বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদার সিংহভাগই আমদানিনির্ভর। এ পরনির্ভরতার ধকল হাড়ে হাড়ে অনুভব হচ্ছে গত দুই বছর ধরে। বিদেশ থেকে মাত্রাতিরিক্ত দামে তেল, গ্যাস, কয়লা কিনতে গিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারে টান পড়ছে। জ্বালানি চাহিদার এক বড় অংশ যাতে দেশেই সংগ্রহ করা যায় সে উদ্দেশ্যে কাজ করছে সরকার। দেশের সমুদ্রসীমায় তেল গ্যাস অনুসন্ধানে বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। তবে এটি বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই দেশের স্থলভাগে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া বাড়ানো হয়েছে। পরিত্যক্ত কূপ থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এতে সাফল্যও অর্জিত হচ্ছে। সিলেটের একটি পরিত্যক্ত কূপ হতে গত বুধবার থেকে বাণিজ্যিকভিত্তিক গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়েছে। বর্তমান বাজার বিবেচনায় ওই কূপে উত্তোলনযোগ্য ৫৩ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মূল্য ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর এলএনজির বাজার বিবেচনায় ওই গ্যাসের মূল্য ৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। দেশের অভ্যন্তরে জ্বালানি অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে এসজিএফএলের মালিকানাধীন গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে ১৪টি কূপ খনন ও পুনর্খননের কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে তিনটি কূপ খননের কাজ শেষ করে গত বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন শুরু হয়। সর্বশেষ কৈলাসটিলার ২ নম্বর কূপের নতুন স্তর থেকে বুধবার গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। উৎপাদনে যাওয়া গ্যাসকূপ চারটি থেকে প্রায় ৮৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রতিদিন জাতীয় সঞ্চালন লাইনে সরবরাহ হচ্ছে। জ্বালানি সংকট নিরসনে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে সরকার দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রে ৪৬টি কূপ অনুসন্ধান, খনন ও পুনর্খননের উদ্যোগ নেয়। ২০২৫ সালের মধ্যে কূপগুলোর খননকাজ শেষ হওয়ার কথা। অনুসন্ধান ও খননকাজ শেষে কূপগুলো থেকে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জ্বালানি সংকট নিরসনে স্থলভাগে সাফল্য অর্জনের সম্ভাবনা কম। তাই সমুদ্রসীমার দিকে বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে এবং সেটিই উত্তম।