মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্নকারী অভিশপ্ত ও জাহান্নামি

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্নকারী অভিশপ্ত ও জাহান্নামি

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে ইসলাম অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। তাকওয়া ও আত্মীয়তা এ দুটো বিষয় কোরআনে একসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। সুরা নিসায় আল্লাহ বলেছেন, ‘হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তাঁর থেকে তাঁর সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন। আর বিস্তার করেছেন তাদের দুজন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর এবং আত্মীয়তার সম্পর্কের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সজাগ ও সচেতন রয়েছেন’ (সুরা নিসা-১)। এ আয়াতের দিকে তাকালে দেখা যায়, আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে তাকওয়া তথা আল্লাহকে ভয় করার উপদেশ দিচ্ছেন। আল্লাহকে ভয় করার যৌক্তিকতা হিসেবে মানুষের ক্রমবিকাশের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন আল্লাহতায়ালা। সেখানে দেখা যায়, সমগ্র মানবজাতি সৃষ্টি হয়েছে একজন মানুষ থেকে। তাই কোনো না কোনোভাবে মানুষ এক জাতি ও আত্মার বন্ধনে আবদ্ধ। তাই আল্লাহতায়ালা মানুষকে সাবধান করে বলে দিয়েছেন, তোমরা আত্মীয়তার ব্যাপারে সতর্ক থাক। কেননা আল্লাহ নিজে তোমাদের ব্যাপারে সজাগ ও সচেতন রয়েছেন। হাদিস শরিফ থেকে জানা যায়, আত্মীয়তার বন্ধন ঠিক রাখাকে আল্লাহ নিজের বন্ধন ঠিক রাখার সঙ্গে তুলনা করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘স্বয়ং আত্মীয়তা আল্লাহকে বলল, আমাকে বিচ্ছিন্ন করা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। আল্লাহ বলেন, হ্যাঁ, তবে তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও, যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে আমি তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখব এবং যে তোমাকে ছিন্ন করবে আমি তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করব? তা শুনে আত্মীয়তা বলল, অবশ্যই। তখন আল্লাহ বললেন, তোমার জন্য এরূপই করা হবে’ (বুখারি ও মুসলিম)। অন্য হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা বর্ণনা করেছেন, ‘এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞাসা করেন, আমার কিছু আত্মীয় এমন আছে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক যতই ঠিক রাখতে চাই ততই তারা ছিন্ন করে। যতই সৎ বা ভালো ব্যবহার করি তারা ততই দুর্ব্যবহার করে। সহনশীলতা অবলম্বন করলেও তারা বুঝতে চায় না। তখন রসুলুল্লাহ বললেন, যদি ব্যাপারটি এমনই হয়, যেমন তুমি বললে তাহলে তুমি তাদের অতি কষ্টের মধ্যে নিক্ষেপ করলে। আর তুমি তাদের সঙ্গে যেভাবে ব্যবহার করছ, তা যদি অব্যাহত রাখতে পার তাহলে আল্লাহ সর্বদা তোমার সাহায্যকারী থাকবেন’ (মুসলিম)। হজরত আলী (রা.) তাঁর ছেলেকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, ‘হে বৎস! কখনো রক্তের সম্পর্ক ছিন্নকারীর সঙ্গে চলবে না। কেননা আমি আল্লাহর কিতাবে তিন জায়গায় তাদের অভিশপ্ত আখ্যায়িত হতে দেখেছি।’ কথিত আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একবার এক সভায় রসুল (সা.)-এর হাদিস বর্ণনাকালে বললেন, ‘আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্নকারী এ সভা ছেড়ে চলে যাও। কেননা তার সঙ্গে একত্রে বসতে আমি বিরক্ত বোধ করি।’ এ কথা শুনে সভাস্থলের পেছন দিক থেকে এক যুবক উঠে চলে গেল। সে সোজা তার ফুফুর কাছে চলে গেল। যার সঙ্গে তার বহু বছর ধরে সম্পর্ক খারাপ ছিল। সে তার সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করল।

 লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি পীরসাহেব, আউলিয়ানগর

সর্বশেষ খবর