শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নিজেকে সংশোধন করি

মো. আমিনুল ইসলাম

নিজেকে সংশোধন করি

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে জ্ঞানদান করেছেন। সেই জ্ঞানের মাধ্যমে আমরা নিজেদের পরিচালিত করি। এরপরও আমরা প্রতিনিয়ত অন্যায় ও গুনাহের কাজে লিপ্ত হই। সুদ, ঘুষ ও হারাম উপার্জন করি। মিথ্যা কথা বলি। মিথ্যা সাক্ষ্য দেই। মানুষের ক্ষতিসাধন করি। এতিমের হক ভক্ষণ করি। মানুষ হত্যা করি। অর্থাৎ হেন কোনো গুনাহের কাজ নেই যা আমরা করি না। প্রতিনিয়ত সীমালঙ্ঘন করি। আল্লাহর দেওয়া জ্ঞান দিয়ে পুণ্যের চেয়ে বেশি পাপকাজ করি। অথচ আমরা এটাও জানি এর জন্য আমাদের পরকালে শাস্তি পেতে হবে এবং রয়েছে জাহান্নামের কঠিন আজাব। এ অন্যায় কাজ থেকে পবিত্রতা অর্জন করতে হলে আমাদের তওবা করে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে জীবন পরিচালনা করতে হবে। তাহলেই আমরা আখেরাতে পাব মুক্তি। এ বোধ আমাদের অন্তরে ধারণ করতে হবে। একজন মুসলমানের জন্য শারীরিক পবিত্রতা অর্জনের পাশাপাশি আত্মিক পবিত্রতাও জরুরি। আমরা সবাই বেমালুম ভুলে আছি পরকালের কথা। অনন্ত জীবনের কথা। যে জীবনের কোনো শেষ নেই। রসুল (সা.) কে খাঁটি মুমিন ও মুনাফিক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রকৃত মুমিন সদা নেক আমল, ইবাদত ও নামাজ রোজায় নিমগ্ন থেকে সৎকর্ম সম্পাদন করে। আর মুনাফিক সর্বদা চতুষ্পদ জন্তুর মতো পানাহার ও উদর পূর্তির চিন্তায় নিজেকে ব্যাপৃত রাখে। রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির সঙ্গীরূপে যাত্রা করে। দুটি ফিরে আসে আর একটি তার সঙ্গে যায়। সঙ্গে গমন করে তার আত্মীয়স্বজন, ধন-দৌলত ও তার আমল। প্রথম দুটি ফিরে আসে, শুধু নেক আমল তার সঙ্গী হয়। (বুখারি ও মুসলিম)। আমাদের জীবনে বয়স বেড়ে ৫০ পেরোলে কিংবা চাকরিজীবনে অবসরে গেলে পরকালের ভাবনায় আমরা উদগ্রীব হয়ে উঠি এবং ধর্মের প্রতি অনুগত হই। অথচ যৌবনে শক্তি সামর্থ্য থাকার পরও আমরা অবহেলায় সময় পার করেছি। ঠিকমতো নামাজ, রোজা বা নফল ইবাদত করি না। সময়ের সঠিক মূল্যায়ন করি না। একদিন রসুল (সা.) এক সাহাবিকে প্রশ্ন করলেন, আল্লাহর সৃষ্টি কোন ব্যক্তি সবচেয়ে দরিদ্র? সাহাবায়ে কেরাম উত্তরে বললেন, যার ধন সম্পদ নেই। নবীজি সঙ্গে সঙ্গে বললেন- না, সেই ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি দরিদ্র যার ভালো বা নেক আমল নেই। সুতরাং সম্পদে ধনী নয়, আমাদের ইমান ও নেক আমলে ধনী হতে হবে। পরকালের জীবনের জন্য বেশি সচেতন ও যত্নশীল হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে আত্মার পবিত্রতা ছাড়া কোনো ইবাদত বন্দেগি আল্লাহপাকের দরবারে কবুল হয় না। আত্মার অপবিত্রতা বলতে ইমানের ঘাটতিকে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহর রহমত থেকে কখনো নিরাশ হওয়া যাবে না। আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দাগণ তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে তারা নিরাশ হইও না, আল্লাহ তোমাদের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (সুরা জুমার, আয়াত ৫৩)। আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে। আল্লাহ বলেন, তুমি ভরসা কর তাঁর ওপর যিনি চিরঞ্জীব, যার মৃত্যু নেই এবং তাঁর সপ্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর, তিনি তাঁর বান্দাদের গুনাহ সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত। (সুরা ফুরকান, আয়াত ৫৮)। আমাদের মনে রাখতে হবে এ দুনিয়ার জীবন অত্যন্ত স্বল্প সময়ের। একদিন আমাদের সবাইকে এ দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে চলে যেতে হবে। পরকালের জীবনকে প্রকৃত জীবন মনে করতে হবে। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, এ পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া কৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয়। পরকালের জীবনই তো প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত। (সুরা আনকাবুত, আয়াত ৬৪)।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর