রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

খাদ্যে বিষ

জনসচেতনতার বিকল্প নেই

জীবন বাঁচানোর জন্য মানুষ খাদ্য খায়। কিন্তু সে খাদ্যে যদি বিষ থাকে তবে তা যে জীবনকে অনিরাপদ করে তা সহজেই বোধগম্য। এমনিতেই বাংলাদেশ নকল-ভেজালের দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে পড়েছে যুগ যুগ ধরে। মানবসৃষ্ট খাবারের পাশাপাশি প্রাকৃতিক কারণেও প্রতিদিন দেহে ঢুকছে বিষযুক্ত খাদ্য। চিকিৎসকদের অভিমত, ভেজালযুক্ত খাবার গ্রহণের কারণে জটিল সব রোগবালাই নিয়ে আগের তুলনায় তাদের কাছে অনেক বেশি রোগী আসছেন। এর মধ্যে ক্যান্সার, হার্ট, লিভার ও কিডনি রোগে আক্রান্তরাও রয়েছেন। যারা রয়েছেন মৃত্যুঝুঁকিতে। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে গর্ভবতী মায়েদের শিশুরাও। বিভিন্ন গবেষণা ও জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বাজারে বিক্রি হওয়া চাল, আটা, ডিম, মধু, সবজি, মাছ, মাংস, মসলা এবং খাবার পানি সবকিছুতেই আছে ভেজাল বা রাসায়নিক বিষ। আর এ বিষই ‘স্লো পয়জনিং’ হয়ে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ২০২২ সালের আগস্টে ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টার্স’ জার্নালে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। এ গবেষক দল জামালপুরের ইসলামপুর ও মেলান্দহ উপজেলা থেকে মাটির ৬০টি ও বেগুনের ৮০টি নমুনা সংগ্রহ করে। এতে তারা আটটি ধাতুর পরিমাণ পর্যালোচনা করে দেখেন তাতে সিসা, নিকেল ও ক্যাডমিয়াম ধাতু নিরাপদ সীমার চেয়ে কয়েক শ গুণ বেশি অজৈব সার, কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার এবং সেচের পানিতে নানা ধরনের ক্ষতিকর ধাতু দ্রবীভূত হওয়ায় ওই এলাকার উৎপাদিত বেগুনে ভারী ধাতুর উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ধরনের সবজি ক্যান্সারের ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। খামারে পশুপালন ও হ্যাচারিতে মাছ চাষের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগে মানবদেহে তা প্রবেশ করছে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশনে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হলে তা কাজে লাগছে না। রাজধানীতে মাছ ও মুরগিতে ৮০ থেকে ৮৬ শতাংশ বিভিন্ন মাত্রার ক্রোমিয়াম ক্যাডমিয়াম ও সিসার উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকরা। মুরগি, ডিম ও চালে পাওয়া গেছে প্রাণঘাতী আর্সেনিক। মিষ্টি জাতীয় খাবারে বিষাক্ত রং সোডা, স্যাকারিন ও মোমের ব্যবহার অহরহ ঘটছে। এমন কোনো খাদ্য নেই যেখানে ভেজালের অস্তিত্ব নেই। এ বিষয়ে জনসচেতনতার বিকল্প নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর