শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সংবিধান দিবসের ভাবনা

অধ্যাপক ডক্টর আবু সাইয়িদ

সংবিধান দিবসের ভাবনা

লক্ষ শহীদের রক্ত-অক্ষরে লিখিত জাতীয় দলিল, বাহাত্তরের সংবিধান। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রতিটি বর্ণে, শব্দে, বাক্যে, অনুচ্ছেদে অঙ্গীকার-উদ্দীপ্ত। এর তাৎপর্য সমাজ ও জীবন জড়িয়ে উন্নত রাষ্ট্র-নির্মাণ। এই নির্মাণ-কাঠামোয় বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা মৌল স্তম্ভ, যা ১১টি ভাগে, ১৫৩টি অনুচ্ছেদ এবং চারটি তফসিলে গ্রথিত। ৪ নভেম্বর সংবিধান গৃহীত হয়। ১৯৭২ সালের এই দিনে গণপরিষদে সংবিধান পাস হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই দিনটিকে সংবিধান দিবস হিসেবে আজও ঘোষণা করা হয়নি। সংবিধান প্রণেতাদের রাষ্ট্রীয় সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া হয়নি।

১. সংবিধানের প্রস্তাবনা শুরু হয়েছিল ‘আমরা জনগণ’ দিয়ে। যারা জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল। সে কারণে সংবিধানে লেখা হলো, ‘এদেশের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ।’ আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানের মূলনীতি হবে।

২. আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম, ‘আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা যেখানে সব নাগরিক আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।’ রাষ্ট্রের মূলনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম তার কোনোটাই সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এর অন্যতম কারণ হলো- দেশের মালিক জনগণ, সেই জনগণকে আমরা গোলামে পরিণত করেছি। মালিক যেখানে গোলাম- সে রাষ্ট্র কেমন?

৩. গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে দীর্ঘ সংগ্রাম ও লড়াই শেষে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই লড়াইয়ের মাধ্যমেই বাঙালি জাতির জাতিসত্তা বিকশিত হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠালাভ করেছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ একই সঙ্গে যেমন অসাম্প্রদায়িক তেমনি তা মানুষের মধ্যে সাম্যের মানসিকতা তৈরি করে। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। কিন্তু রাষ্ট্র সবার হয়নি। ক্ষমতার স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের হৃৎপিণ্ডে ছুরি মেরে ক্ষুদ্র ধনিক-বণিক চক্র পালাক্রমে শাসন ক্ষমতায় আসীন।

৪. বাংলাদেশের সংবিধানে জনগণকে প্রজাতন্ত্রের মালিক হিসেবে ক্ষমতার অংশীদারত্বের নিশ্চয়তা ব্যক্ত হয়েছে। এই আকাক্সক্ষা বা ইচ্ছাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত অভিব্যক্তি। সংবিধানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকার করেছিলাম তা পালনে ও বাস্তবায়নে সফলতা আসেনি। বরং সংক্ষিপ্তভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, রাষ্ট্র গঠনের প্রথমার্ধ থেকেই গণতন্ত্র নানাবিধ কারণে অগ্রসর হতে পারেনি। যে দেশের জনগণ সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না সে দেশে গণতন্ত্র মৃতপ্রায়। গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত নির্বাচন। সে নির্বাচনি ব্যবস্থা বারবার হোঁচট খেয়েছে। গণতন্ত্রের মুখোশ পরে নানা ধরনের কূটবুদ্ধির কারণে জনগণের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আজ সংকুচিত। নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত গণতন্ত্র ক্রমাগতভাবে কর্তৃত্ববাদী শাসকদের কব্জায় গিয়ে পড়ে। ফলে যেখানে গণতন্ত্র নেই সেখানে সুশাসনের কথা বলা বাতুলতা। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ছাড়া সুশাসন ও জবাবদিহিতা থাকে না।

৫. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান প্রকাশিত তথ্যউপাত্ত ও সূচক নিঃসন্দেহে কার্যকর গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও সুশাসন অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অগ্রগতির ক্রম অবনতি ঘটছে। রাজনৈতিক ও গণঅধিকারগুলোর ক্রমাগতভাবে সংকুচিত হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও বর্তমানে ভয়াবহভাবে হুমকির মুখে। আইনের শাসনের পরিবর্তে শাসন করার আইন চালু হয়েছে। সংবিধান-স্বীকৃত মৌলিক অধিকারগুলো আজ বিপন্ন। গণতন্ত্রের মাধ্যমে শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্র বিবর্ণ।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দলিল কার্যকর হওয়ার আগেই আমাদের সংবিধানে মানবাধিকার বিষয় তৃতীয় অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। মানবাধিকার নিয়ে দুটি বড় আন্তর্জাতিক দলিল কার্যকর হয় ১৯৭৬ সালে। সংবিধান প্রণীত হয় ১৯৭২ সালে। বাংলাদেশের সংবিধান মানবাধিকার বা নাগরিক অধিকারের একটি অনন্য দলিল। দলিল আছে কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতা ও আইনের শাসনের অভাবে মানবাধিকার পরিস্থিতির চিত্র রুগ্ন। ৬. সংবিধানে কিছু বিধান রয়েছে, কিছু ঘাটতি আছে। তবে সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করলে এগুলোর জন্য সংবিধান নয়, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিই দায়ী। মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন বা গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের জন্য মূলত দায়ী আমাদের নির্বাহী বিভাগ অর্থাৎ সরকার, প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের ক্ষেত্রে সংসদেরও দায় আছে। সংসদে এমন কিছু আইন করা হয়েছে, যা মানবাধিকার বা মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। এ ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো- সাইবার নিরাপত্তা আইন। কিছু ক্ষেত্রে আদালতের ব্যর্থতা আছে। সুতরাং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা না করতে পারার দায় সামগ্রিকভাবে নির্বাহী, আইন ও বিচার- সব বিভাগেরই।

