করেনি। আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এটা প্রমাণ করতে পেরেই বিএনপিকে সন্তুষ্ট মনে হয়েছে। সেবার আওয়ামী লীগের যে প্রস্তুতি এবং বিএনপির মাঠ ছেড়ে দেওয়ার পর যে অবস্থা; তাতে সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য মানের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় ফিরতে পারত। তবে বিএনপির হাল ছেড়ে দেওয়ার পরও আওয়ামী লীগ কেন এভাবে পুরো নির্বাচনি ব্যবস্থাকেই প্রহসনে পরিণত করল, এর কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে অন্তত নেই। আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকেও এর কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা পাইনি কখনো। ২০১৮ সালের নির্বাচনে যা হয়েছে তা আসলে স্যাবোটাজ। কিন্তু আওয়ামী লীগ এমন এক বিপাকে পড়েছিল, তাতে স্যাবোটাজের কথা স্বীকার করারও উপায় ছিল না, দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা।

মির্জা ফখরুল প্রায়ই একটা কথা বলেন, সরকারের পাতা ফাঁদে আমরা পা দেব না। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না। কিন্তু মাঝে মাঝে আমার বিভ্রম জাগে, কার ফাঁদে কে পা দিচ্ছে। কেন জানি মনে হয়, বিএনপিই বরং ফাঁদ পেতে আওয়ামী লীগকে দুটি খারাপ নির্বাচনে বাধ্য করে নিজেদের কাতারে নামিয়ে এনেছে। তবে বারবার নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতে যাওয়াটা কোনো কাজের কথা নয়। ক্ষমতায় যাওয়া নিশ্চিত না হলে নির্বাচনে যাব না, এটাও কোনো যৌক্তিক সমাধান নয়। ’৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিয়েছিল ক্ষমতায় যেতে নয়, অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে। বিএনপিকেও টিকে থাকতে হলে সব নিয়ে মাঠে নামতে হবে। রাজপথ, নির্বাচন, সংসদ- সবকিছুকেই লড়াইয়ের ক্ষেত্র বানাতে হবে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে ক্ষতি শুধু বিএনপি বা আওয়ামী লীগের হবে না; ক্ষতি হবে গণতন্ত্রের, নির্বাচনি ব্যবস্থার। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, বারবার এটা প্রমাণ করে বিএনপি আর কী অর্জন করতে পারবে। এবার যেভাবে বিদেশি শক্তিগুলো, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নজরদারি চালাচ্ছে, তাতে সরকারের পক্ষে ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো আরেকটি নির্বাচন করা অসম্ভব। তারপরও যদি বিএনপি না যায়, তাতে নির্বাচন একতরফা হবে এবং ফায়দা যাবে আওয়ামী লীগের ঘরে, তাতে বিএনপির কী লাভ হবে।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক

সর্বশেষ খবর