শিরোনাম
শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

সব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি

আজ আমাদের নতুন প্রজন্ম তথা যুবশ্রেণি ধ্বংসের পথে। এর পেছনে কারণ হলো- নর-নারীর অবাধ মেলামেশা, টিভি-ভিসিআর, সিনেমা, নাচ-গানসহ নানা ধরনের অশ্লীলতা। আর এসব কিছুর মূল ফরজ বিধান উপেক্ষাকরণ। পর্দা পালনের মধ্যে প্রভূত কল্যাণ নিহিত রয়েছে বলেই আল্লাহপাক তার হুকুম দিয়েছেন। এ হুকুমকে মেনে চললেই সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তির হাওয়া বইতে পারে। এ ছাড়া অন্য রাস্তা খুঁজলে কোনো লাভ হবে না। মুসলমানরা যদি নবীর আদর্শ তাদের বিশ্বাস ও কর্মে গ্রহণ করত তাহলে তাদের এ মহাদুর্গতি হতো না। ইসলাম বলে, প্রত্যেক নর-নারীকে দীনি শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে এবং ইলম অনুপাতে আমল করতে হবে। একজন দীনদার নারীর প্রধান আলামত হলো- সে শরয়ি পর্দা যথাযথভাবে মেনে চলে। সে বিশ্বাস করে যে, ইসলামের এ বিধান নারী জাতির নিরাপত্তার একমাত্র গ্যারান্টি। আমাদের সমাজের একটি শ্রেণি না বুঝে পর্দাকে নারীর অধিকার খর্ব করা হচ্ছে বলে স্লোগান তুলছে। অথচ ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা নারী জাতিকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ সম্মানের পাত্র বানিয়েছে। যে নারীরা ইসলামের এ বিধান মানে এবং মানার চেষ্টা করে তারা দুনিয়াতে কেমন শান্তিতে আছে তা খোঁজ নিলেই এ দাবির যথার্থতা বুঝে আসবে।

সব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি : সমাজ ও রাষ্ট্রের সার্বিক শান্তির জন্য শুধু দু-একটি গুনাহ বর্জন করলে হবে না, বরং সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চিন্তা ও চেষ্টা করতে হবে। মিথ্যা বলা, গিবত ও পরনিন্দা করা, কুটনামি করা ইত্যাদি যে কবিরা গুনাহ তা আমরা প্রায় সবাই জানি। জানার পরও এগুলো থেকে বেঁচে থাকার চিন্তা ও চেষ্টা আমাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয় না। কারও কাছ থেকে কোনো কথা শুনেই আমরা বিশ্বাস করে ফেলি। অতঃপর নিজেও সে কথা অন্যের কাছে বর্ণনা করে থাকি। অথচ আল্লাহপাক কোরআনে সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ করেছেন যে, হে মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে তাহলে তা (ভালোভাবে) যাচাই করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত হয়ে পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।

তদ্রƒপ হাদিসেপাকেও বলা হয়েছে- যে ব্যক্তি কোনো মুসলমান ভাইয়ের দোষ গোপন করবে আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তির দোষও গোপন করবেন।

গিবত কেন নিষিদ্ধ : কোনো ব্যক্তির দোষ যদি রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতির কারণ না হয়ে শুধু নিজের জন্য ক্ষতিকর হয় তাহলে তা অন্যের কাছে বলা ছাড়া সংশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে। কেবল ওই ব্যক্তির কাছে বলতে হবে যার মাধ্যমে সংশোধন সম্ভব হয়। এমন ব্যক্তির কাছে কিছুতেই বলা যাবে না যে সংশোধন করতে তো সক্ষম হবেই না বরং সেই দোষের কথা তার মাধ্যমে সমাজে আরও প্রচারিত হবে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সমাজে গুনাহর প্রকাশ ও আলোচনা যত বৃদ্ধি পাবে ততই গুনাহ বৃদ্ধি পাবে। কানকথা, অন্যের অগোচরে সমালোচনা ইত্যাদি ইসলামে নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হলো এর দ্বারা সমাজে ফেতনা-ফ্যাসাদ বৃদ্ধি পায়। একবার আমি দাওয়াতুল হকের এক ইজতেমায় কুমিল্লা গিয়েছিলাম। সেখানে কুমিল্লা জেলার বড় বড় আলেম-ওলামা উপস্থিত হয়েছিলেন। আমি বসা ছিলাম, হঠাৎ একজন এসে আমার কানে কানে কয়েকজন আলেমের দোষ বর্ণনা করল যে, হুজুর! অমুকে আপনার ব্যাপারে এই বলে, আবার অমুকে এই বলে। আমি হানাফি মাজহাবের অনুসারী, বাকি ছয় ভাগের তিন ভাগ শাফেয়ি, দুই ভাগ মালেকি ও এক ভাগ হাম্বলি মাজহাবের অনুসারী।

ইমাম মানার অর্থ : আলহামদুলিল্লাহ! পৃথিবীর কারি, হাফেজ, ফকিহ ও মুহাদ্দিসদের ১২ ভাগের ৯ ভাগই হানাফি মাজহাবের। অনেকে বলে, নবী রেখে আবু হানিফাকে মানতে যাব কেন? যারা এরকম কথা বলে তাদের কথা বিভ্রান্তিকর। আমরা তো তাঁকে মাধ্যম মনে করি। তাঁর মাধ্যমেই নবীর কথা মানি। যেমন আপনারা আমার ওয়াজ শুনছেন, মাসয়ালা জানতে চাচ্ছেন, আমি আপনাদের মাসয়ালা বলছি। এখানে আপনারা কি আমাকে মানছেন, না আমার মাধ্যমে নবীকে মানছেন? অবশ্যই নবীকে মানছেন। নবীর বাতানো তরিকায় আপনাদের চলতে বলি বলেই তো আপনারা আমাকে সম্মান করেন। ইমাম মানার ক্ষেত্রেও এ কথা।

ইমাম আবু হানিফার মর্যাদা : আমাদের দেশে মুষ্টিমেয় কিছু লোক আছে যারা বলে, ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-কে মানা শিরক। বস্তুত এরা চরম মূর্খতার জালে আবদ্ধ হয়ে আছে। চার ইমামের শ্রেষ্ঠ ইমাম হলেন হজরত আবু হানিফা (রহ.)। তিনি তায়েবি ছিলেন, সাহাবির সান্নিধ্য লাভ করেছেন। কমপক্ষে ১৭ জন সাহাবি হতে হাদিস বর্ণনা করেছেন। যারা বলে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) মোট ১৭টি হাদিস জানতেন তাদের কথা সম্পূর্ণ গলদ। ইতিহাস অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, তাঁর ৫ লাখ হাদিস মুখস্থ ছিল। ইমাম বুখারির ৩ লাখ হাদিস মুখস্থ ছিল। ইমাম আবু হানিফার ছেলে হাম্মাদ (রহ.) বলছেন, আমার আব্বার ৫ লাখ হাদিস মুখস্থ ছিল। আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমানে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর রেওয়াতকৃত হাদিসের কিতাব বাজারে এসে গেছে। এখন আর বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীরা কিছু বলে না। বলা হয় যে, তিনি জীবনে ৪০ হাজার বার কোরআন শরিফ খতম করেছিলেন। তিনি যে স্থানে দাফন হয়েছেন সে স্থানেই ৭ হাজার বার কোরআন খতম করেছিলেন। অথচ আমাদের ৬০-৭০ বছরের জীবনে হিসাব করলে দেখা যাবে ৫০০ বারও কোরআন খতম করা হয়নি। একজন মুসলমানের জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে মাসে একবার হলেও কোরআন খতম করা। মাদরাসার গয়রে হাফেজ ছাত্রদের জন্য মাসে দুবার, হাফেজ ছাত্রদের জন্য কমপক্ষে পাঁচবার খতম দেওয়া প্রয়োজন।

সব শেষে এ মহান ইমামের একটি দোয়া আপনাদের সামনে বর্ণনা করে বয়ান শেষ করব। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) নিচের দোয়াটি এক দিন সারা রাত পড়েছিলেন। দোয়াটি হলো- হে আল্লাহ, হাশরের ময়দানে আমি আপনার দয়াপ্রার্থী। আপনার আজাব থেকে আমাকে মুক্ত রাখুন! হে আল্লাহ! সাক্ষ্য গ্রহণের দিন আসার আগে তুমি আমার গুনাহগুলো মাফ করে দাও। আল্লাহপাক আমাদের সবার মধ্যে দীন বোঝার আগ্রহ দান করুন!

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ

সর্বশেষ খবর