৭. সংবিধান বাইবেল নয় যা পরিবর্তন করা যাবে না। বাংলাদেশ সংবিধান চলমান ধারার সঙ্গে জনস্বার্থে সংশোধনযোগ্য। সংবিধানে এমন কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে, যা সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গেই সাংঘর্ষিক। ১৭টি সংশোধনীর মধ্যে তিন-চারটি আছে নির্দোষ সংশোধনী। বাকি সংশোধনীগুলো আনা হয়েছে ক্ষমতাসীন সরকারকে সুবিধা দিতে। চতুর্দশ সংশোধনী ও পঞ্চদশ সংশোধনী এ দুটি সংশোধনী কার স্বার্থে? ক্ষমতাসীন সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সংবিধানকে ইচ্ছামতো কাটাছেঁড়া করেছে। লন্ডভন্ড করা হয়েছে। সাংবিধানিক আইনে একটি তত্ত্ব আছে, রাজনৈতিক বিষয়ে আদালত হস্তক্ষেপ করে না বা সিদ্ধান্ত দেবে না। কিন্তু অনেক সময় রাজনীতি ও সাংবিধানিক আইনকে আলাদা করা যায় না। এ ক্ষেত্রে আদালতই সিদ্ধান্ত নেবেন- বিষয়টা রাজনৈতিক, না আইনগত। ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের ক্ষেত্রে আদালত মনে করেছেন, এটা সাংবিধানিক প্রশ্ন। এ কারণে আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। বিষয়টি শুধু রাজনৈতিক নয়, এর সঙ্গে আইনের একটা সম্পর্ক আছে। তবে এটা মোটা দাগে রাজনৈতিক প্রশ্ন। কিন্তু আদালত এখানে হস্তক্ষেপ করেছে। যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ‘অসাংবিধানিক’ ও ‘অগণতান্ত্রিক’ বলেছেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এসেছিল সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে। তাহলে এটা কীভাবে অগণতান্ত্রিক হয় কিংবা সংবিধান পরিপন্থি? ত্রয়োদশ সংশোধনী আইনগত প্রশ্ন থাকলেও তা জাতীয় ঐক্য ও জনগণের ইচ্ছার চূড়ান্ত প্রতিফলন। এখানে ঐতিহাসিক একটি ঘটনার উল্লেখ অপ্রাসঙ্গিক হবে না। পাকিস্তানের মৃত্যু কারাগার থেকে মুক্ত বঙ্গবন্ধু প্রথমে লন্ডন এবং লন্ডন থেকে দিল্লি আসার পথে বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেন ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানে আলোচনা করছিলেন। মাত্র ৯ মাসে দেশ স্বাধীন কীভাবে হলো। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন জাতীয় ঐক্যের কারণে। সর্বস্তরের জনগণ যেখানে ঐক্যবদ্ধ, তার শক্তি হয় অলঙ্ঘনীয়। জাতীয় ঐকমত্যের কেয়ারটেকার সরকার সংবিধানের পরিপন্থি কি না- এ প্রশ্নে ভিন্নমত পোষণকারী আপিল বিভাগের তিনজন বিচারপতি এ রায় বৈধ কি না, তা নির্ধারণের জন্য জনগণের মতামত নেওয়ার কথা বলেছিলেন। আদালত যে প্রক্রিয়ায় রায়টি দিয়েছেন, সেটা নিয়েও কিছু প্রশ্ন আছে। ক্ষমতাসীন দল তার নিজের স্বার্থে এটাকে কাজে লাগিয়েছে। রায়ের পর সংসদ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে লিপিবদ্ধ হয়েছিল। বাতিল করতে হলে গণভোটে যাওয়া জরুরি ছিল। জনগণ মালিক; তাদের মতামত গ্রাহ্যের মধ্যে আনা হয়নি। জনগণের মতামত উপেক্ষা করার ফলে জাতি বিভাজিত। দেশ আজ গভীর সংকটে।

