রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নিষ্ঠুরতার দুনিয়াতে তরবারি হাতে খুনিরা

নঈম নিজাম

নিষ্ঠুরতার দুনিয়াতে তরবারি হাতে খুনিরা

সে রাতে কলকাতার দৃশ্যপট ছিল অন্যরকম। বাংলাদেশের পতাকা হাতে উচ্ছ্বসিত তরুণরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। পার্কস্ট্রিট, নিউমার্কেটসহ আশপাশের সড়কগুলো যেন একখণ্ড বাংলাদেশ। পরদিন প্রত্যাশার আলো নিয়ে সবাই ইডেনে গেলেন। স্টেডিয়াম থেকে ফিরলেন একরাশ হতাশা নিয়ে। সাকিবের নেতৃত্বের ব্যর্থতায় এবার বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বনাশ ঘটে গেছে। সাকিব অবশ্যই বাংলাদেশের একজন সেরা খেলোয়াড়। প্রশংসা করি। ভালো খেলার অর্থ এই নয়, তিনি দক্ষতা নিয়ে টিমের নেতৃত্ব দিতে পারবেন। সাকিব যতটা সেরা ক্রিকেটার ততটাই ব্যর্থ দলনেতা। তাকে অধিনায়ক করার সিদ্ধান্ত ছিল ভুল। মাহমুদুল্লাহকে তিনি টিমে রাখতেই চাননি। অথচ সব ম্যাচে সবচেয়ে নির্ভরশীল ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। বাংলাদেশ ক্রিকেট সাকিবের হাত ধরে আবার ফিরে চলেছে আদি যুগে। আবার কীভাবে বিশ্বকাপে এ দল চাঙাভাব নিয়ে ফিরবে জানি না। রাজনীতি হোক আর খেলা, সবকিছুতে নেতৃত্বের জন্য দক্ষতার প্রয়োজন হয়। সে দক্ষতা না থাকলেই হয় সর্বনাশ। গতি ধরে রাখতে প্রয়োজন ধারাবাহিকতার। নেতাবিহীন রাজনৈতিক দল চলে না। আকাশি বার্তায় কর্মীরা ঝুঁকি নেবে। সে ঝুঁকি সফল না হলে ঘরে ফিরবে হতাশা নিয়ে।

পুরনো প্রবাদ, সাফল্য অর্জনের চেয়ে ধরে রাখা কঠিন। ব্রিটেনে এক ভদ্রলোক লটারিতে ১০ মিলিয়ন জিতলেন। সবাই ভেবেছিলেন এই ভদ্রলোকের জীবনে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। বাকি জীবন সুখে-শান্তিতে কাটিয়ে দেবেন। ১০ মিলিয়ন একদিন শত পার হবে। ভাবনার সঙ্গে অনেক সময় বাস্তবতা মেলে না। শেষ পর্যন্ত সেই ভদ্রলোকেরও সুখের দিন থাকল না। মাত্র দেড় বছরের মধ্যে দেউলিয়া হয়ে গেলেন। সবকিছু হারিয়ে ফিরে গেলেন আগের চেয়ে খারাপ অবস্থানে। কেন এমন হলো এ নিয়ে সবাই আলাপ শুরু করলেন। পরে দেখা গেল টাকা পাওয়ার পর তা আর কাজে লাগাতে পারেননি। জুয়া খেলে অধিক লোভে অনেক নষ্ট করেছেন। আবার সম্পদ কেনায়ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা ছিল না। মানি ম্যানেজমেন্ট বলে একটা কথা আছে। সবাই সবকিছু সামলে রাখতে পারে না। এ লোকও পারেননি। সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারার কারণে আবার তাকে আগের অবস্থানে ফিরে যেতে হয়েছে। রাজনীতিও এক ধরনের সাপ-লুডু খেলা। সময়ের সিদ্ধান্ত ঠিকভাবে নিতে হবে। অন্যথায় খেসারত দিতে হয়। মই বেয়ে ওপরে উঠে সাপের মাথায় বসে নিচে পড়তে হয়।

বিএনপির এক বন্ধু সেদিন বললেন, ভারতের সঙ্গে বিরোধটা কোথায় আমাদের? জবাবে বললাম, এটা আপনারা ভালো বলতে পারবেন। ভদ্রলোক আবার বললেন, চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্রের বিষয় ছাড়া আর কিছু আছে কি? বললাম, এমন একটা ঘটনা একটা দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের সম্পর্ক নষ্টের জন্য যথেষ্ট। অন্য কিছুর দরকার নেই। আমার বাড়িতে হামলা করতে আপনি ভাড়াটিয়া ঠিক করবেন, অস্ত্র পাঠাবেন তার পরও আমি কেন আপনার সঙ্গে থাকব? চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র সাপ্লাই দিয়েছিল আইএসআই। তখনকার একটি সংস্থার তত্ত্বাবধানে সে অস্ত্র খালাস হচ্ছিল। ভাগ্য ভালো পুলিশ সবকিছু জেনে ধরিয়ে দিয়েছিল। অন্যথায় বড় সর্বনাশ হতে পারত। সর্বনাশা সে স্মৃতি ভারত কী করে ভুলবে? ঘটনার এখানেই শেষ নয়। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফরে এলেন। সে সময় তখনকার বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আচরণ ছিল কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। পঙ্কজ শরণ তখন ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার। তাঁর সঙ্গে বসে বিএনপি শিডিউল দিল ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। সময়ও নির্ধারণ হলো। প্রণব মুখার্জি ঢাকায় এসে দেখলেন বিপরীতমুখী আচরণ। ভারতের রাষ্ট্রপতির ঢাকা সফরকালে বিএনপি হরতাল দিল। বেগম খালেদা জিয়া সে হরতালের অজুহাতে সাক্ষাৎ করলেন না ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে! তিনি ভুলে গেলেন তাঁর সর্বশেষ ভারত সফরের কথা। সে সফরে ভারত লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়েছিল বেগম খালেদা জিয়াকে। রাষ্ট্রপতি ভবনে দিয়েছিল সব দলকে নিয়ে ডিনার। খালেদা জিয়ার নৈশভোজের আয়োজক ছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। ভারত সেসব কী করে ভুলে যাবে?

ইতিহাস ভুলে গেলে হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে নয়াদিল্লিতে ভারতীয় প্রতিনিধিদের বৈঠককালে বাংলাদেশের আগামী ভোট প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। উভয় দেশ নিজস্ব মতামত তুলে ধরেছে। ভারতের পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। দীর্ঘ আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ বারবার আসে। ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশ এখন সারা দুনিয়ার কাছে নতুন উচ্চতা নিয়ে। তাই এ আলোচনা ইতিবাচক। অন্যদিকে ভারত দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। এ সম্পর্কের ধারাবাহিকতা চাওয়াটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়াটাও খারাপ কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বিশাল বাজার যুক্তরাষ্ট্র। অর্থনীতিসহ বিভিন্নভাবে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের মেইনস্ট্রিমে আমাদের প্রবাসীরা ভালো করছেন। এ সম্পর্কের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার পক্ষেই বাংলাদেশ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সতর্কতার সঙ্গে বাংলাদেশকে চলতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এ চাওয়ার বিপক্ষে কেউ নয়। বাংলাদেশে ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটা সময় সবচেয়ে বেশি লড়াই করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখনো তিনি নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন একটা মর্যাদার আসন নিয়েছে। এ আসন ধরে রাখতেই আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে প্রত্যাশা করছি।

সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিন শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করেছে। এ প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে আয়রন লেডি হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিছু নেতিবাচক সমালোচনা থাকলেও বিশ্বরাজনীতিতে শেখ হাসিনার অভিজ্ঞতার প্রশংসা করা হয়েছে। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমন, কভিড ও যুদ্ধকালীন অর্থনীতি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রশংসা করা হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা অনেকে ভালোভাবে নিতে পারে না। আমি সবকিছু ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই। দূর থেকে সব সময় বড় গাছটাই চোখে পড়ে। লতাপাতা দৃষ্টিতে আসে না। বাংলাদেশ আজ অর্থনীতি, কূটনীতি, রাজনীতিতে একটা অবস্থান তৈরি করেছে। একটা সময় বাংলাদেশ বিশ্বে শিরোনাম হতো খরা, বন্যা, দুর্ভিক্ষ নিয়ে। এখন বাংলাদেশ আলোচনায় আসে অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ে। এটা বিশাল সাফল্য। এ সাফল্য নেতিবাচকভাবে নেওয়ার কিছু নেই। বরং বাংলাদেশের এই উঠে দাঁড়ানো নিয়ে গর্ব করতে হবে। ভাবতে হবে আমাদের আগামী নিয়ে। কাজ করলে সমালোচনা হবে। কোনো কিছু না করলে আলোচনার সুযোগ নেই।

আমার দাদি বলতেন, সমস্যা তোমার, সমাধানও তোমাকে করতে হবে। অন্য কেউ এসে সমাধান করবে ভাবলে লাভ হবে না। বেলা শেষে হতাশা বাড়বে। মাটি হবে রাতের ঘুম। আসলেও তাই। আজকাল অনেক রাজনৈতিক দল ভাবে তাদের জটিলতার অবসান বিদেশিরা করবে। একবারও ভাবে না দেশ আমার। এ যুগে এ সময়ে বিদেশি ঝাড়ফুঁকে অনেক কিছুই অসম্ভব। বাস্তবতায় থাকতে হবে। বাস্তবতা না বুঝলে সর্বনাশ। সব মিলিয়ে একটা জটিল সময় অতিবাহিত করছি আমরা। একদিকে ইতিবাচক ধারা, অন্যদিকে ঘরে-বাইরে একটা অনিশ্চয়তা, অস্বস্তি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে বিদেশিরা কথা বলতে পারবে। সমাধান দিতে পারবে না। বৈঠক হবে। কূটনৈতিক অঙ্গন সরগরম থাকবে। এক দেশ অনুরোধ করবে আরেক দেশকে। এসব আলাপ-আলোচনার ভিতরেই আগামী জানুয়ারিতে শেষ হবে ভোট। সুনামি আর ঝড়ের আলোচনা এবং গল্পগুলো সীমাবদ্ধ থাকুক আড্ডার আসরে। বাংলাদেশের জন্য আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধান অনুযায়ী হয়ে যাক নিরপেক্ষ ভোট। সে ভোটে সবাই অংশগ্রহণ করুক। জনগণ রায় দিতে ভুল করে না। অন্য দেশের ওপর ভরসা না করে সবারই উচিত ভোটে আসা।

ভোট নিয়ে গুজবে কান দিয়ে লাভ নেই। সামাজিক অনুষ্ঠানে বের হলে মানুষের মনের ভিতরের অনেক প্রশ্ন শুনি। ফেসবুক, ইউটিউবের গুজব নিয়ে মানুষ আলোচনা করে। অনেকে এখন এসব গুজব নিয়েছেন বিনোদন হিসেবে। বিশ্বাস করেন না। তার পরও দেখেন। একদিন শুনলাম প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারছেন না। বাস্তবে তিনি তখন ওয়াশিংটনে বৈঠক করছেন দেশটির সরকারের প্রভাবশালী উজরা জেয়ার সঙ্গে। তাঁরা কফি পান করছেন। আলাপ করছেন বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। কিছুদিন আগে আমরা কয়েক বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। সামাজিক মাধ্যমে দেখলাম কিছু লোক চিৎকার করছেন আমাদের নিয়ে। বলছেন, তারা প্রবেশ করতে পারবেন না যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রের রেস্টুরেন্টে বসে অদ্ভুত সব প্রচারণা দেখছিলাম বন্ধুরা। গুজব নিয়ে মন খারাপের কিছু নেই। বিশ্বে বাংলাদেশের উচ্চতর অবস্থান তৈরি হয়েছে। উন্নত বিশ্ব সব আলোচনায় রাখছে বাংলাদেশকে। এ নিয়ে হিংসুটেরা নানামুখী প্রচারণায় বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বিভ্রান্তি, গুজব ছড়িয়ে তারিখ দিয়ে সরকার বদল হয় না।

মনের ভিতরে অশান্তি থাকলে মানুষ অন্যের ভালো কাজের প্রশংসা করতে পারে না। উন্নতি, সমৃদ্ধি, এগিয়ে চলাকে দেখে নেতিবাচকভাবে। সুস্থতা হারিয়ে গেছে। সামাজিক মাধ্যমের সাইবার বুলিংয়ের মিথ্যা কুৎসা, নোংরামি দেখে অন্যের অমঙ্গল কামনায় কেউ কেউ আনন্দিত হয়, সবাই নয়। সৃষ্টির পর থেকেই একটা ভয়াবহ হিংসা নিয়ে মানুষ পথ চলছে। আদিম মানুষ হজরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্রের একজন হত্যা করেছিল আরেকজনকে। নিষ্ঠুরতা থেকে রেহাই পাননি নবী, রসুল, ধর্মীয় নেতারা। দেশে দেশে মানুষই হত্যা করেছে তাদের জাতির পিতাদের। উন্নত বিশ্ব তৈরির কারিগরদের। যিশুখ্রিস্ট বা হজরত ইসা (আ.)-কে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করেছিল মানুষই। হজরত মুসা (আ.)-কে পুরো জীবন তারা রেখেছিল অস্বস্তিতে। শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) এক দিনের জন্যও শান্তি পাননি। তিনি হিজরত করে মদিনায় যেতে বাধ্য হয়েছিলেন আপনজনদের নিষ্ঠুরতা সহ্য করতে না পেরে। অসুস্থ দুনিয়াতে সুফি-সাধকরাও শান্তিতে থাকতে পারেন না। খারাপদের কাছে কোনো সুস্থতা ভালো লাগে না। তারা বেহেশত দেখলে আফসোস করে দোজখ দেখেনি কেন। এ নিয়ে একটা গল্প আছে। একবার স্বর্গে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন ঈশ্বর। এ ঘোষণা শুনে সবাই জড়ো হলেন। সবাই বেহেশতে যাওয়ার জন্য তৈরি হলেন। সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল এক ঘণ্টা। নির্ধারিত সময়ের ভিতরে সবাইকে নরক থেকে বের হয়ে স্বর্গে যেতে হবে। বের হওয়া নিয়ে বিরোধে লিপ্ত হলো মানব সম্প্রদায়। একজন সামনে গেলেই পেছনের সারির লোকজন সামনের জনকে আটকে রাখে। এভাবে টানাটানিতে এক ঘণ্টা পার হয়ে গেল। কেউই আর স্বর্গে যেতে পারল না। নরকেই সবাইকে থাকতে হলো। কাজে লাগল না সাধারণ ক্ষমার সময়সীমা। ঈশ্বর বিরক্ত হলেন মানুষের কাণ্ডে। তারপর বললেন, তোরা নরকেই থাক।

মানুষের হিসাবগুলো বড় অদ্ভুত। কারও সুখের সমুদ্র চিরকাল থাকে না। সৃষ্টির পর থেকে কারণে-অকারণে মানুষ যুদ্ধ করছে। কারও যুদ্ধ ছিল দুনিয়ার সৃষ্টিশীলতা টিকিয়ে রাখতে। কারও ছিল পৃথিবীকে নরক বানাতে। ধ্বংসলীলা আর সৃষ্টিশীলতা থেকে মানুষ জীবিতকালেই স্বর্গ-নরক দেখতে পারে। তার পরও ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে কেউ সরে না। আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের রূপকার আব্রাহাম লিংকন খুনের শিকার হন। তিনি সস্ত্রীক থিয়েটার দেখছিলেন। তাঁকে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীর সঙ্গে কোনো ধরনের শত্রুতা ছিল না। বিরোধ ছিল না রাষ্ট্র নিয়েও। তার পরও তাঁকে ছাড়া হয়নি। আব্রাহাম লিংকন বিভক্ত মার্কিনিদের এক করেছিলেন। তিনি গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি করেছিলেন। বিলুপ্ত করেছিলেন দাসপ্রথা। মুক্তি দিয়েছিলেন কালোদের। ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর শেষ জীবনটা ছিল অহিংসা নীতি নিয়ে। তিনি হানাহানি-সংঘাতের বিপক্ষে ছিলেন। তার পরও হত্যার শিকার হন ভারতের স্বাধীনতার পরপরই। খুনিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তুমি কেন গান্ধীকে হত্যা করলে? জবাব এলো, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বন্ধের চেষ্টা গান্ধী কেন করেছিলেন। বড় অদ্ভুত! ধর্মের নামে মানুষ হত্যা বন্ধের আহ্বান ভালো লাগেনি খুনির। তাই খুন করলেন গান্ধীকে। আমাদের এ ভূখণ্ড কখনো স্বাধীন ছিল না। দেশটি স্বাধীন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির পিতা হিসেবে সদ্যস্বাধীন দেশটি বিশ্বে অন্য উচ্চতায় গড়তে গিয়ে তিনি খুনিদের টার্গেট হন। শিকার হন আন্তর্জাতিক চক্রান্তের। নিষ্ঠুরতার দুনিয়াতে খুনিরা হত্যা করেছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। তাঁর অপরাধ তিনি একটি দেশ উপহার দিয়েছিলেন। সদ্যস্বাধীন দেশটিকে উন্নত-সমৃদ্ধ করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ভাড়াটিয়া খুনি-দুর্বৃত্তদের তা ভালো লাগেনি। হিংসার দুনিয়াতে ভালো কিছু চাওয়াই এক ধরনের অপরাধ। দুনিয়াকে সমৃদ্ধ করা মানুষ তা জানে। আর জেনেই তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। শ্রম-মেধা দিয়ে তৈরি করেন ইতিবাচক উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। বেলা শেষে গণমানুষ থাকে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিত্বদের সঙ্গেই।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

সর্বশেষ খবর