শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হে মুসলমান! জাহান্নামের জীবন থেকে ফিরে এসো

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

হে মুসলমান! জাহান্নামের জীবন থেকে ফিরে এসো

জলিলে কদর সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের জাহান্নাম থেকে বেঁচে থাকার ব্যাপারে অনবরত বলে যাচ্ছি। তোমরা আমার কথা শুনছ না। এক পর্যায়ে আমি তোমাদের কোমর জড়িয়ে ধরেছি, যেন জাহান্নামের গর্তে তোমরা লাফ না দাও। হায় আফসোস! তোমরা আমার হাত ছাড়িয়ে এবং আমাকে অবজ্ঞা করেই জাহান্নামে ঢুকে পড়ছ।’ (সহিহ মুসলিম, কিতাবুল ফাজায়েল, হাদিস নম্বর ৫৭৫৮।)

প্রথম জীবনে যেদিন হাদিসটি পড়েছি খুব অবাক হয়েছি। স্বয়ং নবীজি (সা.) মানুষকে জাহান্নাম থেকে বাঁচার কথা বলছেন, কিন্তু মানুষ সে কথা শুনছে না! এও কি সম্ভব? গা শিউরে ওঠার মতো কথা হলো, নবীজি (সা.) মানুষের কোমর জড়িয়ে ধরে জাহান্নাম থেকে ফেরানোর শেষ চেষ্টা করছেন। তবুও মানুষ নবীজিকে অবজ্ঞা করে, নবীজি থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে জাহান্নামে পড়ে যাচ্ছে। হাদিসটি নিয়ে মুহাদ্দিসগণ অনেক রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন। মাদরাসা-ওয়াজের মাঠে সেসব ব্যাখ্যা নিয়ে মুখরোচক আলোচনা হয়ে থাকে। আরবি ব্যাকরণের জটিল তত্ত্ব শুনে শ্রোতারা চমকে যান। কিন্তু আমি চমকেছি ভিন্ন কারণে। বিষয়টা তাহলে খুলেই বলি।

একসময় ভাবতাম নবীজির (সা.) পাজা করে কোমর ধরে কাউকে জাহান্নামে যেতে নিষেধ করছেন আর সে মানুষটি নবীজির হাত ছাড়িয়ে জাহান্নামের দিকে ছুটে যাচ্ছে এটা কীভাবে সম্ভব। বিষয়টা বুঝতে পেরেছি আজকের মুসলমানদের জীবনাচারের দিকে তাকিয়ে। কেন যেন মনে হচ্ছে নবীজি (সা.) এ হাদিসটি বলেছেন আমাদের উদ্দেশ্য করেই। আজ আমাদের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে আমাদের ওঠাবসা, চলাফেরা, লেনদেনসহ জীবনের প্রতিটি জায়গায় আমরা জান্নাতি পথ ছেড়ে জাহান্নামি পথে এগিয়ে যাচ্ছি। রসুল (সা.) বলেছেন, সুদ-ঘুষ-অন্যায়-দুর্নীতি থেকে দূরে থাকো। বারবার বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়।’ আরও বলেছেন, ‘সুদ দাতা-গ্রহীতা-সাক্ষী-লেখক সবাই জাহান্নামি।’ এ কথাও বলেছেন, ‘দেশ ও জনগণের সম্পদ চুরি করা নেতারা কেয়ামতের দিন জালেম ও চোরের কাতারে দাঁড়াবে।’ এমনিভাবে অনেক জাহান্নামি কাজ থেকে বেঁচে থাকার জন্য নবীজি (সা.) আমাদের সতর্ক করেছেন। কিন্তু আমরা সেসব সতর্কবাণী এমনভাবে ছুড়ে ফেলেছি যা কোনো ইহুদি-খ্রিস্টানও তার নবীদের সঙ্গে করতে সাহস পায়নি।

বর্তমানে দেশে চরম অর্থনৈতিক সংকট চলছে। সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন মধ্যবিত্তরা। না খেয়ে দিন পার করছেন লাখো বনি আদম। এমন সময় আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা যে অবৈধ মুনাফার প্রতিযোগিতায় নেমেছে তা দেখে মনে হচ্ছে সত্যিই নবীজিকে অবজ্ঞা করে, নবীজির হাত নিজের কোমর থেকে ছাড়িয়ে নিয়েই আমরা জাহান্নামের দিকে ছুটছি। আফসোস! জাতীয় ভোক্তা অধিদফতরের ডিজি এক অভিযানে গিয়ে অবৈধ মুনাফাখোরকে ধরেছেন। মুনাফাখোরের গায়ে সফেদ পাঞ্জাবি। মাথায় বিশেষ টুপি। মুখভর্তি পাকা দাড়ি। বয়স ষাট-সত্তর তো হবেই। এমন নূরানি চেহারার মানুষটিই নাকি মুনাফাখোর। তার অতি মুনাফার লোভে গরিবের শেষ সম্বল আলুও চলে গেছে ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। ভিডিওতে দেখেছি, ভোক্তার ডিজি বলছেন আপনি এমন পরহেজগার মানুষ হওয়া সত্ত্বেও কেন অবৈধ মজুদদারি করছেন? জবাবে তিনি বললেন, আমি আলু কোল্ড স্টোরেজে রেখেছি, এখন আল্লাহর রাস্তায় সময় দিতে চলে যাব! হায়! আমরা আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে আমাদের মতোই বোকা ভাবছি। নয়তো কোনো মানুষের পক্ষে কি সম্ভব একই সঙ্গে মুসলমান ও দুর্নীতিবাজ হওয়া? কোনো মুসলমান কি পারে মহাজনি সুদি কারবারের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে? আমার বুঝে আসে না একজন মানুষ নিজেকে মুসলমান দাবি করে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, বছরে বছরে হজ করে আবার অবৈধ মজুতদারি কারবারি করে যাচ্ছে কীভাবে? একজন মানুষ মসজিদ বানাচ্ছে, মাহফিলের সভাপতি হচ্ছে, এতিমখানা খুলছে আবার সে মানুষটিই অন্যের জমি জোর করে দখল করে বসে আছে কীভাবে। এসব হিসাব তো আসলে মেলে না। সময় এসেছে এমন ভণ্ডামি ও মুনাফেকি জীবন থকে বেরিয়ে আসার। আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমি কি জান্নাতি জিন্দেগি যাপন করব নাকি জাহান্নামি জিন্দেগি যাপন করব।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

পীরসাহেব, আউলিয়ানগর

সর্বশেষ খবর