শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হাজার কোটি টাকার মালিক মমতা

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

হাজার কোটি টাকার মালিক মমতা

আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে যারা দমদম বিমানবন্দর বা রেলস্টেশনে নামতেন তখন আগন্তুকরা কী দেখতেন? তারা দেখতেন চারদিকে মমতার ছবি আর তলায় লেখা থাকত সততার প্রতীক। পায়ে রবারের চপ্পল। এখন যারা আসছেন তারা প্রশ্ন তুলছেন কী হচ্ছে? কেন হচ্ছে? চারদিকে শুধু দুর্নীতি আর দুর্নীতি। গরিবের পেটের ভাত নেই, শিশুদের খাদ্য নেই। তিনি এখন বঙ্গেশ্বরী। তার কথাই পশ্চিমবঙ্গের শেষ কথা। স্কুলের মিড-ডে মিল করোনাকাল থেকেই বন্ধ। তার পরনে যে শাড়ি থাকত। নেহাত কম দামের নয়।

হুগলি জেলার তেলেনিপাড়ার এক তাঁতি দুটি ধুতি বানাতেন। যার একটি পরতেন মমতা আর একটি পরতেন সাবেক জনপ্রিয় বাংলা সংবাদপত্রের মালিক সম্পাদক। এর এক একটির মূল্য ছিল ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। এবার আসল কথায় আসি। তিনি যখন কংগ্রেস ছেড়ে নতুন দল গড়েন তখন এক সাংবাদিক তাকে অগ্নিকন্যা বলেছিলেন। সেই অগ্নিকন্যা, সেই সততার প্রতীক বর্তমানে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। এই তথ্য পাওয়া যায় ভারতের তিনটি তদন্তকারী দলের সূত্র থেকে। যা তারা আদালতে জমা করেছে।

১. বর্তমানে তার মন্ত্রিসভার দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী জেলে আছেন। তাদের নাম পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

২. পার্থের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি। সিবিআই পার্থর বান্ধবী অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে ১৫০ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে। অর্পিতাও এখন জেলে।

৩. পঞ্চায়েতিরাজ। সব টাকাই আসে কেন্দ্র থেকে। মমতা সেই টাকার হিসাব দেননি বলে কম্পোটলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল জানিয়েছেন।

৪. কয়লা পাচারে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। যে তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি মারফত এই দুর্নীতি হয়েছে, তিনি এখন অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে গেছেন। ভারত সরকার তার নামে লুকআউট নোটিস জারি করেছে। ভারত সরকারের সঙ্গে এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়া সরকারের কথাবার্তা চলছে কীভাবে তাকে হাতে পাওয়া যায়।

৫. গরু পাচার কাণ্ডের সঙ্গে বীরভূম তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ও তার মেয়ে দিল্লির তিহার জেলে বন্দি। যেদিন অনুব্রত গ্রেফতার হন সেদিন মমতা তাকে ‘বাংলার বাঘ’ বলে আখ্যায়িত করেন। সেই ‘বাঘ’ কবে তিহার থেকে মুক্তি পাবেন কেউ জানে না।

৬. সোনা পাচার। মমতার পরিবারের একজন মহিলা রুজিরা থাইল্যান্ড থেকে তিন কেজি সোনা নিয়ে কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন এবং বিমানবন্দরে কর্তব্যরত কাস্টমস অফিসাররা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। খবর যায় কালীঘাটে মমতার কাছে। মমতা তৎক্ষণাৎ ফোন করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে। অরুণ জেটলির নির্দেশে কাস্টমস অফিসাররা সোনাসহ রুজিরাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। কয়েক মাস আগে সিবিআই অফিসাররা সাইকেল ও অন্যান্য দুর্নীতির ব্যাপারে কালীঘাটে রুজিরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যায়। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণের হস্তক্ষেপে এবারও রুজিরার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এরপর ১০০ দিনের কাজ। প্রকল্পটি শুরু হয় কংগ্রেসি আমলে। এ বাবদ যাবতীয় খরচ কেন্দ্র বহন করে আসছিল যেহেতু বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও মমতা কোনো হিসাব দাখিল করতে পারেননি তাই দিল্লি এখন টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। উত্তরবঙ্গের অন্তত তিন জেলা জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারে সমবায় ব্যাংকগুলোর দুর্নীতি নিয়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন তিন মাসের মধ্যে সবার টাকা ফেরত দিতে হবে, না হলে ব্যাংকের সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।

সম্প্রতি রেশন দুর্নীতি মামলাও সামনে এসেছে। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ইডির হাতে গ্রেফতার হন। কোর্ট তাকে ১০ দিনের হেফাজত দিয়েছে। উল্লেখ্য, এর কয়েকদিন আগে বাকিবুর রহমান নামে এক দালাল এবং মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ গ্রেফতার হন।

বাকিবুরের থেকে উদ্ধার হওয়া ৩৫টি মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের সূত্র ধরে ইডি বিপুল পরিমাণ টাকা ছাড়াও সম্পত্তির হদিস পায়। মন্ত্রী ছাড়াও তার স্ত্রী এবং মেয়েও বেনামি কোম্পানি খুলে প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বাকিবুরের সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে দুবাইয়ে দুটি ফ্ল্যাট, বেঙ্গালুরে একটি, কলকাতায় ৯টি ফ্ল্যাটের হদিস মিলেছে। এ ছাড়া তার কয়েকটি পানশালা ও প্রচুর জমির হদিস মিলেছে। জ্যোতিপ্রিয় নিজে মতুয়া সম্প্রদায়ের। এ জন্য বাংলাদেশি মতুয়াদের এ দেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার লোভ দেখিয়ে প্রচুর বেআইনি টাকা উপার্জন করেছেন।

এসব টাকা বাংলাদেশের যশোরে বিভিন্ন ব্যাংকে রক্ষিত আছে। খুব শিগগিরই এনআইএ ওই সব ব্যাংকে তদন্ত করবে বলে সূত্র মারফত জানা গেছে। মমতাকে এখন কী বলা হবে? ‘সততার প্রতীক’ নাকি ‘দুর্নীতির রানি’। এতদসত্ত্বেও মমতার রাজনৈতিক ক্ষতি-বৃদ্ধি তেমন কিছু হবে না বলেই রাজনৈতিক কারবারিদের একাংশ মনে করেন। কারণ মমতার সঙ্গে আছে আরএসএসের প্রত্যক্ষ এবং বিজেপির প্রচ্ছন্ন মদদ। মমতা খোলাখুলিভাবে বাংলাদেশের জামায়াত এবং বিএনপিকে সমর্থন যে করেন তা ফিরহাদ হাকিমের সাম্প্রতিক কথাবার্তা থেকে বোঝা যায়। সম্প্রতি বাংলাদেশে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পাঁচটি ও বিরোধী দল একটি দখল করে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অভিযোগ, ভারত থেকে প্রচুর বেআইনি ভোটার ভোট দিয়েছে। স্পষ্ট বাংলাদেশের সর্বনাশ করতে মমতা উঠেপড়ে লেগেছেন। উদাহরণ ১২ বছর ধরে তিনি তিস্তা প্রকল্প আটকে রেখেছেন।

লেখক : ভারতীয় সিনিয়র সাংবাদিক

সর্বশেষ খবর