বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

মানুষের অধিকার সম্পর্কে ইসলাম

আবদুর রশিদ

মানুষের অধিকার সম্পর্কে ইসলাম

ইসলামের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ইসলাম মানবাধিকারের সীমাকে এত প্রশস্ত করেছে যে, পুরো জীবন এর মাঝে এসে পড়ে। পিতা-মাতার হক, বন্ধু-বান্ধবের হক, শ্রমিক-মালিক এবং শাসক ও জনগণের হক, সরকারের হক, শ্রমজীবী মানুষদের হক, দুর্বল ও অসহায়দের হক, সাধারণ মানুষের হক ইত্যাদি।

গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বান্দার হক এবং আল্লাহ হক আদায় করার নামই হচ্ছে ইসলাম।

ইসলামের আরেক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ইসলাম মানুষকে অধিকার আদায়ের চেয়ে অধিকার প্রদানের বিষয়ে বেশি উৎসাহিত করেছে। ইসলাম প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে গুরুত্বের সঙ্গে অন্যের হক ও অধিকার আদায়ের অনুভূতি জাগ্রত করে। কারণ, কিয়ামতের দিন এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।

ইসলাম মানুষের মর্যাদার ওপর অসাধারণ গুরুত্বারোপ করেছে। এই বিশ্বচরাচরে সৃষ্টিকুলের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান হচ্ছে মানুষ। তাকে অন্যান্য সব সৃষ্টির তুলনায় উত্তম আঙ্গীকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এবং জগতের সমস্ত নিয়ামত ও শক্তিসমূহ মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন করে তার সেবায় নিয়োজিত করা হয়েছে। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, “তোমরা কি দেখ না যে, আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবই তোমাদের কল্যাণে নিয়ন্ত্রণাধীন রেখেছেন এবং তোমাদের প্রতি তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অনুগ্রহ প্রকাশ করেছেন”। (সূরা লোকমান-২০)

জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে মানুষে মানুষে সব বৈষম্যের বিলোপের কথা এসেছে। ইসলাম এ ধরনের বৈষম্যের বিপক্ষে। ইসলাম মানবজাতিকে জন্মগতভাবে সমানভাবে সমান মর্যাদায় অভিসিক্ত করেছে। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, “ও মানবজাতি! আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন গোত্র ও বংশে, যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পার। আর তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিক মর্যাদাবান যে অধিক মুক্তাকী”। (সূরা হুজরাত-১৩)

দুনিয়াবাসীকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন ঘটেছিল। মানব কল্যাণের মূর্ত প্রতীক ছিলেন রসুল (সা.)। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘(হে নবী)! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সব কল্যাণ দান করেছি’ (সুরা কাওসার ১)। মানব জাতির সর্বস্তরে কল্যাণ নিশ্চিত করতে ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, অর্থনৈতিক জীবনসহ মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রসুল (সা.) মহান আল্লাহর কাছ থেকে মানব জাতির জন্য নিয়ে এসেছেন পূর্ণাঙ্গ ও কল্যাণকর জীবনাদর্শ। কোরআন মানুষকে সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্য করতে শেখায়। কোরআন মানুষকে কল্যাণ ও আলোর পথ দেখায়। মানুষের অধিকার আদায়ে সত্যের পক্ষে থেকে পাপাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানায়।

আধুনিক যুগে প্রতিটি দেশ জাতি ও সমাজে মানুষের মৌলিক অধিকার তথা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসার অধিকারকে গুরুত্ব দেয়। আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে রসুল (সা.) এর ওপর অবতীর্ণ ঐশীগ্রন্থ আল কোরআনে এসব মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য এসেছে। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ। মানুষের কর্তব্য রিজিক অন্বেষণ করা। রাষ্ট্র বা সমাজপতিদের দায়িত্ব সে বিষয়ে সহযোগিতা করা।

মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় রসুল (সা.) এর কাছে নাজিলকৃত আল-কোরআনে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বিধান এসেছে। যেমন- খাদ্য : পবিত্র কোরআনে ঘোষণা হচ্ছে, ‘পৃথিবীর প্রতিটি জীবের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন।’ (সুরা হুদ ৬)। বস্ত্র : আল কোরআনের ঘোষণা : ‘হে বনি আদম, আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি সাজসজ্জার বস্তু পরহেজগারির পোশাক। এটি উত্তম।’ (সুরা আরাফ : ২৬)। বাসস্থান : মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার বাসস্থান। আল কোরআনের ঘোষণা : ‘আল্লাহ করে দিয়েছেন তোমাদের ঘরকে অবস্থানের জায়গা এবং চতুষ্পদ জন্তুর চামড়া দ্বারা করেছেন তোমাদের জন্য তাঁবুর ব্যবস্থা।’ (সুরা আন নাহল : ৮০)। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আমি কি তোমাদের জন্য জমিনকে বিছানা করিনি?’ (সুরা নাবা ৬) শিক্ষা : কোরআনুল করিমের ঘোষণা : ‘পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’ (সুরা আলাক : ১-২)। চিকিৎসা : আল কোরআনে এসেছে, ‘আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করি, যা রোগের জন্য ওষুধ ও মুমিনের জন্য রহমত’ (সুরা বনি ইসরায়েল : ৮২)। রসুল (সা.) এই পৃথিবীর মানুষের সুচিকিৎসায় উৎসাহিত করেছেন এবং উন্নত চিকিৎসার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যেমন, তিনি বলেন, ‘তোমরা জয়তুনের তেল ব্যবহার কর, কেননা এটা কল্যাণকর বৃক্ষ। রসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাসে তিন দিন সকালে মধু খাবে তার কোনো কঠিন ব্যাধি হবে না (ইবনে মাজাহ)।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর