রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
ইতিহাস

বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন

গৌরবোজ্জ্বল ষাটের দশকের শুরু মূলত ১৯৬২ সালে। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনকে প্রচ্ছন্নভাবে নেয়নি পূর্ববাংলার মানুষ। তবে নির্যাতন-নিপীড়নের কারণে সাধারণ মানুষের পক্ষে এ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো কঠিন হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ এবং নেতাদের বেশির ভাগ কারারুদ্ধ হওয়ায় জনগণকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় সামরিক দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসে ছাত্রসমাজ। ১৯৬২ সালের ৩০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেফতার করা হলে ছাত্রসমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। আইয়ুব খান সামরিক শাসন পাকাপোক্ত করতে পাকিস্তানের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৫৯ সালে পাকিস্তানের শিক্ষানীতি প্রণয়নে গঠন করা হয় পশ্চিম পাকিস্তানের শিক্ষা সচিব এস এম শরীফের নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন। ১৯৬২ সালে এ কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। রিপোর্টে গরিব ও মধ্যবিত্তদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ না থাকায় ছাত্রসমাজ তা প্রত্যাখ্যান করে। ছাত্ররা এ রিপোর্টের বিরুদ্ধে সাধারণ ধর্মঘট ডাকলে তাদের দমনে সেনাবাহিনী নামানো হয়। ছাত্রমিছিলে নির্দয়ভাবে গুলি চালায় পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। শুধু ঢাকাতেই এ সময় বাবুল, গোলাম মোস্তফা, ওয়াজিউল্লা নামে তিনজন নিহত হন। বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েও দমন করা যায়নি। ১৯৬৩ ও ’৬৪ সালেও আইয়ুব-মোনায়েম বিরোধী গণ আন্দোলন অব্যাহত থাকে। গণমানুষের ঐক্যে ফাটল ধরাতে আইয়ুব খান তার মোসাহেব গভর্নর মোনায়েম খানকে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর প্রয়াস চালান। তবে এ ষড়যন্ত্র রুখে দেয় পূর্ববাংলার মানুষ। ১৯৬২ সালের ৮ জুন সামরিক আইন তুলে নেওয়া হয়। দৃশ্যত রাজনীতিকরা রাজনীতি করার অধিকার ফিরে পান। কিন্তু বিষয়টি তত সহজ ছিল না।

পূর্ববাংলার ৩ হাজার ৯৭৮ জন রাজনীতিকের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় আইয়ুবের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করার মতো লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। নিষিদ্ধ নেতাদের সিংহভাগ ছিলেন আওয়ামী লীগের। এ অবস্থায় সোহরাওয়ার্দী আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কাউন্সিল মুসলিম লীগসহ সব দলের নেতার সমন্বয়ে ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) নামে জোট গঠন করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর