বুধবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্মার্ট বাংলাদেশ রূপান্তরের রূপকার

প্রফেসর মো. শহীদুজ্জামান মিয়া

বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর উন্নয়নের নেতৃত্বের রোল মডেল। ২০৪১ সালের মধ্যে এ দেশটি হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আর এর রূপকার হচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সাল থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ক্রমাগত উন্নতি ও সমৃদ্ধি ঘটতে শুরু করে। ইতিপূর্বে যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে দেশের অর্থনীতি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রাজনীতি ছিল দিক নির্দেশনাহীন। পরবর্তীকালে ২০০৯ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি, অবকাঠামো গত উন্নয়ন ও রাজনীতি পেয়েছে নতুন গতি। বাংলাদেশের অর্জনগুলো আজ দৃশ্যমান এবং সর্বজন স্বীকৃত। ২০০৯-২০২৩ এই সময়কার উন্নয়নের দিকে তাকালে দেখা যায় বিস্ময়কর উত্থান হয়েছে বাংলাদেশের। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ব্যবস্থা, গৃহহীনদের আশ্রয়ণ, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানি মুখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, ২৮টি হাইটেক পার্ক, পোশাক শিল্প, ঔষধশিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, রিজার্ভ বৃদ্ধি, তথ্য-প্রযুক্তি বৃদ্ধিসহ নানাবিধ অর্থনৈতিক সূচকে দেশের অভাবনীয় অগ্রগতি হয়েছে তার নেতৃত্বে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন নয় তা বাস্তবে রূপ পেয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো রোহিঙ্গা ইস্যু। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দ্বারা শুরু হওয়া গণহত্যা থেকে রক্ষা পেতে প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বিগত কয়েক দশকে নির্যাতিত প্রায় ৩ লাখের অধিক রোহিঙ্গা আগেই বাংলাদেশে অবস্থান করছিল। বিশাল জনসংখ্যার এই দেশে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। কিন্তু মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও মানবিক নেতৃত্বের কারণে তাদের আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হয়। রোহিঙ্গাদের সব মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মিয়ানমারকে তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মহলেও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে অবদান রাখার জন্য তাকে নিয়ে প্রচ্ছদ করেছে নেদারল্যান্ডের নামকরা ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিন। প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে শিরোনাম করেছে “শেখ হাসিনা : মাদার অব হিউম্যানিটি” নামে।

একাধিক মেগা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন যেমন- প্রমত্তা পদ্মা নদীতে সড়ক ও রেল সেতু নির্মাণ নিজস্ব অর্থায়নে। রাজধানী ঢাকাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে গ্রহণ করা হয়েছে একাধিক প্রকল্প। (ক) মেট্রোরেল (খ) উড়ালসড়ক (গ) এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে উপকৃত হচ্ছে ঢাকাবাসী। সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের মাধ্যমে অন্যতম সুপরিসর ও নান্দনিক বিমানবন্দরের খেতাব পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের যানজট নিরসনে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ভূগর্ভস্থ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ ট্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ অবকাঠামোগত উন্নয়নের এক মাইল ফলক অতিক্রম করতে পেরেছে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার ক্ষেত্রে একাধিক মেগা প্রজেক্ট যথা পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সেক্টরে পরিপূর্ণতা অর্জন করেছে। এভাবে সমগ্র বাংলাদেশকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের এক রোল মডেলে পরিণত করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সাহসী ও সময়োপযোগী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ আজ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ৫৭তম দেশ হিসেবে আমরা স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য হয়েছি। পরমাণু বিদ্যুৎ প্রথম ইউনিটের লাইসেন্স প্রাপ্তির মাধ্যমে ‘নিউক্লিয়ার নেশন’ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব পরমাণু ক্লাবের গর্বিত সদস্য হয়েছে। এ ভাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। সমগ্র বিশ্বের কাছে তিনি আজ উন্নয়ন নেতৃত্বের রোল মডেল হিসেবে সুপরিচিত, ভূষিত হয়েছেন একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কারে। বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য গ্লোবাল অ্যালায়ান্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমোনাইজেশন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননায় ভূষিত করেন। এভাবে তিনি ইউনিসেফ কর্তৃক ভূষিত হন-

(i) “চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ।” সম্মাননায়

(ii) এ ছাড়াও তিনি “আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড” প্রাপ্ত হন

(iii)    অর্জন করেন “গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড”

(iv) “চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ” পুরস্কার লাভ করেন।

শেখ হাসিনার বিজ্ঞ ও সাহসী সিদ্ধান্ত এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ উদ্যোগসমূহ আজ বাংলাদেশকে একটা সম্মানজনক অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে। সাফল্য অগণিত; এত সব সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবেই জাতিসংঘ কর্তৃক বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায় উত্তরণের চূড়ান্ত অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন। এ অদম্য অগ্রযাত্রায় নিজেদেরকে শামিল হতে হবে এবং প্রত্যেককে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে। সব বাধা অতিক্রম করে ২০৪১ সালের মধ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ রূপান্তরিত হবে। এ ভাবেই ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান বাস্তায়নে শেখ হাসিনা সুদূর প্রসারী চিন্তা ও সাহসী নেতৃত্বের বহিঃপ্রকাশ। যা বাস্তবায়ন এ দেশের সতেরো কোটি মানুষের সার্বিক সহযোগিতায় সম্ভব হবে।

লেখক : অধ্যক্ষ, সরকারি মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ, কাগমারী, টাঙ্গাইল

সর্বশেষ খবর