৮. অনেক দেশেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। সে সব দেশে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। কেবিনেট বা মন্ত্রিসভা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো কাজ করে। কিন্তু বাংলাদেশ সংবিধানে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যে, জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য থাকা সত্ত্বেও সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হন। আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বারবার পরীক্ষিত হয়েছে সংসদ বহাল রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। দলীয় নির্বাচন মূলত গণতন্ত্রের চেতনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এ ক্ষেত্রে জনগণ অবাধ, সুষ্ঠু ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না। যা গণতন্ত্রের মৌলিক শর্তকে লঙ্ঘন করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যিনি দলীয় প্রধান তিনি সরকার প্রধান। দল-সরকার একাকার হয়ে গেছে। সে জন্য দলীয় কর্মীরা পুলিশি ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ফলে গণতন্ত্রের পরিবর্তে কর্তৃত্ববাদী শাসনের সব লক্ষণ দৃশ্যমান। সংবিধানের প্রতি কারও শ্রদ্ধাবোধ নেই। নেই আইনের শাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।

৯. ১৯৯৬ সালেও একই রকম একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেই সময় একতরফা একটা নির্বাচন করে বিএনপি ক্ষমতায় আসে এবং কিছুদিন পর তারাই সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু করে। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হয়, তাতে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। এগুলো সবই হয়েছিল রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে। সুতরাং বর্তমান সংকটের সমাধান করতে হলেও রাজনৈতিক ঐকমত্য অপরিহার্য। সে ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকলে সংবিধানের ভিতরে-বাইরে অনেকভাবেই উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এমনকি রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন না করেও একটি নির্বাচনকালীন বা ক্রান্তিকালীন সরকারের অধীন নির্বাচন হতে পারে। হতে পারে সংলাপ এবং সমাধান।

১০. সংবিধানের প্রস্তাবনায় আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠিত করব। শোষণমুক্তির চালচিত্র কী? সংবিধানে আমরা আরও বলেছিলাম মেহনতি মানুষ ও জনগণের অনগ্রসর অংশগুলোকে সব ধরনের শোষণ থেকে মুক্ত করা। সেই অঙ্গীকারের বিপরীতে রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বস্তরে শোষণ অবারিত করেছি। ব্যাপক অর্থনৈতিক বৈষম্য বিদ্যমান থাকলে ন্যায়বিচার কীভাবে হবে। যখন মেধা, সততা ও সক্ষমতা দুর্নীতির কাছে বিক্রি হয়ে যায় তখন সিন্ডিকেট সম্পদ বণ্টনের ওপর আধিপত্য করে। তারাই আবার রাষ্ট্র ব্যবস্থার সিদ্ধান্তকে নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ১০ ভাগের হাতে দেশের ৮০ ভাগ বা সিংহভাগ সম্পদ কুক্ষিগত হয়েছে। বাংলাদেশে একটি সুবিধাভোগী ঋণখেলাপির শেকড় অত্যন্ত গভীরে। এরা প্রভাবশালী, ওপর মহলে নিবিড় সম্পর্ক-আত্মীয়তা বিদ্যমান। তাদের হাতেই ব্যাংক। অসাধু ব্যবসায়ী ঋণ না দিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পুনরায় ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে ফেলেছে। বলা হয়- ৬ লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। বাংলাদেশে আর্থিক খাতের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও তাদের হাতে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বাংলাদেশের আর্থিক খাত বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি বলেছে, এখানে খেলাপি আড়াল করে রাখা আছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি দুর্বল, ব্যাংক পরিচালক ও ব্যবস্থাপকদের আচরণ বেপরোয়া। নিয়ম ভাঙলে শাস্তিও পান না তারা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত অত্যন্ত ভঙ্গুর অবস্থায় এবং বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে। দেশে এখন খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৪০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। এ সবই সংবিধান পরিপন্থি। (অনুঃ ২০)

১১. পর্যালোচনায় বেরিয়ে আসবে বাহাত্তর সালের সংবিধানে আমরা যা অঙ্গীকার করেছিলাম, তার সঙ্গে রাষ্ট্র ও সরকার বারবার বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সেই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে বঙ্গবন্ধু সংসদ ভেঙে বলেছিলেন, সরকার হবে নিরপেক্ষ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে শুধু রুটিন কাজ করবে। জনগণ দেশের মালিক, তারা যার পক্ষে রায় দেবে তারাই ক্ষমতাসীন হবে। ১২. আমরা জানি নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন। নির্বাচনকালীন নির্বাহী কর্তৃত্বের থাবাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা তাকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাহস, সততা ও সক্ষমতার অভাবে কমিশন নিজেই নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। ফলে কমিশন নির্বাহী কর্তৃপক্ষের আজ্ঞাবহ হিসেবে জনমনে প্রতিভাত হয়েছে। ভারতের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কদিন আগে এই অভিমত প্রকাশ করলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে তারাই সেরূপ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেন। কেননা গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান রক্ষাকবচ হলো নির্বাচন কমিশন। যেমন ভারতে আছে। ১৩. বর্তমান বিরাজমান সংকট, সংঘাত, মৃত্যু, হানাহানি, জননিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা থেকে দেশ ও জাতির স্বার্থে সংবিধানের ১৪১ (১) অনুচ্ছেদ মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। সব দলের সমঝোতার ভিত্তিতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাদি গ্রহণ করতে পারেন। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং স্থিতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থায় এটি হবে মঙ্গলজনক।

লেখক : সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর