মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দেশবাসী সরকারি প্রভাবমুক্ত নির্বাচন চায়

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

দেশবাসী সরকারি প্রভাবমুক্ত নির্বাচন চায়

জাতীয় নির্বাচনের সময় যতটা ঘনিয়ে আসছে উত্তেজনা ততই বাড়ছে। এটা খুবই সত্য, দেশে একটি অবাধ উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হওয়া দরকার। একটি সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে। যদিও সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এখনো আসেনি। সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণই ছিল জনগণের ভোটাধিকার উপেক্ষা করা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের ভেতো বাঙালি ভেবে শক্তিহীন ভেবে আমাদের ভোটের রায়কে পদদলিত করতে চেয়েছিল। তখনকার সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি তা মেনে নেয়নি। শুরুতে পাকিস্তানি হানাদারদের দাপটে বাংলাদেশ তো বটেই সারা বিশ্ব কেঁপে উঠেছিল। কিন্তু তাদের পরিণতি পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে নির্দয় নির্মম হয়েছে। অমন পরাজয় পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কম সময়ই ঘটেছে। যদিও কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে কখনো কোনো শক্তিধর তেমনভাবে টিকে থাকেনি। জুলুমবাজের উত্থান এবং পতনে ৫০-৬০-১০০ বছরের বেশি লাগে না। অনেক যোগ্য দক্ষ শাসকগোষ্ঠী বিলীন হয়ে গেছে। এ পৃথিবীটাই অদল বদলের জন্য সৃষ্টি। পরম করুণাময় আল্লাহ যেভাবে ভাবেন সেভাবেই হয়। এই ভারতবর্ষে কত শাসক এসেছে কত শাসক গেছে। বাইরে থেকে আসা শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে মুঘলদের গৌরব তারা ভারতবর্ষকে লুট করে তাদের দেশে নিয়ে যায়নি। কিন্তু ইংরেজ তা করেছে, বাংলায় ১৯০ বছর, সারা ভারতে ১০০ বছর তারা শাসনের নামে লুটতরাজ করেছে। চোরেরা সন্তর্পণে চুরি করে। তারপরও সুযোগ পেলে অনেক কিছু থাকে না। কিন্তু ব্রিটিশ সারা ভারতবর্ষে অবাধে চুরি এবং লুটতরাজ করেছে কোথাও কোথাও ১০০ আবার কোথাও ১৯০ বছর। বাপ-দাদার সম্পত্তিও এভাবে মানুষ লুটেপুটে খায় না যেভাবে ইংরেজরা আমাদের লুটেপুটে খেয়েছে। এখনো ইংল্যান্ডের শতকরা ৯০ ভাগ বাড়িঘর, খাট-পালঙ্ক-দরজা-জানালা কাঠের কাজ আমাদের দেশ থেকে লুট করে নেওয়া। শত শত পাথরের কাজ সবই আমাদের। কিন্তু মুঘল ভারতবর্ষে এসে ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে কৃষ্টি-সভ্যতার সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। তাই এখনো তাদের ইতিহাস আছে, স্থাপত্য আছে। তাই শুধু গায়ের জোর নয়, শুধু জ্বালাও-পোড়াও করে কেউ কোনো দিন জয়ী হয়নি। জ্বালাও-পোড়াও করে যদি জয়ী হওয়া যেত তাহলে পাকিস্তানি হানাদারদের মতো জ্বালাও-পোড়াও আমার মনে হয় না এ জগৎ সংসারে কেউ করেছে। তারা জয়ী হয়নি, হয়েছে চরম পরাজিত। আমি বহুদিন লক্ষ্য করছি, প্রধান বিরোধী দল বিএনপিই বাংলাদেশের সামাজিক অবক্ষয়ের প্রধান কারণ। শক্তিশালী সর্বজনীন বিরোধী দল থাকলে সরকার এবং সরকারি দল ও প্রশাসন কোনোমতেই লাগামহীন হতে পারে না। প্রধান বিরোধী দল কখনো যোগ্যতম বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রহসনে ড. কামাল হোসেনকে দিয়ে আমাদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল কি না জানি না। আমি মানুষকে বিশ্বাস করি, বয়সীদের সম্মান করি, মান্য করি। সেই হিসেবে ড. কামাল হোসেনকে আমি আমার চাইতেও বঙ্গবন্ধুর বেশি প্রিয় বলে ভাবতাম, এখনো ভাবি। কিন্তু ২০১৮ সালে তার নেতৃত্বে জোট করা আমার রাজনৈতিক জীবনের প্রধানতম ভুল। ড. কামাল হোসেন একজন জ্ঞানী মানুষ, ভালো মানুষ, শিক্ষিত মানুষ। কিন্তু তার মধ্যে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের লেশমাত্র নেই। রাজনীতিতে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব সব থেকে বড় কথা। নির্বাচনের দিন সকালে তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে বলেছিলেন, বিকালে ভোটে কারচুপির কথা বলেন। মানুষ এভাবে সকাল-বিকাল মত বদল পছন্দ করে না। সব মিলিয়ে আটজন বিরোধী সদস্য, পাস বলব না নির্বাচিত বলব কী বলব বুঝতে পারছি না। কারণ আমি প্যাঁচগোচ নিয়ে ভাবি না। যখন তারা আটজন শপথ নিল। আটজন নয়, সাতজন শপথ নিয়েছিলেন। ফখরুল ইসলাম সাহেব নেননি। সেখানে আবার উপনির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি ধানের শীষ আনা হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছিল তাই বলেছিলাম, সমস্ত নির্বাচন যদি সাজানো হয়, ভোট এবং ভোটারবিহীন হয় তাহলে বিরোধী দলের এই সাত-আটজন তারাও তো অবৈধ। তারা সংসদে যাবে, সংসদীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে তারা সাত-আটজন বৈধ, বাকি পুরো সংসদ অবৈধ এ ধরনের গাঁজাখুরি কথা কেন মানুষ মেনে নেবে? তাই জোট ছেড়ে দিয়েছিলাম। জোট ছাড়াই আছি। আবার ভোট আসছে। আবার ভোটের নামে প্রহসন হলে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আমার বোন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ মানুষ ভোট দিতে চায়, তারা যে দেশের মালিক এটা রেকর্ড করতে চায়, দাখিলা পর্চা নতুন করে নিতে চায় তাই এখানে খাজনা খারিজে যত বিশুদ্ধ হবে নেতৃত্বের গুণাগুণ তত বৃদ্ধি পাবে।

আগেই বলেছি, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কর্মী বাহিনী যতক্ষণ নিয়ন্ত্রণে থাকে ততক্ষণই শক্তি। শুধু কি শক্তি, ভিসুভিয়াসের মতো এক মহাশক্তি। কিন্তু রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা যদি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়, যদি আগ্রাসি হয়ে পড়ে হাতে অস্ত্র হিসেবে লাঠিসোঁটা যাই হোক তুলে নেয় তাহলে বুঝতে হবে আন্দোলনকারীদের মেধা ও শক্তি কমে গেছে। তাদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনার চাইতে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনাই অনেক বেড়ে যায়। শৌর্য, বীর্য, সততা, ভালোবাসা ও মানবতায় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম স্থান অধিকারী বাঙালির আজকে তেমন খুব একটা সম্মান আছে বলে মনে হয় না। জো বাইডেনের উপদেষ্টা সাজিয়ে সিরাজগঞ্জের মিয়া আরেফিকে আনতে হয়। এসব নাকি হাসান সারওয়ার্দী করেছেন। এই সারওয়ার্দী ৯ ডিভিশনের জিওসি থাকতে সাভারের রানা প্লাজা উদ্ধারে ১৭ বা ১৮ দিন পর রেশমা নামের এক ১৭-১৮ বছরের গার্মেন্ট কর্মী উদ্ধার দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। জালিয়াতিরও একটা সীমা থাকে। মেয়েটিকে যখন বের করা হয়েছিল চারদিকে আল্লাহ আকবর ধ্বনি উঠেছিল। মানুষ আল্লাহর প্রতি কতটা কৃতজ্ঞ কতটা অনুগত সেদিন বোঝা গিয়েছিল। আমি তখন কাকড়াজান ইউনিয়নের বাগেরবাড়িতে একটি জনসভা করছিলাম। ৫টার দিকে আমার বক্তৃতার সময় যুবনেতা হাবিবুন নবী সোহেল খবরটি দিয়েছিল। খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু বলেছিলাম, কোনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা কাউকে এতদিন পর জীবন্ত পাওয়া এক বিশ্ব রেকর্ড। ঘটনাটা যে সাজানো ছিল অল্প সময়ের মধ্যেই তা ধরা পড়ে। কারণ মেয়েটির গায়ে এত চকচকা ঝকঝকা কাপড় পরা ছিল যা কল্পনাও করা যায় না। বাড়ি থেকে সেজেগুজে ¯ন্ডেœা-লিপস্টিক মেখে মেয়েরা যেমন মার্কেটে যায় প্রায় অনেকটা তেমনই ছিল। আমার এক প্রিয় শিষ্য এক কথায় বলতে গেলে ¯ন্ডেœহধন্য বদি ভাইর ছেলে উল্কার সহপাঠী জেনারেল হাসান সারওয়ার্দী। সেই হিসেবে বেশ কয়েকবার আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু রানা প্লাজার ঘটনার পর আমি আমার সব উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাই তার সঙ্গে কথা হয়নি, দেখা হয়নি। সেই সারওয়ার্দী জো বাইডেনের উপদেষ্টা নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গেছেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাওয়া কোনো দোষের নয়, অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু সেখানে সাংবাদিক সম্মেলন করা এটা একটা অসম্ভব ব্যাপার। তা অতি সহজে জো বাইডেনের উপদেষ্টা হিসেবে জনাব মিয়া আরেফি করেছেন। এসব মোটেই কোনো ভালো আলামত নয়। আমেরিকা বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় কাউকে বসিয়ে দেবে, এটা দিবাস্বপ্নের চাইতেও ভূতুড়ে ব্যাপার। আমেরিকা এত কিছু পারলে বাংলাদেশ হতো না। আর আজও আমেরিকার এত ক্ষমতা থাকলে আমরা থাকতাম না। এটা কোনো কথা হলো, আমেরিকার রাষ্ট্রদূতের বিএনপির ঘরে ঘরে দৌড়াদৌড়ি দেশের মানুষ একে কেন ভালোভাবে নেবে? আমাদের নির্বাচন আমরা করব, ভালো-মন্দ পরামর্শ দিতে পারেন এর বাইরে কিছু না। এই দেশে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী একজন প্রাতঃস্মরণীয় নেতা ছিলেন। সেই মানুষের নামের কথাও চিন্তা করলেন না-এ কি ভাবা যায়? কত শুনেছি, নামে নামে যমে টানে। জননেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী নামের তাসিরেও তো হাসান সারওয়ার্দী একটু ভালো হতে পারতেন। একবার রেশমা কেলেঙ্কারি করেছেন আবার এসব কি কেলেঙ্কারি?

বিএনপিকে নিয়ে কী বলব, বিএনপি বিশুদ্ধ একটি রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক চিন্তা-ধারায় সৃষ্ট নয়। ওরা আওয়ামী লীগ করে তাই আমরা বিএনপি করি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকরা জানপ্রাণ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছে। কমবেশি যাইহোক সেখানে আমারও রক্ত ঝরেছে। বুকের রক্ত দিতে না পারলেও দেহের পবিত্র রক্ত দিয়েছি। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে এই দেশে সরকার ছিল বহুদিন। বিএনপির আমলে হাওয়া ভবন হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে মা-বোনের সম্মান সম্ভ্রমহানি করে, লক্ষ মানুষকে হত্যা করে, ঘর-দুয়ার জ¦ালিয়ে-পুড়িয়ে পাকিস্তানি হানাদাররা যেমন ক্ষমা প্রার্থনা করেনি, জামায়াতে ইসলামী এবং তার নেতৃবৃন্দও দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চায়নি, বিএনপি নেতা তারেক রহমানও বিকল্প সরকারের হেড কোয়ার্টার হাওয়া ভবন তৈরি করে কত রাস্তাঘাটের ফকিরকে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুটতরাজে সাহায্য করেছে সে জন্য সেও ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। এ যেন সব এক সুতোয় গাঁথা মালা, সব একই ঘণ্টির ধ্বনি কোনো হেরফের নেই। সেই কবে ২০১৫ সালে বিএনপি হরতাল অবরোধ দিয়েছিল যা প্রত্যাহারের সুযোগ পায়নি। আবার সেই হরতাল অবরোধ শুরু করেছে। যারা হরতাল অবরোধ দেয় তাদের কোনো ক্ষতি হয় না, ক্ষতি হয় সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে গরিব মানুষের। বাজারে আগুন ধরে, তেল-নুন-মরিচ-পিঁয়াজ-শাক-সবজি-আদা-রসুন-মাছ-মাংস সবকিছুতেই আগুন ধরে যায়। সে আগুন নেভানোর পানি খুঁজে পাওয়া যায় না। কিছু দল তারা হরতাল-অবরোধ দিয়েই খালাস। মানুষের দুঃখ-দুর্দশার প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র কোনো ধারণা নেই, আগ্রহ নেই। সরকার এসব নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তারাও যে খুব একটা ভালো থাকবেন তা নয়। সে জন্য তারা মারাত্মক অগ্নিপরীক্ষায়। মেধা থাকলে জ্ঞান থাকলে ভালো পরীক্ষা দিলে অবশ্যই পাস করবেন। কিন্তু গায়ের জোরে নয়, ভোট চুরি করে নয়। ভোটারকে আকৃষ্ট করে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা সুস্থিতি বজায় রেখে মানুষকে পক্ষে আনতে হবে। স্বাধীনতা অর্থবহ করতে হলে মানুষকে স্বাধীনতার মর্যাদা দিতে হবে। অনেকাংশেই গরমিল আছে। সবাই যে বর্তমান সরকারের পক্ষে আদা জল খেয়ে নেমেছে, তা নয়। আবার সবাই প্রধান বিরোধী দল বিএনপির জন্য মরিয়া এটাও সত্য নয়। সে জন্য মানুষকে গুরুত্ব দিতে শিখুন মানুষকে মর্যাদা দিন। বিরোধী দলের বহু নেতা আছেন যারা দিনে বিএনপি, রাতে সরকারের সঙ্গে ওঠাবসা বা যোগাযোগ করেন। এ রকম ইমানহীনদের নিয়ে আর যা কিছুই হোক, কোনো মানবকল্যাণ হতে পারে না, দেশের কল্যাণ তো নয়ই।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গামছার দল গঠন করা হয়েছিল ২৪ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সালে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রায় দুই যুগ পূর্তি। গত ৪ঠা নভেম্বর সখিপুর পাইলট স্কুল মাঠে অনেক দিন পর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের এক বিশাল সভা হয়েছে। মাঠে জায়গা না হওয়ায় মাঠের বাইরে রাস্তাঘাটে বাজারে অসংখ্য মানুষ একত্রিত হয়েছিল। যে লতিফ সিদ্দিকীকে দেখে রাজনীতিতে এসেছিলাম সেই লতিফ সিদ্দিকী প্রধান অতিথি হিসেবে সখিপুরের সভায় উপস্থিত ছিলেন। মানুষ ভীষণ খুশি হয়েছেন। এমনিতেই সাধারণ মানুষ আমাকে তাদের আপনজনের মতো মনে করে, ভালোবাসে। রাজনৈতিক নানা উত্থাল-পাথালের মধ্যেও যে ভালোবাসা তারা দেয় সেটা খুব একটা রাস্তাঘাটে পাওয়া যাবে না। সখিপুরের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান শ ম আলী আজগর অসাধারণ মানুষ ছিলেন। সখিপুরে প্রগতিশীল রাজনীতির গোড়াপত্তন করেছিলেন তিনি। আজ কয়েক বছর হলো চলে গেছেন। তার স্ত্রীকে দেখতে গিয়েছিলাম, গিয়েছিলাম শওকত মোমেন শাজাহানের শতবর্ষীয় মাকে দেখতে। শাজাহানের মা বেঁচে আছেন কি না কয়েকদিন আগে লতিফ ভাই জিজ্ঞেস করেছিলেন। বলেছিলাম, বেঁচে আছেন এবং ভালো আছেন। তখন তিনি বলেছিলেন, সখিপুরের মিটিংয়ে যখন যাব শাজাহানের মাকে দেখে যাব। আমার তখন মনে হয়েছিল শুধু শাজাহানের মা কেন, আলমগীর-জাহাঙ্গীরের মাকেও দেখে যাই। তাই গিয়েছিলাম। তাদের শাড়ি, মিষ্টি দেওয়া হয়েছে। জাহাঙ্গীরের ভাই আলমগীর ছিল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের এক নিবেদিত নেতা-কর্মী। সড়ক দুর্ঘটনায় সে আজ একেবারে অচল। সে যাক, সখিপুরের জনসভা স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ জনসভায় রূপান্তরিত হয়েছিল। দলীয় নেতা-কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাকে যারপরনাই অভিভূত করেছে। মানুষের সেবার মনোভাব নিয়ে দল করেছিলাম। সেদিন মনে হয়েছে তার অনেকটাই সার্থক হয়েছে। সখিপুরবাসীসহ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সব নেতা-কর্মীকে সমর্থকদের আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভ কামনা জানাই।

আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশ আজ জ¦লন্ত অগ্নিকুন্ডে। প্রধান বিরোধী দল বলছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কোনো নির্বাচন নয়, তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই। তা তারা চাইতেই পারেন। রাজনীতিতে চাওয়াতে কোনো দোষ নেই। এটা ছেলের হাতের মোয়া না যে, চাইলেই পাওয়া যাবে। রাজনীতিতে যে কোনো চাওয়াকে আদায় করে নিতে হয়, অর্জন করতে হয়। দেশবাসীকে নিয়ে বিএনপির চাওয়া যদি ফলপ্রসূ করতে পারতেন কেউ বাধা দেওয়ার ছিল না। কিন্তু আমেরিকার পথ চেয়ে বসে থেকে বিএনপি তাদের নিজেদেরও ক্ষতি করছে, দেশেরও ক্ষতি করছে। অতি সম্প্রতি ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের আক্রমণ গাজার শত শত হাজার হাজার শিশু-নারী-বৃদ্ধ হত্যা বিশ্বের মুক্তিকামী বিবেকবান মানুষ কেউ মেনে নেবে না, নিচ্ছেও না। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রথম একমাত্র ভারত এবং ভুটান, আগস্টের পরে মহান সোভিয়েত ইউনিয়ন, বর্তমান রাশিয়া সরকারসহ আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু আর তাবৎ দুনিয়ার সব সরকার আমাদের বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু সব জনগণ আমাদের বিরুদ্ধে ছিল না। আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মান, ফ্রান্স এমনি প্রায় সব দেশের মানুষ এক পর্যায়ে আমাদের পক্ষে এসে দাঁড়িয়ে ছিল। বর্তমান গাজার ওপর ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে তেমনটাই হয়েছে। আমেরিকা, ব্রিটেনসহ পৃথিবীর নানা দেশে প্যালেস্টাইনের পক্ষে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লাখো জনতা রাস্তায় নেমেছে। ব্রিটেনের ইতিহাসে সব থেকে বড় জমায়েত হয়েছে ফিলিস্তিনের পক্ষে। এসবের পরও আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজাকে ধ্বংস না করে থামবেন না, ইসরায়েলকে তিনি সর্বোতভাবে সমর্থন জুগিয়ে যাবেন। অথচ তার গদি নিয়ে এখন টানাটানি শুরু হয়ে গেছে। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইসরায়েলে আক্রমণের নিন্দা করেছেন। বিবেকবান বিশ্ব নিন্দায় সোচ্চার। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর গদি যায় যায় এমন অবস্থাতে আমাদের দেশে আমেরিকা এবং আমেরিকার রাষ্ট্রদূত বিএনপির নেতাদের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন। মনে হচ্ছে, এ যেন আমেরিকারই কোনো অংশ, এমনটা হতে দেওয়া যায় না। আমার বিশ্বাস, কোনো মুসলমান সে বিএনপি করলেও আমেরিকার এই ন্যক্কারজনক ঘটনার পর আমেরিকার সমর্থন নেওয়া বিএনপির হয়ে কথা বলবেন না, সমর্থন করবেন না। আল্লাহর দুনিয়ায় ইসরায়েলি এজিদদের কবে পরাজয় হবে সেই পরাজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। ভোটারের ইচ্ছামতো স্বতঃস্ফূর্ত উৎসবমুখর একটি নির্বাচন হবে, নির্বাচন কমিশন তার সব বাধা-নিষেধ তুলে নেবেন যে কোনো ভোটার ভোটে দাঁড়াতে পারবে এই নিশ্চয়তা প্রত্যাশা করি।

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর