মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইবাদত ও সৎ কাজের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা

আবদুর রশিদ

ইবাদত তথা প্রতিটি সৎ কাজের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য যে কাজ করা হয়, তাতে ব্যক্তির স্বার্থসিদ্ধি কিংবা আত্মগরিমা প্রকাশের অবকাশ থাকে না। পবিত্র কোরআনের সুরা কাহ্ফে আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন- ‘যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ লাভের আশা করে, সে যেন সৎ কাজ করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক না করে।’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অপর কাউকে দেখানো বা সন্তুষ্ট করার জন্য ইবাদত না করে।

মানুষকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রতিটি সৎ কাজ  ইবাদতেরই অংশ। সে হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য অর্থাৎ নিজের গরিমা প্রকাশের জন্য সৎ কাজ করা হলে তা আল্লাহর দরবারে তাৎপর্য হারায়। এমনকি কেউ যদি নামাজি হয়, কিন্তু সে নামাজি হওয়ার উদ্দেশ্য যদি থাকে অপরের কাছে নিজেকে নামাজি হিসেবে দেখানো তবে তা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে সক্ষম হবে না। এ সম্পর্কে সুরা মাউনের ৪৭ নম্বর আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে- ‘অতএব দুর্ভাগ্য সেসব নামাজির, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে অমনোযোগী, যারা লোকদেখানোর উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস অন্যকে দেয় না।’

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষকে শোনানোর জন্য যে লোক নেক আমল করবে, আল্লাহও তাকে শোনাবেন। আর যে মানুষকে প্রদর্শনের জন্য নেক কাজ করবে আল্লাহও তাকে প্রদর্শন করবেন’।- সহিহ বুখারি ও মুসলিম।

রসুলে পাক (সা.)-এর এ হাদিসটির তৎপর্য ব্যাখ্যায় ইমাম খাত্তাবি (রহ.) অভিমত ব্যক্ত করেন, এ হাদিসটির মর্মার্থ হচ্ছে- আল্লাহকে খুশি করার জন্য নয়, বরং মানুষকে শোনানো এবং দেখানোর জন্য যে লোক কোনো ভালো কাজ করবে, আল্লাহপাক তাকে কেয়ামতের দিন এমন শাস্তি দেবেন, তাতে তার আমলের প্রকৃত গোমর ফাঁক হয়ে পড়বে এবং আল্লাহ তাকে সমবেত হাশরবাসীর সামনে অপদস্ত করবেন। রসুলুল্লাহ (সা.) আরেক হাদিসে বলেন, ‘ন্যূনতম রিয়াও শিরকের পর্যায়ভুক্ত।’ -হাকেম ও তাবরানি।

হজরত রাফেবিন খাদিজা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি শঙ্কিত যে বিষয়ে তা হচ্ছে ছোট শিরক। নিবেদন করা হলো : ইয়া রসুলুল্লাহ! ছোট শিরক কী? তিনি বললেন, ‘রিয়া’ লোক দেখানোর জন্য নেক আমল করা। আল্লাহ (যেদিন বান্দাদের প্রতিদান প্রদান করবেন সেদিন) বলবেন : ‘তোমরা যাদের দেখানোর জন্য নেক আমল করতে (আজ) তাদের কাছে গিয়ে দেখ কোনো পুরস্কার পাও কি না।’- আহাদ ও বায়হাকি, তাবরানি।

মহান আল্লাহপাক ঘোষণা করেন : ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের সমক্ষে এমন বিষয় সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ লাভ করবে, যে বিষয়ে তারা ধারণাও করেনি’। এ আয়াতে করিমার তাফসির প্রসঙ্গে হাক্কানি আলেমদের অভিমত, এর মর্মার্থ হচ্ছে- দুনিয়ায় তারা এমন সব আমল করত, আপাতদৃষ্টিতে যা নেক কাজ বলেই দেখা হতো, অথচ প্রকৃত প্রস্তাবে কেয়ামতের দিন দেখা যাবে তা আসলে বদ আমল। এ আয়াত তেলাওয়াত করে কোনো কোনো মনীষী ঘোষণা করতেন : ‘রিয়াকারীরা ধ্বংস হোক’। বর্ণিত আছে, ‘কেয়ামতের দিন রিয়াকারীকে চারটি নামে সম্বোধন করে বলা হবে- ‘হে রিয়াকার, হে বিশ্বাসঘাতক, হে পাপাচারি, হে ক্ষতিগ্রস্ত, যার সন্তুষ্টির জন্য নেক আমল করেছিলে, যাও- তার কাছ থেকে প্রতিদান আনো, আমার কাছে তোমার কিছুই পাওয়ার নেই।- ইবনে আবিদ্দুনইয়া।

মানুষ যখন আল্লাহর নাম স্মরণ করে তখন যে শয়তানের খপ্পর থেকে মুক্ত থাকে। পাপ থেকে সে দূরে থাকতে পারে। কৃতজ্ঞ হিসেবে সে বিবেচিত হয় আল্লাহর কাছে। সে কারণে মহানবী (সা.) সব সময় তাঁর উম্মতকে আল্লাহকে স্মরণ করতে বলেছেন। আল্লাহকে হাজির নাজির জানলে মানুষ অন্যায় কাজে প্রলুব্ধ হতে পারে না। জাগতিক লোভ তার কাছে বড় হয়ে দেখা দেয় না।

ইবাদত বন্দেগি জিকির করার সময় ভাবতে হবে আল্লাহ যেহেতু কল্যাণদাতা সেহেতু বান্দার দোয়া তিনি দরদের সঙ্গে বিবেচনা করেন। তবে আল্লাহর কাছে বান্দার এমন কিছু চাওয়া উচিত নয়, যা আল্লাহ পছন্দ করেন না। কেউ অন্যায় কিছু চাইলে, অশুভ ইচ্ছা পূরণ করতে কেউ আকাক্সক্ষা করলে আল্লাহ তাতে রুষ্ট হন।

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বান্দার দোয়া কবুল করা হয় যদি সে পাপ কাজের অথবা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার দোয়া না করে এবং দোয়া কবুল হওয়ার জন্য তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসুল! তাড়াহুড়ার অর্থ কী? তিনি বলেন, বান্দার এরূপ বলা, আমি অনেক দোয়া করেছি, অথচ আমার দোয়া তো কবুল হতে দেখলাম না। অতঃপর সে বিরক্ত ও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং দোয়া করা ত্যাগ করে (মুসলিম থেকে মিশকাতে)।

আল্লাহ আমাদের সব ধরনের বদ আমল থেকে দূরে থাকার এবং কেবল তাঁরই সন্তুষ্টি বিধানে ইবাদত ও সৎ কাজ করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর