সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, রাজনৈতিক জট না খুললে সংঘাত অনিবার্য। রাজনৈতিক সংকটের ফলে অর্থনীতি আজ মহাসংকটের দিকে চলে যাচ্ছে। রাজনৈতিক জট না খুলে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তিনি বলেন, অকার্যকর সংসদের কারণে ভোটপাগল বাংলাদেশের মানুষ আজ ভোটে অনাগ্রহী হয়ে উঠেছে। ধানমন্ডিতে তাঁর গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসির কার্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেন, বাংলাদেশ যাতে অগ্রযাত্রা থেকে পথভ্রষ্ট না হয় সেটাতে প্রাধান্য দিতে হবে। বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হবে, এটা শুধু ওই বিশ্বব্যাংকের দেওয়া উচ্চতর আয় দিয়ে বিচার করার বিষয় নয়। আমাদের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সেগুলো কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু আমরা তা দেখতে পাচ্ছি না। বরং নতুন নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে আমাদের একটা সাধারণ স্টাইল হলো দোষারোপ করা। এ স্টাইল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সবাইকেই এর দায় নিতে হবে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মানিক মুনতাসির-
বাংলাদেশ প্রতিদিন : আগামী নির্বাচন কেমন হবে বলে মনে করছেন?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : নির্বাচন কেমন হবে এটা জ্যোতিষীরা বলবেন। আমি বলব গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতেই হবে। কেননা ভোটপাগল মানুষ আজ ভোটে অনাগ্রহী হয়ে উঠেছে। এর সমাধান হতে হলে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে এখানে মানুষ বুঝতে পারছে যে, আমার ভোটের কোনো মূল্য নেই। অথবা আমার ভোট অন্য কেউ দিয়ে দেবে। ফলে মানুষ আজ ভোটে আগ্রহ দেখায় না। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য ধারাবাহিক প্রবণতাই দায়ী। গত এক দশকে এটাই হয়ে আসছে। আমাদের একটা সাধারণ স্টাইল হলো দোষারোপ করা। এ স্টাইল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সবাইকেই এর দায় নিতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : দুই দলই নির্বাচন নিয়ে নিজ অবস্থানে অনড়, সমাধান কীভাবে?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : অনড় অবস্থান থেকেই তো সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এটা এক ধরনের বলেই দেওয়া যায়। আমি বলব যে, এ মুহূর্তে নির্বাচন, রাজনীতি এগুলো কেন? এগুলো হচ্ছে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায়। কিন্তু যে গণতন্ত্র জনগণের স্বার্থের পরিপন্থি হয়ে দাঁড়ায় সেটারও তো দরকার নেই। এখানে দুই ধরনের স্বার্থ আছে- ১. জনগণ নির্ভয়ে সম্মানের সঙ্গে সমাজের মধ্যে বিচরণ করতে চায়। ২. মানুষ তার পরিশ্রমের ফসল প্রতিযোগিতামূলক বাজার থেকে নিজেদের ঘরে তুলতে চায়। কিন্তু এটার পেছনের প্রশ্ন হলো- কোন রাজনৈতিক বিষয়গুলো বিতর্কের অবসান ঘটাবে? এখানে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কাঠামোয় জবাবদিহিতার ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়েছে। নির্বাচন তো বটেই, রাজনীতিতে যে জবাবদিহিতার ঘাটতি দেখা দিয়েছে, সেটাই একটা সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জবাবদিহিতা না থাকার কারণ হলো, অকার্যকর সংসদ। আরেকটা দিক হলো, প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মধ্যে জবাবদিহিতার ঘাটতি। এখন আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা তুঙ্গে। আমলাতন্ত্রের কর্তৃত্বমূলক প্রাতিষ্ঠানিক শাসনও এখন তুঙ্গে রয়েছে। মানুষ তো নির্ভয়ে কথা বলতে পারছে না। মানুষ চায় নির্ভয়ে সংগঠিত হতে। এখানে নির্ভয়ে চলতে পারতে। এসব জায়গায় ব্যাপক একটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে কী হতে পারে?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : সমঝোতা কিংবা সার্বিক জট খুলতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখাতে হবে যে, তারা জনস্বার্থের বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে। শুধু ক্ষমতা ধরে রাখা নয় বা ক্ষমতা লাভ নয়; বরং জনস্বার্থের বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এখানে কার কী দায়িত্ব এটা একটা বড় প্রশ্ন। এখানে বলতে হবে, যে বা যারা দায়িত্বে আছেন তাদের বা তার দায়িত্বটাই কিন্তু বেশি। সম্ভাবনা তারই সবচেয়ে বেশি। দায়িত্ববান ব্যক্তিকে দায়িত্ব নিয়ে কার্যকর থাকতে হবে। এখানে জনগণের চাহিদাটা কোথায় সেটা শুনতে হবে। তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। জনগণ যে কষ্টে আছে সেটাও শুনতে হবে। জনগণ বলছে, আমার যে রাজনৈতিক অধিকার সেটা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শুধু ক্ষমতায় যাওয়াকে নয়, স্বার্থকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : সংবিধানের বাইরে কি নির্বাচন করার সুযোগ আছে? সংবিধান কী বলছে?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : এখানে গণতন্ত্র, সংবিধান সবই তো জনগণের জন্য। জনস্বার্থে আপনি (সরকার) যা ইচ্ছা করতে পারেন। ফলে সংবিধানেই তো সব সমস্যার সমাধান থাকে। আর এ সংবিধান তো মানুষেরই তৈরি। ফলে সেটাও তো সর্বোপরি দেশ-জনগণের কল্যাণেই কাজ করে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিদেশিরা অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচনের তাগাদা দিচ্ছে, স্বচ্ছ নির্বাচনের ব্যাপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : নির্বাচন স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হবে কি না তা জ্যোতিষীরা বলবেন। সেটা তাদের বলার বিষয়। এখানে জ্যোতিষী হয়ে তো লাভ নেই। আমি যেটা বলতে পারি তা হলো, এটা হতেই হবে। এর তো কোনো বিকল্পও নেই। অবশ্য জ্যোতিষী তো কয়েকজন আছেনও। তবে সেটা হওয়ায়াটা খুবই জরুরি। রাজনৈতিক বিষয়টার গ্রহণযোগ্য সমাধান এবং স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে অর্থনৈতিক ঝুঁকিটা আরও গভীর থেকে গভীরতর হবে। এ মুহূর্তে আমাদের রাজনৈতিক জটটা খোলা খুবই জরুরি দুই কারণে। একটি হলো গণতন্ত্রকে সুসংহত করা। অন্যটি অর্থনীতিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা। আমাদের একটা বিষয় হলো, বিদেশিদের বিষয়টা মুখ্য নয়। বরং আমাদের নিজেদের বিষয়টা মুখ্য। আমরা তো কখনো কখনো তাদের সুযোগ করে দিই কথা বলার জন্য। বিষয়টা হচ্ছে এ মুহূর্তে আমাদের রাজনৈতিক জট খোলার জন্য সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়া দরকার। এখানে আবার দুটো কথা আছে। এক. প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন, দুই. সব দলের অংশগ্রহণ। একই সঙ্গে ভোট দেওয়া ও পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার নিশ্চয়তা। নির্বাচনে শুধু সব দলের প্রার্থীই নয়; ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। ভোটার আনতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে দলগুলোর বাস্তবভিত্তিক প্রস্তাব বা কমিটমেন্ট কিংবা মেনিফেস্টো যেটাই বলি সেটা দিতে হবে। ভোটের পর সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : নির্বাচনকালীন এ সংঘাতময় পরিস্থিতি কীভাবে বিশ্লেষণ করেন?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : রাজনৈতিক সংকট রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। না হলে সংঘাতও অনিবার্যই। যেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। রাজনৈতিক জট খুলতে না পারলে তো অর্থনৈতিক সংকটেরও সমাধান সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : নির্বাচন কেন্দ্র করে নতুন দল গঠন হচ্ছে। একে কীভাবে দেখেন?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এসব নানা রকম বদ উদ্দেশ্য নিয়েই করা হয়। এটা লোকদেখানোর জন্যও করা হয় যে, অমুক দল আছে, তমুক দল আছে। আসলে এগুলো খুবই হালকা এবং গেঁয়ো চিন্তাভাবনা। কেননা সংকটটা অত্যন্ত জটিল। এ সংকট সমাধান হতেই হবে। যেনতেনভাবে কিছু করলে তো সংকটের সমাধান হবে না। অর্থনৈতিক সংকট তো রাতারাতি সমাধান হবে না। এর জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও চলমান অর্থনৈতিক সংকট আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : আমাদের সংকট মোকাবিলার কৌশলটা দুর্বল। আমরা সমস্যা চাপা দিয়ে রাখি। পরে যখন প্রকাশ পায় তখন আর সমাধানের পথ সহজ থাকে না। এই যেমন আমরা বলছি, নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কার করা হবে না। এটাও অগ্রহণযোগ্য। সংস্কারের তো বহুবিধ রকমফের ও মাত্রা রয়েছে। ফলে এটা তো যে কোনো সময়ই করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি কোন পথে আছে বলে মনে করেন? অর্থনৈতিক সংকটটা কতটা গভীর?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : এখানে সামষ্টিক অর্থনীতির সংকটটাকে তো একবাক্যে তুলে ধরা যায় না। আলাদাভাবে সূচকগুলো বিশ্লেষণ করতে হবে। যেমন এই যে, ডলারের মূল্যমান, মূল্যস্ফীতির যে উচ্চাবস্থা, রিজার্ভের সংকট, প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয়, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ইত্যাদি। এটা কভিডের আগে ও পরে দুই রকম ছিল। কভিডের পরের সংকট আরও বেশি গভীর ছিল। কিন্তু এখনকার অবস্থা সে সময়ের মতো নয়। কারণ এখনকার বিষয়গুলো বৈশ্বিকের চেয়ে আমাদের অভ্যন্তরীণভাবে সৃষ্টই বেশি। এখানে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব থেকে সংকট মোকাবিলার যে কৌশল নেওয়া হয়েছিল সেটা সঠিক ছিল না। এ সংকটটা যখন শুরু হয়েছিল তখন রাজনৈতিক কারণে সেটাকে না দেখার ভান করেছিলাম। যার ফলে এটা এখন নাগালের বাইরে চলে গেছে। এটা এক ধরনের বড় সমস্যা তৈরি করেছে। সাধারণ মানুষ ও পরিশ্রমী উদ্যোক্তা উভয়ই কষ্টে আছে। এখানে সাধারণ মানুষ খুবই নিষ্পেষিত অবস্থায় রয়েছে। আবার পরিশ্রমী উদ্যোক্তারাও খুবই সংকটের মধ্যে রয়েছে।
এখানে বলে রাখা ভালো যে, আমরা ডিজিটাল ফর্মে গেলেও আমাদের প্রশাসনের লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমেনি। এটার ধরন পাল্টেছে মাত্র। এটা খুবই পরিষ্কার বোঝা যায় বিনিয়োগের চিত্রটা দেখলে। আমরা শুধু পাবলিক এক্সপেনডেচারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : আমাদের উন্নয়ন দর্শন সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : এই যে, আমাদের ঋণনির্ভর উন্নয়ন কৌশল। এটা আমাদের জন্য সমস্যা হতো না যদি আমরা সাশ্রয়ী ঋণের খোঁজ করতাম। যদি আমাদের রেমিট্যান্স ও রপ্তানি ঠিক থাকত। আমাদের ডলারের মান ও রিজার্ভের মাত্রা দুটোই তো বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের কয়েক দিন আগেও আত্মতুষ্টির অবস্থা ছিল যে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে চলে গেছে রিজার্ভ। অথচ এখন আমরা আইএমএফকে বলছি আমাদের রিজার্ভের মান একটু কমিয়ে দিতে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : আইএমএফের ঋণ ও আমাদের আর্থিক সংস্কার সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : নির্বাচনের এখন আড়াই মাস বাকি আছে। কিন্তু অর্থনীতি তো বসে থাকবে না। অর্থনীতি যদি সমস্যার মধ্যে পড়তে থাকে তাহলে তো এটা আরও গভীর হবে। এ মুহূর্তে কোনো সংস্কার করব না, এমন কথা বললে তো মেসেজটা কিন্তু অন্য রকম যাচ্ছে। এখানে ঠিক আপনি কী করছেন আর সিগন্যালটা কী দিচ্ছেন- এ দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফকে বলছে নির্বাচনের আগে আপাতত কোনো সংস্কার কাজে হাত দেবে না। এটা বলাটা ঠিক নয়। এটা সঠিক সিগন্যাল নয়। সংস্কার বলতে তো একটা বিগ ব্যাং বিষয় নয়। এটা সহায়ক মেসেজ নয়।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : সামগ্রিক আর্থিক ও ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কী?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর উৎপত্তি তো অর্থনীতি থেকে নয়। এটাকে এভাবে দেখতে হবে যে, রাজনৈতিক কারণেও ঋণখেলাপি তৈরি হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর পারিবারিক আধিপত্য কমাতে হবে। না হলে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। রাজনৈতিকভাবে অর্থনৈতিক শাসন এটা রোধ করতে হবে। রাজনৈতিক সংকীর্ণ গোষ্ঠীস্বার্থ থেকে শিক্ষা নিয়ে একটা ব্যাংকে একই পরিবারের পাঁচজনকে পর্যন্ত পরিচালক করা হচ্ছে। এটাতে সংস্কার আনতে হবে। এটা কিন্তু যে কোনো সময়ই করা যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও শক্তিশালী হতে হবে। আপনি দেখেন, কয়েকটা ব্যাংক দখল করার সময় তো কেন্দ্রীয় ব্যাংক মধ্যরাতের মিটিং করেছে। তাহলে এখন সংস্কার করতে সমস্যা কোথায়? সংস্কার তো বহুমাত্রিক ও নানা রকমের হয়। এটা শুরু করে দেওয়া উচিত।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছি এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : বাংলাদেশ যাতে অগ্রযাত্রা থেকে পথভ্রষ্ট না হয়, সেটাতে প্রাধান্য দিতে হবে। পৃথিবীর বহু দেশ মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়ে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের সম্ভাবনার পথ এখনো রয়েছে। বাংলাদেশ যেন পথভ্রষ্ট না হয়। কয়েকটি গোষ্ঠীর কাছে ব্যাপক সুযোগসুবিধা চলে যাচ্ছে। অনেক সাধারণ মানুষ এসব সুযোগসুবিধার অংশীদার হতে পারছে না। একইভাবে আমাদের রাজনীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সিস্টেমগুলো মানুষের জন্য সহায়ক হচ্ছে না। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে এটা শুধু ওই বিশ্বব্যাংকের দেওয়া উচ্চতর আয় দিয়ে বিচার করা নয়। বাংলাদেশ যেখানে একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সেখানে একটা অন্যতম মূল্যনীতিই ছিল ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।
কিন্তু আমরা তো আজ সেখানে নেই। আমরা সেখান থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছি। মধ্যম আয়ের দেশ মানে ন্যায়ভিত্তিক সুখী, সমৃদ্ধ দেশ। সম্মান, নিরাপদ ও সমৃদ্ধি তিনটাকেই আমাদের অর্জন করতে হবে। তবেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হতে পারি। না হলে আমাদের শুধু অর্থনীতির মতো খন্ডিত সূচকের স্বপ্ন পূরণ হবে।