শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব

যুবায়ের আহমাদ

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব

ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা অপরিহার্য। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম ও কবিরা গুনাহ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা, আত্মীয়ের হক আদায়ের নির্দেশ প্রদান করেছেন একাধিক জায়গায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা সবার সঙ্গে ন্যায় ও সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিচ্ছেন এবং নির্দেশ দিচ্ছেন আত্মীয়স্বজনের হক আদায়ের।’ সুরা নাহল : ৯০। অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক এবং তোমরা সতর্ক থাক আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ওপর তীক্ষè দৃষ্টি রাখবেন’। সুরা নিসা : ১। এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা এবং ছিন্ন না করার ব্যাপারে তাঁকে ভয় করার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকে ইসলাম এতই গুরুত্ব দিয়েছে যে, একে ইমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দিয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।’ সহিহ বুখারি।

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার পরিণাম ভয়াবহ। যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করেন, আল্লাহতায়ালাও ওই ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলছেন, আমিই রহমান (দয়ালু), আমার নাম (রহমান) থেকেই ‘রাহিম’ (আত্মীয়তার বন্ধন)-এর নাম নির্গত করেছি। সুতরাং যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে আমিও তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখব এবং যে তা ছিন্ন করবে, আমি তাকে আমার থেকে ছিন্ন করব। সুনান আবু দাউদ।

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। সহিহ বুখারি। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না, তার ওপর আল্লাহর লানত, তার ঠিকানা জাহান্নাম। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণœ রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের জন্য লানত এবং তাদের জন্য মন্দ আবাস। সুরা রা’দ : ২৫। ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, কোনো আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন করলে তার সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিদানকারী আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী নয়। বরং আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী তো ওই ব্যক্তি, যিনি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরও তা বজায় রাখেন। সহিহ বুখারি। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখলে দুনিয়া ও আখেরাতে মিলবে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে পুরস্কার। দুনিয়ায় সমৃদ্ধি অর্জনের একটি মাধ্যমও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারীর রিজিক ও হায়াতে বরকত দেওয়া হয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার রিজিক প্রশস্ত ও আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে। সহিহ বুখারি। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারীর জন্য এর চেয়ে বড় সুসংবাদ আর কী হতে পারে যে তাকে জান্নাতবাসী করা হবে! আবু আইয়ুব (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে অপর কোনো কিছুকে শরিক করবে না। সালাত ও জাকাত আদায় করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখবে। সহিহ বুখারি।

 

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ ও পরিচালক বাইতুল হিকমাহ একাডেমি, গাজীপুর

সর্বশেষ খবর