শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইসলামের ইতিহাসে ফিলিস্তিনের গুরুত্ব

রফিকুল ইসলাম আল মাদানী

ইসলামের ইতিহাসে ফিলিস্তিনের গুরুত্ব

মুসলিম ইতিহাসে একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ বায়তুল মুকাদ্দাস। এর অপর নাম মসজিদুল আকসা। যা ফিলিস্তিনের জেরুজালেম শহরে অবস্থিত। মসজিদুল আকসা অর্থ দূরবর্তী মসজিদ এবং বায়তুল মুকাদ্দাস অর্থ পবিত্র ঘর। এ মসজিদটি মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান। প্রথম পবিত্র স্থান হলো মসজিদুল হারাম বা পবিত্র কাবাঘর এবং দ্বিতীয়টি হলো মসজিদে নববী। মহানবী (সা.) মেরাজ গমনকালে প্রথমে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় পৌঁছেন। ওই মসজিদে বহু নবী-রসুল তাঁর পেছনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। তিনি তাদের ইমামতি করে সাইয়্যেদুল মুরসালিনের উজ্জ্বল ইতিহাস স্থাপন করেন। এ পবিত্র মসজিদ থেকেই রসুলুল্লাহ (সা.) ঊর্ধ্বাকাশে তথা মেরাজ গমন করেছিলেন। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত-যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি। (সুরা বনি ইসরাইল-১) এই বিশ্বে প্রথম নির্মিত মসজিদ বায়তুল্লাহ মক্কা নগরীতে। আর দ্বিতীয় মসজিদটি হলো বায়তুল মুকাদ্দাস জেরুজালেমে। পবিত্র কাবা শরিফ প্রতিষ্ঠার ৪০ বছর পর স্থাপিত হয় এই মসজিদুল আকসা। (সহিহ বুখারি) নির্ভরযোগ্য বর্ণনা মতে, দুটি পবিত্র ঘরই হজরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে স্থাপন করা হয়। পবিত্র কাবাঘর হজরত ইবরাহিম (আ.) এবং মসজিদুল আকসা হজরত সুলাইমান (আ.)-এর মাধ্যমে বিশেষভাবে সংস্কার করা হয়। প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) ইসলামের সূচনালগ্নে ১৬ বা ১৭ মাস ওই মসজিদুল আকসার দিকে নামাজ আদায় করেছেন। পরবর্তীতে মহান আল্লাহর নির্দেশে মুসলমানদের কেবলা মক্কার দিকে পরিবর্তিত হয়। (বাকারা-১৪৪) এটি মুসলমানদের প্রথম কেবলা। মক্কা এবং মদিনার পর তৃতীয় পবিত্র স্থান। এক হাদিসের আলোকে এই মসজিদে নামাজ আদায় করলে সাধারণ মসজিদের তুলনায় ৫০০ গুণ অধিক বিনিময় লাভ হবে। (বাযযার-৪১৪২, বায়হাকি-৪২১১ সহিহ)। উল্লেখ্য, পবিত্র কাবা ঘরে নামাজ আদায়ে ১ লাখ গুণ এবং মসজিদে নববীতে ৫০ হাজার গুণ বেশি বিনিময় লাভ হয়। এ মসজিদ তিনটি ইসলামের শ্রেষ্ঠতম নিদর্শন। রসুলে করিম (সা.) মক্কার মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদে নববী ও বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদের উদ্দেশে সফরকে বিশেষভাবে সওয়াবের কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যা অন্য কোনো মসজিদ সম্পর্কে করেননি। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)। বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদ এবং তার আশপাশের এলাকা বহু নবীর স্মৃতিবিজড়িত। তাদের সমাধিস্থল। এ পবিত্র নাম শুধু একটি স্থানের সঙ্গে জড়িত নয়। বরং এ নাম সব মুসলমানের ইমান ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ইসলামী ইতিহাসের আলোচিত বিষয়। ঐতিহাসিকভাবেই এ অঞ্চলটি মুসলমানদের পবিত্র স্থান। ১৯৪৮ সালের বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে অবৈধ ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর