রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আসমান-জমিন দেখে আমরা যেন আল্লাহর কুদরত নিয়ে চিন্তা করি

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

আল্লাহতায়ালা আমাদের আরেকটি মহা নেয়ামত দান করেছেন। তা হলো দৃষ্টিশক্তি। উদ্দেশ্য হলো, যেন আমরা আসমান-জমিন দেখে আল্লাহর কুদরত নিয়ে চিন্তা করি। নিজের শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে গবেষণা করে আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্বীকার করি, অর্থাৎ মনে মনে এ কথা চিন্তা করি যে, দৃষ্টিশক্তি তো আমার নিজের সৃষ্টি নয়, কোনো দোকানেও পাওয়া যায় না, কোনো গুদামেও সংরক্ষিত থাকে না, আমরা তা কোথা থেকে পেলাম? এ যোগ্যতা আমাকে কে দান করল? এভাবে ভাবতে ভাবতে আমাদের অন্তরে এ কথা বুঝে আসে যে, এ দৃষ্টিশক্তি কোনো বিজ্ঞানীর আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির ব্যবহারে সৃষ্টি হয়নি। এটা কোনো পণ্ডিত গবেষকের গবেষণার ফলও নয়। বরং যে মহান আল্লাহ আমাদের কাজ করার জন্য দুটি হাত দিয়েছেন, শোনার জন্য দুটি কান দিয়েছেন, ঘ্রাণ নেওয়ার জন্য নাক দিয়েছেন এবং চলার জন্য দুটি পা দান করেছেন সেই সুমহান আল্লাহই আমাদের দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন। এটা আমাদের প্রতি আল্লাহতায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহতায়ালা মানুষকে আরও অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন যা গুনে বা হিসাব করে শেষ করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা নাহল : ১৮) এভাবে আল্লাহতায়ালার অপার অনুগ্রহ আর অসীম কুদরতের কথা ভাবতে মানুষের মনে এক বিশেষ অনুভূতি সৃষ্টি হবে। সেই বিশেষ অনুভূতির ফলে সে দীনের দিকে ধাবিত হবে এবং জবান দ্বারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কথার স্বীকৃতি দান করবে যে, আল্লাহতায়ালা ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। তিনিই আমাদের একমাত্র রব ও ইলাহ। মানুষের এ স্বীকৃতির ফলে সে জান্নাতবাসী হয়ে যাবে।

হাদিসে পাকে ইরশাদ হয়েছে : যে ব্যক্তি এ কথা বলবে যে, আল্লাহতায়ালা ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

মানুষ যখন এ কথা বলবে যে, ‘হে আল্লাহ! তুমি যদি আমাকে জবান দান না করতে তাহলে আমি আমার স্ত্রী-পুত্র কারও সঙ্গে কথা বলতে পারতাম না। লাখ লাখ মানুষের সামনে আমি বক্তব্য দিতে সক্ষম হতাম না। তুমিই আমাকে বাকশক্তি দান করেছ। তাই একমাত্র তুমিই আমার মাবুদ। তুমি ছাড়া আর কেউ আমার উপাস্য হতে পারে না। আমি তোমাকে ছাড়া আর কারও ইবাদত-বন্দেগি করব না; তখন আল্লাহপাক খুশি হয়ে বলবেন, সুখ-সমৃদ্ধি ও অর্থসম্পদের প্রাচুর্যে বাস করেও আমার বান্দা যেহেতু আমাকে চিনতে পেরেছে এবং নানা ধরনের পারিপার্শ্বিক প্রতিবন্ধকতার অভ্যন্তরে থেকেও সে তার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে আমার মারেফত হাসিল করতে পেরেছে, সঙ্গে সঙ্গে মুখেও আমার অস্তিত্ব ও তাওহিদের স্বীকৃতি দিয়ে কালেমায়ে তাইয়্যেবাহ পাঠ করেছে, তাই আমি তার জীবনের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে তাকে জান্নাত দান করলাম। আসলে আল্লাহতায়ালা মানুষকে জাহান্নামে পাঠানোর জন্য সৃষ্টি করেননি। মানুষ দোজখে গিয়ে দুঃখকষ্টের সম্মুখীন হোক আল্লাহ তা চান না। আমলের পাল্লায় মৃত্যুর পর মানুষকে আল্লাহর দরবারে দাঁড়িয়ে জীবনের হিসাব দিতে হবে। তখন প্রতিটি আমলকে বাহ্যিক আকৃতিতে মানুষের সামনে হাজির করা হবে। তাই আমাদের উচিত সর্বদা আমলের পাল্লা ভারী করার ফিকির করা। একটি জিকিরের আমলের কথা মনে পড়ল। তা হলো যদি কেউ অন্তর পাকসাফ করে মনে দৃঢ়বিশ্বাস নিয়ে ইখলাস ও গভীর মহব্বতের সঙ্গে পড়ে, তবে আল্লাহতায়ালা এর সওয়াব দিয়ে আসমান ও জমিনকে ভরপুর করে দেবেন। জিকিরের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : পবিত্রতা ইমানের অংশ, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ মিজানের পাল্লা ভারী করবে। ‘সুবহানাল্লাহ’ ও আলহামদু লিল্লাহর সওয়াবে আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী খালি জায়গা ভরপুর হয়ে যাবে। নামাজ হবে নুর, সদকাহ হবে দলিল, ধৈর্য হবে আলোকোজ্জ্বলতা আর কোরআন হবে তোমার পক্ষে কিংবা বিরুদ্ধে সাক্ষী।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ

সর্বশেষ খবর