মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কবে আমরা প্রকৃত মানুষ হব

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

কবে আমরা প্রকৃত মানুষ হব

হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা, ঘরে ঘরে মন্ডপে মন্ডপে ঢাকের আওয়াজ। আজ সেই আওয়াজের শেষে বিসর্জন। এবার দেবী দুর্গা এসেছিলেন ঘোড়ায় চেপে। আশা করি সবাই নিরাপদে নির্বিঘ্নে পূজা সম্পন্ন করতে পারবে। একে অপরকে মহানন্দে আলিঙ্গন করবে। আনন্দে ভেসে যাবে সব কালিমা, সব জটিলতা, কুটিলতা। মা দুর্গার মতো জন্মদায়িনী মায়ের প্রতি সবাই যত্নবান হবে। মাটির পুতুল বানিয়ে পূজা করে পানিতে ভাসিয়ে দিতে যে বেদনা, মূর্তি তৈরিতে কারিগরের খরচ আনন্দ-উৎসাহে ব্যয় করা হয়, রক্ত-মাংসের প্রকৃত মাকে যেন তার থেকে অপ্রয়োজন অবহেলা করা না হয়। কথাটা এই জন্য বলছি, আমি ১৬ বছর ভারতে নির্বাসনে ছিলাম। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে আমার প্রতিবেশী এক মাকে তার সন্তান পূজার দিনে একটি ভালো কাপড় কিনে দেয়নি। অথচ ওই সময় পাড়ার পূজার জন্য সে চাঁদা দিয়েছিল ১০ হাজার। তখনকার ১০ হাজার এখন ১০ লাখের বেশি। তাই কথাটি বলছি। ভদ্র মহিলা প্রায়ই আমাদের বাড়ি আসতেন। আমার মা তাকে ভীষণ সমাদর করতেন। সময়-অসময়ে এটা-ওটা কিনে দিতেন, শাড়ি দিতেন। এক-দুবার কীসব সোনার গহনাও দিয়েছিলেন। তখন সোনার দাম ছিল ৪৫০-৫০০ টাকা। তখন কেবলই আমার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পরও বাড়ির সব মা সামলান এটা দেখে ভদ্র মহিলা একদিন বলেছিলেন, ‘দিদি, আপনার ছেলে সব টাকা-পয়সা আপনার হাতে দেয়? মা বলে, ‘দেয়ই তো। ওর বাবাও আমার হাতে সব টাকা-পয়সা দিত। ছেলেরা দেশের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। ওদের টাকা হিসাবের সময় কোথায়?’ মহিলার ও কথা বলার প্রধান কারণ ছিল, আমি যেন কোথায় যেতে মার কাছে ৪০০-৫০০ টাকা চেয়েছিলাম। তখনই তিনি অবাক হয়ে ওই কথাগুলো বলেছিলেন। মা বড় বেশি সাজানো-গোছানো ছিলেন। তার রান্নায় যেমন কোনো ত্রুটি ছিল না। শেরেবাংলা থেকে বঙ্গবন্ধু সবাই তার রান্না খেয়ে আকুল হতেন, প্রশংসা করতেন। তেমনি সবদিকে দৃষ্টি ছিল তার। সারা বছর টাকা সংগ্রহ করতেন, খাবার থেকে মুষ্টি তুলতেন। ঈদ-রোজা-পূজায় কাকে কী দিতে হবে আগে থেকেই সব ঠিক করে রাখতেন। বাচ্চাদের এক রকম, বুড়োদের এক রকম, যুবক-যুবতীদের এক রকম। যে কারণে পাড়ার সব ছোট ছোট বাচ্চা ঠাকুমার জন্য পাগল হয়ে থাকত। কাকু আর ঠাকুমা ছিল ওদের কলিজার টুকরো। চাম্পারনের সে সময় সব থেকে বড় ডাকাত ফুলনদেবীর দলের মতো ২৫-৩০ জন ৫-৬ বছর থেকে ১০-১২ বছর বয়সীরা দলবেঁধে আসত। বাড়িতে যা থাকত কয়েক মিনিটে খেয়ে শেষ করে ফেলত। আমার ঘর যেন ছিল ওদের বাপ-দাদার সম্পত্তি। চেয়ার-টেবিল-বিছানাপত্র কিছুই ঠিক থাকত না। অত কিছু করত। কিন্তু কেউ কিছু বলত না। মিটছেপে কোনো খাবার থাকত না। বিস্কিট, মিষ্টি, আচার কোনো কিছু থাকতে পারত না। মুহূর্তে সব শেষ। একদিন আমার স্ত্রী তাদের ধমকে ছিল, এই তোমরা কী কর? বেরোও আমার বাড়ি থেকে। আর যাবে কোথায়। ২৫-৩০ জনের খুদে ডাকাত দলের ৫-৭ জন ফণা তুলে, ‘কী বল কাকি? তুমি এসেই কীসব বলছ? তোমার কত আগে থেকে আমরা এখানে আসি। তুমি সেদিন এসেই আমাদের এসব বলছ? কাকু আসুক দিল্লি থেকে তোমার বিচার করব আমরা।’ আর যায় কোথায়। ৬-৭ মাসের নতুন বউ খাওয়া বন্ধ। মা অনেক চেষ্টা করে ২-৪ লোকমা মুখে দিতে পারলেও তার ফোলা মুখ বন্ধ করতে পারেননি। ৩-৪ দিন পর আমি দিল্লি থেকে ফিরলে সে এক লঙ্কাকান্ড! কী হয়েছে?

- না, বাচ্চারা তাকে অপমান করেছে। কী সে অপমান?

- তারা বলেছে, আমরা কত বছর থেকে আসি কেউ কিছু বলে না। ক’দিন হলো এসেই তোমার এত মাতবরি। কাকু আসুক। কীভাবে তোমার বিচার করতে হয় দেখব।

এ কী কথা, ‘এত অপমান! ওরা যদি আবার আসে তাহলে আমি কিন্তু বাড়ি চলে যাব।’ তাকে যতই বোঝাই সে কিছুই বুঝে না। মনে হয় ট্রেনে সারা রাত জেগে আমি সকালে এসে বর্ধমানে নেমেছিলাম। তাই এসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বিকাল বেলায় খুদে ডাকাত দল সংখ্যায় আরও বৃদ্ধি করে এসেছে, ‘কাকু, কাকু, কাকিমাকে বলে দিও সে যেন আমাদের বাধা না দেয়। বাধা দিলে ভালো হবে না।’ খুব অস্থিরতা চলছিল বেশ কিছুদিন। কীভাবে যে সব ঠিকঠাক মিটমাট হয়ে যায় আমরা কেউ বুঝতে পারিনি। কিছুদিন পর দেখি বাচ্চাদের সঙ্গে সে রাস্তায় ঘুরছে, পাড়ায় পাড়ায় যাচ্ছে। আগে-পিছে ৪০-৫০ জন বডিগার্ড তার। কোনো কিছুর দরকার পড়লে তখন আর আমাদের বলে না। খুদে দস্যিরাই তার সব। বিষয়টা এ জন্য আলোচনা করলাম কখন চলে যাই তার ঠিক নেই। নিঃসঙ্গ একাকিত্বের সময় যখন যেখানেই থেকেছি সেখানেই কেন যেন বাচ্চারা আমায় ঘিরে রেখেছে। দুশ্চিন্তার কোনো সুযোগই পাইনি। ১৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার গিয়েছিলাম চান্দিনায়। কেন যেন দেশটা কেমন এক মায়া-মমতাহীন, মানবতাহীন শুষ্ক মরুভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। আবার কবে আমরা মানবতা, ভালোবাসা, ত্যাগ ও তিতিক্ষায় বিশ্বজয়ী হব বলতে পারছি না। করোনার সময় কত সন্তান তার বাবা-মাকে ফেলে রেখেছে। মৃত বাবা-মাকে দাফন-কাফন পর্যন্ত করেনি। সে রকমই এক ঘটনা। কয়েকদিন আগে কুলাঙ্গার ছেলে বাবাকে ফেলে চলে গেছে। আসছি বলে যাওয়া ছেলেদের পথ চেয়ে বসেছিল বাবা। একদিন, দুই দিন আর ছেলেরা আসেনি। রাইহানা ইসলাম রুনা নামে এক মহিলা তার মায়ের মৃত্যুজনিত কারণে সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। অনেক লোক জমতে দেখে সেও খোঁজ নেয়। প্রকৃত ঘটনা জেনে সে অনেকের কাছে ছোটাছুটি করে। এমনকি থানা পুলিশও করে। কিন্তু কোনো কূলকিনারা করতে পারে না। একসময় স্থানীয় সাংবাদিক রনবীর ঘোষ বিষয়টি নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেন। মনে হয় সংবাদ পাঠানোর আগেই চান্দিনার ইউএনও শ্রী তাপস শীল তাকে চান্দিনা হাসপাতালে ভর্তি করে এবং একজন প্রকৃত ইউএনওর মতো খোঁজখবর নিতে থাকে। খবর দেখে আমি দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। চান্দিনার এখন সংসদ সদস্য প্রখ্যাত নাক-কান-গলা চিকিৎসক প্রাণ গোপাল দত্ত। প্রাণ গোপালকে আমরা স্বাধীনতার আগে থেকেই চিনি। ছাত্রকর্মী হিসেবে লতিফ ভাইয়ের খুবই আস্থাভাজন ছিলেন। স্বাধীনতার পর আমিও তাকে ছোট ভাইয়ের মতো আপনজনের মতো আদর-যত্ন করেছি। জোয়ার-ভাটায় কতজনের কত অদলবদল হয়েছে। কিন্তু প্রাণ গোপালের কোনো দিন কোনো কিছু হয়নি। নতুন দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করে গামছা গলায় নিলে কতজন এড়িয়ে চলেছে। কিন্তু প্রাণ গোপাল সেই প্রাণ গোপালই থেকে গেছেন। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে যখন যেখানেই দেখা হয়েছে সেখানেই পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেছেন। এখনো করেন, সেদিনও করেছেন। চান্দিনা যাব শুনে প্রাণ গোপাল ফোন করেছিলেন, ‘ছোট ভাই আপনি নাকি চান্দিনা যাবেন?’ বলেছিলাম, হ্যাঁ। ‘যাওয়ার সময় আমাকে বলে যাবেন।’ অনেকেই প্রাণ গোপালের আমাকে ছোট ভাই বলায় দ্বন্দ্বে পড়ে। কেউ ভাবেন আমি ছোট, কেউ ভাবেন ও কেন আমাকে ছোট ভাই বলে। আসল রহস্য হলো, আমরা ছিলাম ১৫ ভাইবোন। আমাদের দুই মা। এখনো আমরা ১০ জন বেঁচে আছি। আমাদের পরিবারে বড় ভাই আর ছোট ভাই ছাড়া আর কোনো ডাকাডাকি নেই। লতিফ ভাই বড় ভাই, আমি ছোট ভাই। আর যারাই আছে তাদের সেজো, মেজো কোনো পদবি নেই। তাই প্রাণ গোপাল আমাকে ছোট ভাই ডাকেন। সেদিনও ডেকেছেন। কয়েক মাস পর তাকে দেখলাম। ইউএনওর অফিস থেকে তার গাড়িতেই গিয়েছিলাম উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। একেবারে সেই চারতলায় দুর্ভাগা পিতা চান মিয়াকে রাখা হয়েছে। সিঁড়ি বেয়ে না উঠে র‌্যাম দিয়ে উঠেছিলাম। প্রাণ গোপাল হাত ধরেছিলেন। তৃতীয় তলা পর্যন্ত উঠে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘ছোট ভাই খারাপ লাগছে?’ আসলেই তেমন খারাপ লাগছিল না। তাই বলেছিলাম, না। বৃদ্ধ পিতা চান মিয়ার বেডে গেলে প্রাণ গোপালও আমাকে চেনার চেষ্টা করিয়ে দেন। কিন্তু সে চিনতে পারছিল না। যা হোক, তার জন্য পাঞ্জাবি-লুঙ্গি-গেঞ্জি-গামছা এবং কিছু টাকা নিয়ে গিয়েছিলাম। টাকার কিছুটা দিয়েছিল আমার এক ছেলে ফেরদৌস। চান মিয়াকে দেখে আসার পথে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলাম। তাদের বলেছি, দেশে আজ মানবতা নেই, ভালোবাসা নেই, মনুষ্যত্ব নেই। তা না হলে সন্তান পিতাকে এভাবে ফেলে যেতে পারে? তার চার ছেলে-হারুন অর রশিদ, মাইনুদ্দিন, জসিম (হারিয়ে গেছে অনেক আগে)। এখানেও এক নতুন নাটকের সৃষ্টি হয়েছে। পত্রিকায় আলোচনা হওয়ায় ছেলেরা ছুটে এসেছে। তাদের কথা ২১ বছর আগে বাবা হারিয়ে গেছে। তার জন্য থানায় কোনো ডায়েরি নেই। আশপাশের লোকেরা জানে কি না তাও জানি না। ৩০-৩৫ বছরের ছোট ছেলে তাকে দেখামাত্র বাবা চিনতে পেরেছে। ৩০ বছর বা ৩৫ বছরের হলে তখন ছেলের বয়স ছিল ১০-১২ থেকে ১৪ বছর। কীভাবে এত বছর পর প্রথম দেখায় চিনতে পারল। এক ছেলে বছরখানিক আগে বিদেশে গেছে। হাসপাতালে আসার পর সে তাও বলেছে, আরও আনকোনা নতুন কথা বলেছে। তাই ইউএনও এবং ওসিকে বলে এসেছি, ব্যাপারটা খুব ভালোভাবে দেখে তারপর আত্মীয়স্বজনের হাতে তুলে দিবেন। আর না হলে আমি তো আছিই। প্রাণ গোপাল একজন বিখ্যাত ডাক্তার। তারও সেবামূলক অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। কোনো জায়গায় আমরা এই চান মিয়াকে পরম যত্ন ও আদরে রাখতে পারব।

বেরিয়ে আসার সময় সাংবাদিকরা বারবার প্রশ্ন করছিল। নির্বাচনের প্রশ্ন, দেশের বর্তমান অবস্থার প্রশ্ন, প্যালেস্টাইন-ইসরায়েলের প্রশ্ন। তাদের বলেছি, আমি তো রাজনীতি করতে আসিনি। আজ এসেছি কুপুত্রদের কুকর্মের সাক্ষী হতে। একজন বৃদ্ধ বাবাকে নিজের বাবার মতো সম্মান দিতে সেবা করতে। কয়েকজন সাংবাদিক গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছিল, বিরোধী দল চাচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন। সরকার বলছে সংবিধান অনুসারেই হবে আপনি কী বলেন? বলেছিলাম, সব বিরোধী দল নয়, বিএনপি বলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচন করবে না। এরাই কিন্তু একসময় বলেছিল, পাগল আর ছাগল ছাড়া কেউ তত্ত্বাবধায়ক চায় না। এখন তারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে দাবি করছে। দেখা যাক, গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিএনপি তা করতে পারলে করবে। আর না পারলে চিৎকার ফাৎকার পর্যন্তই সার। সরকারের কিছু করার নেই। সংবিধানের নির্দেশ অনুসারেই তাদের নির্বাচনে যেতে হবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই সরকারপ্রধান থাকবেন। মন্ত্রিসভা ভেঙে দিতে ও নির্বাচনের জন্য ছোট-বড় করতে পারেন। এটা প্রধানমন্ত্রীকে সংবিধান অধিকার দিয়েছে। সংবিধান অনুসারে দেশ চললে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই সরকারপ্রধান থাকবেন। হ্যাঁ, গত নির্বাচনে আকাশ-পাতাল দুর্নীতি হয়েছে। এবার নির্বাচনে তেমনটা হলে দেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী বোন শেখ হাসিনা। তাই তাকে এ ব্যাপারে গভীরভাবে ভাবতে হবে। নির্বাচন কমিশনকেও বলব, নির্বাচন কমিশন কোনো সাম্রাজ্যের সম্রাট বা রাজা বাদশাহ নন। যে নাগরিক, যে ভোটার তারই নির্বাচনে দাঁড়ানোর সংবিধান অনুসারে অধিকার রয়েছে। সেখানে টিআইএন, শিক্ষাগত যোগ্যতা, স্বতন্ত্র দাঁড়ালে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন এসবই জঘন্য সংবিধান লঙ্ঘন। নির্বাচন একটি গোপন বিষয়। ভোটাররা গোপনে ভোট দেয়। একজন স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যদি কাউকে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনের দরকার পড়ে তাহলে নির্বাচনের গোপনীয়তা থাকে কই? মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়ই তো নির্বাচন কমিশন সে গোপনীয়তা ভঙ্গ করে নির্বাচনি শর্ত নষ্ট করছে। তাই নাগরিক অধিকার নিয়ে যা খুশি তাই ছিনিমিনি খেলা যায় না। দয়া করে খেলবেন না। সব মাতবরি বন্ধ করুন। যে ভোটার সেই ভোটে দাঁড়াবে। কোনো বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। প্রয়োজনে আমরা হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে যাব। মনে হয় সাংবাদিকদের কথাবার্তা পছন্দ হয়েছিল। তারা তাদের মতো করে ভাবছিলেন। তাই চিৎকার করছিলেন, আপনি কী করবেন, আপনার দল কী করবে? আনন্দের সঙ্গে তাদের বলেছিলাম, প্রয়োজনে আমরা গামছা মার্কা নিয়ে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। আমি কখনো সাংবাদিকদের হাততালি শুনিনি। সেখানে অনেকেই হাতে তালি দিয়েছিলেন। সেখানে যেমন সাংবাদিক ছিলেন, তেমনি অসংখ্য সাধারণ মানুষ ছিলেন। সরাসরি চান্দিনা থেকে ঢাকার পথে রওনা হয়েছিলাম। বারবার মনে হচ্ছিল, আমি তো উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক ডা. বিধান চন্দ্র রায়কে দেখিনি। কিন্তু প্রাণ গোপালকে দেখেছি। প্রাণ গোপালের মতো অত বড় চিকিৎসক এখন আর খুব একটা নেই। বারবার মন বলছিল, প্রাণ গোপাল তুমি সবার প্রাণজুড়ে থাক। পরম দয়ালু স্রষ্টা তোমাকে সেভাবেই রাখুন। ঠিক সময়ে বাড়ি ফিরেছিলাম। দুপুরবেলা, তাই তেমন যানজট ছিল না। কথা ছিল অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান অফিসে যাব। কিন্তু এমডি ছিলেন না। তাই যাওয়া হয়নি। রবিবারে গিয়েছিলাম।

সামনে নির্বাচন। কতজনের কত কথা কত মত। বৃহৎ শক্তি আমেরিকাকে নিয়েই যত সব আলোচনা। আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না, আমেরিকা কী করে বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন করবে। নিশ্চয়ই আমেরিকা বাংলাদেশ দখলের চেষ্টা করতে পারে। এখন তো আর আমাদের মতো যুবক ছাত্র নেই যে রক্ত দেবে তবু স্বাধীনতা দেবে না। তাই হয়তো অস্ত্রবলে দখল করেও নিতে পারে। কিন্তু মানুষের মন জয় করবে কী করে? ভোটারের ভোট নেবে কী করে? স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমেরিকা আমাদের পক্ষে ছিল না। কানাকড়ি দিয়েও সাহায্য করেনি। বরং পাকিস্তানি জল্লাদদের অস্ত্র দিয়ে আমাদের বিরোধিতা করেছে। এমনকি যুদ্ধে তারা বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে ছিল। যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানের পরাজয়কে কিসিঞ্জার বলেছিলেন, ‘যুদ্ধে বাংলাদেশের জয় আমার কূটনীতির পরাজয়।’ আমি তো বর্তমানে আমেরিকার আরেকবার কূটনৈতিক পরাজয় ছাড়া আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না। এখানে স্যাংশন ওখানে স্যাংশন ওখানে বাধা সেখানে বাধা দিতেই পারে। কিন্তু সব ভোটার তো আর আমেরিকার খায় না, পরে না। আর বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। আজ ক’দিন থেকে ইসরায়েল গাজার ওপর প্যালেস্টাইনের ওপর যে অত্যাচার করছে, শিশু নারী বৃদ্ধ নির্বিচারে হত্যা করছে আর সেই হত্যায় সর্বোতভাবে সমর্থন করছেন জো বাইডেন। ভদ্রলোক বলেছেন, ‘আমরা কোনোমতেই হামাসকে জিততে দেব না। তাদের নাম নিশানা মুছে দেব।’ পরম স্রষ্টা আল্লাহ যদি আমেরিকার নাম নিশানাই মুছে দেন তখন কী হবে। এমন মুসলিমবিদ্বেষী একটি রাষ্ট্রের প্রধান আমাদের দেশে বিএনপিকে সরকারে এনে দেবেন আমরা সেটা মানব, দেশের মানুষ মানবে? কোনোমতেই না। সরকারের নিশ্চয়ই ছোটখাটো ভুলত্রুটি আছে। পরে যারা আসবে তাদেরও থাকবে। কিন্তু এই মুহূর্তে বিএনপি নেতা প্রবাসী তারেক রহমানকে কোনোমতেই দেশবাসী বিশ্বাস করে না। প্রধানমন্ত্রী বোন হাসিনা যথার্থই বলেছেন, এত অসুস্থ মাকে রেখে তিনি লন্ডনে থাকেন কী করে? বুকের পাটা থাকলে চলে আসুন। মার সেবা শুশ্রƒষা করুন। জেলে যাবেন, যাবেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী বোন শেখ হাসিনা যদি তার ক্ষমতাবলে বেগম খালেদা জিয়াকে তার বয়সের কারণে অসুস্থতার কারণে সাজা স্থগিত রেখে বাড়িতে থাকতে দিতে পারেন, বৃদ্ধ মার সেবা শুশ্রƒষা করতে তারেক রহমানকেও সে সুযোগ দিতে পারেন। প্রয়োজন হলে ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে প্রিয় বোনকে অনুরোধ জানাব। কিন্তু লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্র করা ভালো দেখায় না এবং মুসলিমবিদ্বেষী আমেরিকার কোনো ছক বাংলার মানুষ গ্রহণ করবে না এটাই সত্য।

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর