বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

তেলাপিয়া মাছ

তেলাপিয়া মাছ

তেলাপিয়া মাছ সারা বিশ্বেই কম দামের মাছ হিসেবে পরিচিত। তবে এ মাছের চাষ প্রায় সারা বিশ্বেই হয়। জন্মক্ষেত্র আফ্রিকা এবং এশিয়াতেই এ মাছের চাষ সমাধিক প্রচলিত। তেলাপিয়ার সবচেয়ে বহুল পরিচিত প্রজাতির নাম অরিক্রমিস মোজাম্বিকাস। এ ছাড়া অন্যান্য চাষযোগ্য ও বিশেষভাবে পরিচিত প্রজাতিগুলো হলো অরিক্রমিস নাইলোটিকা, অরিক্রমিস অউরিয়াস, অরিক্রমিস রেনডালি ইত্যাদি। এর মধ্যে নাইলোটিকারীর সঙ্গে আজকাল আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। এ মাছ বেশ বড় হয়, গায়ের রং বাদামি ও কানকোতে ছোপ আছে।

তেলাপিয়া মাছ আমাদের দেশে বিদেশি মাছ হিসেবে পরিচিত। এ মাছের বিশেষত্ব এই যে, মিঠাপানির সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা নোনা পানিতেও এ মাছ চাষযোগ্য। এ মাছ প্রধানত পতঙ্গভোজী। অবশ্যই পানির প্রাণী তথা উদ্ভিদকণাও এরা খায়। আবার অবস্থার গতিকে মাংশাসী। এ মাছ প্রধানত গ্রীষ্মপ্রধান দেশে ভালো বাড়ে। মাত্র তিন মাসেই প্রজননক্ষম হয় এবং বছরে চার বা তার থেকে অধিকবার প্রজনন করে। প্রজননের ক্ষেত্রেও বিশেষত্ব এই যে নিষিক্ত ডিম চলে যায় স্ত্রী মাছের মুখে। যখন বাচ্চা নিজে খেতে পারে, তখনই মা মাছ বাচ্চাদের মুখ থেকে নির্গত করে। এর পূর্ব পর্যন্ত বাচ্চাদের খাওয়ার দায়িত্ব মা নিয়ে থাকে। একেকবারে প্রায় ১২০-৮০০ পর্যন্ত ডিম পাওয়া যায়। এ মাছ সাধারণত এককভাবে চাষোপযোগী তবে সারা বিশ্বে এ মাছ অন্য চাষযোগ্য মাছের সঙ্গে চাষ করে উৎসাহব্যঞ্জক উৎপাদন পাওয়া গেছে। এ মাছ সাধারণত ছয় মাস চাষ করে ফসল বিক্রি করে দেওয়া হয়। ছয় মাসে নাইলোটিকার মতো প্রজাতি ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত বেড়ে যায়। এ মাছ শুধু পুকুর/দিঘিতেই চাষের পক্ষে যথার্থ নয় বড় জলাশয়/ জলধারা/ লেক ইত্যাদিতে তেলাপিয়া মাছ চাষ যুক্তিযুক্ত। যদিও আজ অবধি ভারত ও বাংলাদেশ এ মাছের চাষ যুক্তিযুক্ত।

তেলাপিয়া চাষে বাধা কোথায় : পরিসংখ্যানে দেখা গেছে কিউবা, শ্রীলঙ্কা, পাপুয়া, নিউগিনি ইত্যাদি উন্নয়নশীল দেশে তেলাপিয়া চাষ করে মাছ চাষে প্রভূত উন্নতি করেছে এবং প্রাণিজাত প্রোটিনের জোগান অনেক বেড়েছে। কেননা ওইসব দেশে স্থানীয় মাছের প্রজাতির বৈচিত্র্য কম। প্রকারান্তরে বাংলাদেশে প্রায় ৪০০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ পাওয়া যায় এবং এর মধ্যে এক বিশাল অংশই উদ্ভিদ ও প্রাণীকণাভোজী আবার কার্পজাতীয় মাছ বাড়ে ভালো। তাই তেলাপিয়ার মতো দ্রুত বৃদ্ধিশীল, প্রজননক্ষম এবং প্রাণী খাদ্যভোজী মাছ আমাদের নিজস্ব বৈচিত্র্যময় মৎস্য সম্পদকে ধ্বংসের পথে নিতে পারে, সে আশঙ্কাতেই এ মাছকে তেমনভাবে স্বাগত জানানো হয়নি এবং আজও বিবাদের কেন্দ্রবিন্দু।

বর্তমান পরিস্থিতি : সরকারিভাবে স্বাগত জানানো না হলেও তেলাপিয়ার বিভিন্ন প্রাজতি ১৯৭৫ সালের পর থেকেই এ দেশের জলাশয়, পুকুর এবং বিশেষত ময়লা পানিতে চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া জৈব রসায়নের হাত ধরে উন্নত প্রজাতির তেলাপিয়াও চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে রেড তেলাপিয়া, সোনালি তেলাপিয়া, বন্ধ্যা তেলাপিয়া এবং সুপার পুরুষ তেলাপিয়া পরিচিত। এদের বৃদ্ধিও সাধারণ তেলাপিয়া থেকে অধিক। রেড তেলাপিয়া কেমন করে এলো? বিভিন্ন প্রজাতির তেলাপিয়া ক্রসব্রিড করে উন্নত প্রজাতির তেলাপিয়া প্রস্তুত করা হয়। এর মধ্যে রেড তেলাপিয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শরীরের রং লালচে। তাইওয়ানে স্ত্রী মোজাম্বিকার (লালচে হলদে) সঙ্গে স্বাভাবিক বর্ণের পুরুষ নাইলোটিকার ক্রসব্রিডিং এ পাওয়া গেছে ঋ২ গোত্রের রেড তেলাপিয়া। উৎপাদনের দিক দিয়ে এ রেড তেলাপিয়া অনেক উপরে স্থান করে নিয়েছে। দেখা গেছে নিবিড় চাষে উন্নত দেশগুলোতে ছয় মাসে প্রতি হেক্টরে ৬০০-৭০০ গ্রাম হচ্ছে। আবার এক বছরে প্রতি হেক্টরে ৬০০ মে. টন উৎপাদন পরিলক্ষিত হয়েছে যেখানে প্রতিটি মাছ এক কেজি পর্যন্ত হচ্ছে।

আফতাব চৌধুরী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর