রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জনৈক সাহাবির জিজ্ঞাসা

আল্লামা মাহ্মূদুল হাসান

একদা এক সাহাবি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সবিনয়ে আরজ করলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! আমার তো গোনাহের কথা শুনতে ভালো লাগে, গোনাহের কাজ করলে মনে আনন্দ অনুভূত হয়। কিন্তু নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের কথা ভালো লাগে না। এর আসল কারণ কী? সাহাবির প্রশ্নের জবাবে প্রিয়নবী (সা.) বললেন, এটা তো অন্তর কলুষিত হওয়ার লক্ষণ। কারণ তোমার হাত-পা ও চোখ-কান ইত্যাদি প্রকৃতপক্ষে এসব কাজের প্রতি আকৃষ্ট কিংবা ধাবিত হওয়ার ক্ষমতা রাখে না। কেননা এগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, বরং প্রত্যেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গই হচ্ছে অন্তরের গোলাম। তাই এগুলো অন্তরের অধীন হিসেবে অন্তরের হুকুম অনুযায়ী কাজ করে। অন্তর যা কিছু পছন্দ করে তা-ই বলতে, করতে ও দেখতে ভালো লাগে। অন্তর যা করতে হুকুম করে হাত তা-ই করতে উদ্যত হয়। অন্তর যেদিকে যেতে আগ্রহী, পা সেদিকেই অগ্রসর হয়। অন্তর যা শুনতে পছন্দ করে, কান তা-ই শুনতে মশগুল হয়। অন্তর যা দেখতে নির্দেশ করে, চোখ সেদিকেই তাকায়। অতএব তোমার অন্তর নষ্ট হয়ে গেছে। শরীরে রোগব্যধি দেখা দিলে যেরূপ মুখের রুচি নষ্ট হয়ে যায় এবং মিষ্টিদ্রব্যও তিক্ত মনে হয়, তেমনি তোমার অন্তর নষ্ট হয়ে গেছে, তাই সৎকাজ করতে তোমার ভালো লাগে না। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর এ বাণী শুনে ওই সাহাবি অত্যন্ত অনুতপ্ত হলেন। তিনি তাঁকে সবিনয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা, তাহলে আমার এ কলুষিত অন্তর কলুষমুক্ত করার পদ্ধতি কী? সাহাবির প্রশ্নের জবাবে রসুল (সা.) বললেন, ‘লোহায় যেরূপ মরিচা ধরে, তেমনি মানুষের অন্তরেও মরিচা ধরে।’ উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ (সা.) অন্তরের এ মরিচা দূর করার উপায় কী? জবাবে প্রিয়নবী (সা.) বললেন, অন্তরের এ মরিচা দূর করার উপায় হচ্ছে, বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা, আল্লাহর জিকির করা এবং মৃত্যু আসার আগেই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। জেনে রাখো, কুসংশ্রবের চেয়ে একাকী থাকা উত্তম আর সুসংশ্রব একাকিত্বের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ইমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সংশ্রব গ্রহণ করো। রসুল (সা.) আরও বলেন, তোমরা প্রত্যেক আলেমের কাছে যেও না। তবে হ্যাঁ ওইসব আলেমের কাছে যেও, যাদের সংশ্রব তোমাকে সন্দেহ থেকে ইয়াকিনের দিকে, রিয়া থেকে ইখলাসের দিকে, অহংকার থেকে বিনয়ের দিকে, শত্রুতা থেকে বন্ধুত্বের দিকে এবং দুনিয়ামুখিতা থেকে দুনিয়া বিরাগের দিকে ধাবিত করে। আজকাল আমরা আল্লাহপ্রদত্ত নেয়ামতের অপব্যবহার করছি, অবমূল্যায়ন করছি। অথচ আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহ করতে আমাদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, বরং আমরা একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করতে পারি, সেজন্য আল্লাহ আমাদের এতসব নেয়ামত দান করেছেন।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর