বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাষ্ট্র আছে-অধিকার নেই

আফতাব চৌধুরী

রাষ্ট্র আছে, অধিকার নেই। সীমানা আছে, স্বাধীনতা নেই। বেকারত্ব আছে, চাকরি নেই, শখ আছে, সাহস নেই। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়-  সবই আছে অথচ শিক্ষার সুযোগ নেই। মাথার ওপর খোলা আকাশ, ওড়ার ডানা নেই।

২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই আফগান মহিলাদের জীবনকে বয়ে বেড়ানোর ক্ষমতাটুকুই শুধু আছে। মন খুলে দুটো কথা বলা দূরের কথা, ন্যূনতম নাগরিক অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছে দেশের ফতোয়াবাজ তালেবান সরকার।

দিনে দিনে অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে জন্মসূত্রে পাওয়া নিজ পৈতৃক ভূখ-ে তারা ‘বানভাসি’। বাবা-ভাইয়ের এ দেশে তারা অসহায় পরবাসী। আফগানিস্তান তাদের নয়। এ দেশ তাদের নয়। শুধু পুরুষের। পালিয়ে অন্য দেশে যাবেন- সেই পথও বন্ধ। প্রতি সীমান্তে কড়া পাহারা। কট্টর তালেবান যুগে তাদের কোনো দেশ নেই। সমবয়সী পুরুষ আর মহিলা এক নয়।

২০২৩ সালের শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত আফগান মহিলা অধিকারকর্মী মাহবাবা সিরাজ জানান, ‘নারী স্বাধীনতা বলে আর কিছু নেই।’

ক্ষমতা দখলের পরপরই ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। ২০২২ সালে ডিসেম্বরে মহিলাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বন্ধ করে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়। জাতিসংঘসহ এনজিওতে কাজ করাও নিষিদ্ধ করা হয়। জিম, পার্ক, সিনেমা হল, মেলাসহ বেশির ভাগ কর্মসংস্থানের জায়গা এখন মহিলাদের নাগালের বাইরে। কেড়ে নেওয়া হয় ঘরের বাইরে যাওয়ার অধিকার, মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়ার অধিকার।

বলা হয়, পুুরুষ সঙ্গী ছাড়া যাওয়া যাবে না ঘরের বাইরে। এ বছরে আরও নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় অধিকাংশ মেয়ের আয়ের জায়গা বিউটি সেলুন। ফলে বেকার হয়ে পড়েন প্রায় ৬০ হাজার মহিলা। মেয়েদের জোরপূর্বক বিয়েও করা হয়। মহিলা অধিকার নাশ করতে যেন মত্ত হয়ে ওঠে তালেবানরা। জাহরার মতো যুবতী মহিলাদের জন্য এমন আকস্মিক পরিবর্তন যেন বিধ্বংসী জীবনের ইঙ্গিত দেয়। তালেবানের ক্রমবর্ধমান কঠোর শাসনে নৃশংস হয়ে উঠেছে মহিলাদের জীবন।

আয়েশা নামের একজন মহিলা আইন নিয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। জাতিসংঘের ভাষ্য মতে- আয়েশা জানান, এক সময় তিনি মুক্ত আকাশের নিচে হাঁটতেন। কিন্তু এখন ভয় তার জীবনকে গ্রাস করেছে। বন্ধ হয়ে গেছে তার পা বাড়ানোর পথ।

মহিলা অধিকারকর্মী লায়লা বাসিম বলেন, আফগানিস্তানের মহিলারা বিচ্ছিন্নতা ও আর্থিক স্বাধীনতার অভাবের সম্মুুখীন। মহিলাদের কাজের নিষেধাজ্ঞার আগে অসংখ্য মহিলা বিভিন্ন শাখায় কাজ করতেন। পরিবারের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বজায় রাখতে সহায়তা করতেন। কিন্তু বর্তমানে মহিলারা কর্মসংস্থা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় দেশের মধ্যে দারিদ্র্য বেড়ে চলেছে। এটি শুধু স্বাতন্ত্র্য পরিবারকে প্রভাবিত করছে না, দেশের অর্থনীতিতেও আঘাত করছে। এদিকে বিদেশি সহায়তা হ্রাস পাওয়ায় ক্ষুধা আর অসুস্থতায় ভুগছে আফগানিস্তান। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বললেন, পরিস্থিতি আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও খারাপ হবে। জাতিসংঘের সমীক্ষায় দেখা যায়- প্রায় ৮ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন। সমীক্ষায় বলা হয়- বিধিনিষেধ ও অর্থনৈতিক কষ্টের কারণে পারিবারিক হিংসা বৃদ্ধি পেয়েছে।

পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে সতর্ক করছেন সক্রিয় কর্মীরাও। এদিকে মঙ্গলবার তালেবান শাসনের দুই বছর পূর্তিতে তালেবানের উপমুখপাত্র বিলাল কিরিমি জানিয়েছেন, ‘দিনটি আফগানদের জন্য সম্মানের ও গর্বের।’ অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলো ব্যাপকভাবে মহিলাদের প্রতি তালেবানদের আচরণের নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলো সপ্তাহে তালেবান গোষ্ঠীকে সংস্কার প্রবর্তন ও মহিলাদের স্বাধীনতাকে সম্মান করার আহ্বান জানায়।

♦ লেখক : প্রাবন্ধিক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর